স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির কক্ষে বিক্ষোভকারী।
‘যত কাণ্ড ক্যাপিটলে’ বা ‘ক্যাপিটলে কেলেঙ্কারি’! হন্ডুরাস থেকে সাহারায় চষে বেড়ানো জটায়ু পর্যন্ত এমন শিরোনাম ভাবার সাহস পাননি। তবে কে না জানে, সত্য আকছার কল্পনাকে হার মানায়।
বুধবার আমেরিকার সর্বোচ্চ ক্ষমতা আসন ক্যাপিটলের ঘটনা ইতিহাসের পণ্ডিতেরা নানা ভাবে দেখছেন। নেটমারফত এই বিচিত্র ‘লঙ্কাকাণ্ড’ দেখে সারা দুনিয়া তথা আমবাঙালিও কিন্তু স্রেফ হতভম্ব, আমেরিকায় এমন হয়!
এ দেশের সংসদ-ভবনে জঙ্গি হানার মতো ঘটনা ঘটলেও তা কোনও সাধারণ প্রতিবাদীদের কাণ্ড ছিল না। তবে ১৯৬৬-তে দেশে গোহত্যা বন্ধের দাবিতে সংসদে নাগা সাধুদের একটা হামলা হয়েছিল! সে-বার পুলিশের গুলিতে সাত জন মারা গিয়েছিলেন, প্রাণ গিয়েছিল এক জন পুলিশেরও।
তবে আমেরিকায় ক্যাপিটলের সুউচ্চ অভিজাত দেওয়াল বেয়ে ওঠার মতো দৃশ্য দেখা যায়নি। প্রাচীর লঙ্ঘনে উদ্যত ট্রাম্পসমর্থকেরা ‘স্পাইডারম্যান’ না ‘বানরসেনা’, নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার রসিকতাও অন্যায় বলা যাবে না। আমেরিকার পতাকা, ট্রাম্পের নাম লেখা নিশানের সঙ্গে ভারতের তেরঙা ঝান্ডাও যে দেখা গিয়েছে! ‘‘হাউডি মোদী-র কেউ ঢোকেননি তো?,’’— প্রশ্ন ইতিহাসের শিক্ষক সুগত বসুর। তবে তিনিও ব্যথিত, কোভিডে বিশ্বের ২০ শতাংশ মৃত্যুর লজ্জার মুকুট পরার পরে এমন ধাক্কা, ফের দেশটার অগৌরব ডেকে আনল।
কয়েক মাস আগে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের সময়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন রক্ষায় আমেরিকার পুলিশ-প্রশাসন সামরিকসজ্জায় পথে নেমেছিল। ‘‘শ্বেতাঙ্গ ট্রাম্প সমর্থকদের প্রতি তুলনায় নরম মনোভাবটাই প্রকট হয়েছে!’’ — বলছেন সুগত। শেষমেশ পরিস্থিতি আয়ত্তে এলেও আমেরিকায় সব অশান্তির যবনিকাপাত হল, তাও কি বলা যাচ্ছে? ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর ইতিহাস-শিক্ষক দীপেশ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘ভোটে হার অস্বীকার করে ট্রাম্পের নিরন্তর মিথ্যের উসকানি এর জন্য দায়ী।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গ সমাজের মধ্যবিত্ত অংশ অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া, বঞ্চিত ‘আন্ডারক্লাস’ হয়ে উঠেছে। এঁরাই ট্রাম্পের সমর্থনের মূল ভিত্তি। হিসপ্যানিক বা পেশাগত ক্ষেত্রে সফল ভারতীয়দের প্রতিও তাঁদের আক্রোশ কম নয়। দীপেশের মতে, ‘‘আমেরিকায় সুস্থিতি ফেরাতে ভেতরের বৈষম্যটা কমাতে হবে। কোভিড-পরবর্তী জমানাতেও সবার জন্য একটা ন্যূনতম আয়ের পথ তৈরি করা দরকার।’’
আগ্নেয়গিরির মতো ফুটতে থাকা আমেরিকায় তাণ্ডব, বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা কিন্তু অনেক দিনই চেপে বসছিল। লকডাউন-পর্বের লম্বা সময় হার্ভার্ডে পড়ানোর সূত্রে সুগতও আমেরিকায় ছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘‘একে নানা অসন্তোষ, অন্য দিকে সবার হাতে বন্দুকের অধিকার। ফলে যা হওয়ার তাই ঘটেছে। এর আগে মিশিগানেও এই ‘সিভিলিয়ান মিলিশিয়া’ বা বন্দুকধারী সাধারণ নাগরিকদের দাপট দেখা গিয়েছে। তবু ক্ষমতার সর্বোচ্চ কেন্দ্রে এমন হামলা ভয়ঙ্কর।’’ ১৯৮০-র দশকের লেবানন ছাড়া এমন ‘সিভিলিয়ান মিলিশিয়া’ কোথাও ছিল বলে তাঁর মনে পড়ছে না।
সমাজমাধ্যমে বলাবলি চলছে, ইউরোপ-আমেরিকা মনে করে, এমনটা তো আফ্রিকা বা তৃতীয় বিশ্বে ঘটে! টিনটিনের গল্পেও গেরিলাযোদ্ধারা লাতিন আমেরিকার কাল্পনিক রাষ্ট্রে প্রাসাদে ঢুকে শাসককে উৎখাত করে। প্রথম বিশ্বে কখনও তেমন ঘটে না। ট্রাম্পের আমেরিকায় ভোট নিয়ে উৎকণ্ঠা, গোলমাল বা ব্যালট কারচুপি নিয়ে শঙ্কায় এ বার অনেকেই বিহারের ছায়া দেখছেন। বুধবারই জর্জিয়ায় হতদরিদ্র ঘর থেকে উঠে আসা কৃষ্ণাঙ্গ প্রার্থীর সেনেটে নির্বাচন এক মুক্তমনা আমেরিকার গল্পও কিন্তু বলছে। সুগত বা দীপেশদের মতে, ক্যাপিটল-কাণ্ড সেই গর্বের আমেরিকার বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy