ধাতব ‘হৃদয়’!
এই প্রথম বিশ্বে এমন কাণ্ড ঘটল। ভয়াবহ হার্ট অ্যাটাকের জেরে প্রায় মরতে বসেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা বছর ৪০-এর এক ব্যক্তি (পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি)। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, হৃদ্যন্ত্র প্রতিস্থাপন করা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু বললেই তো ডোনার বা হৃদ্যন্ত্র দাতা পাওয়া সম্ভব নয়। তত দিন পর্যন্ত যে কোনও উপায়ে বাঁচিয়ে রাখতে হবে রোগীকে। এই অবস্থায় টাইটেনিয়াম ধাতুর তৈরি একটি কৃত্রিম হৃদ্যন্ত্র বসানো হয় ওই ব্যক্তির শরীরে। তাতেই চমক। হাতের মুঠোর মাপের ওই যন্ত্র বুকের ভিতর ধুকপুক করে উঠল। প্রকৃতির নিয়ম মেনে রক্ত পাম্প করল সে, রক্ত পৌঁছে দিল ফুসফুসে, ১০৫ দিন স্বাভাবিক ভাবে বাঁচিয়ে রাখল রোগীকে। এমনকি ওই ‘ধাতব হৃদয়’ নিয়ে হাসপাতাল থেকে এক সময়ে ছাড়াও হল রোগীকে।
এ হেন ধাতব হৃদ্যন্ত্রের সাহায্যে বেঁচে থাকার এটিই সর্বোচ্চ রেকর্ড। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কেরামতি দেখে উচ্ছ্বসিত চিকিৎসকেরাও। নভেম্বর মাসে সিডনির সেন্ট ভিনসেন্ট’স হাসপাতালে ওই রোগীর শরীরে বসানো হয়েছিল কৃত্রিম হৃদ্যন্ত্রটি। ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ওই যন্ত্র নিয়েই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। ৬ মার্চ এক জন ডোনার পাওয়া যায়। এর পর ওই টাইটেনিয়ামের হৃদ্যন্ত্র সরিয়ে আসল হৃদ্যন্ত্র বসানো হয় রোগীর দেহে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ওই ধাতব যন্ত্রটি না থাকলে ডোনার পাওয়া পর্যন্ত রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হত না।
ধাতব হৃদ্যন্ত্র তৈরি নিয়ে গত ২৫ বছর ধরে গবেষণা চলছে। এর আগেও যন্ত্রটি মানবদেহে বসানো হয়েছে। কিন্তু এত দিন ধরে তা কাজ করেনি কখনও। গত বছর আমেরিকায় ৫৮ বছর বয়সি এক প্রৌঢ়ের শরীরে বসানো হয়েছিল টাইটেনিয়ামের হৃদ্যন্ত্র। আট দিনের মাথায় ডোনার পাওয়া যায়। তত দিন পর্যন্ত সফল ভাবে কাজ করেছিল যন্ত্রটি।
সিডনির হাসপাতালটির শল্যচিকিৎসক পল জ্যানজ় সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেন, ‘‘গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। পুরো খেলাই বদলে দেবে এই যন্ত্র।’’ ওই হাসপাতালেরই শল্যচিকিৎসক দলের প্রধান ক্রিস হেওয়ার্ডের কথায়, ‘‘আগামী এক দশকের মধ্যে দেখা যাবে, হৃদ্রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে কৃত্রিম হৃদ্যন্ত্র। যত দিন না ডোনার পাওয়া যাচ্ছে, তত দিন সামাল দেওয়া তো বটেই, এর পর হয়তো দেখা যাবে দীর্ঘমেয়াদি ভাবে ধাতব যন্ত্রটিই বিকল্প হৃদয় হিসেবে কাজ করবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)