Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Explosion in Lebanon

লেবাননে চিকিৎসা সঙ্কট, বাড়ছে মৃত্যু, যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও জটিল

গত মঙ্গল ও বুধবার পর পর দু’দিন পেজার এবং ওয়াকি টকি বিস্ফোরণে লেবাননে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৫১ জনের। পেজার বিস্ফোরণে ১৪ জন এবং ওয়াকি টকি বিস্ফোরণে ৩৭ জনের মৃত্যুর খবর আজ নিশ্চিত করেছে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

ইজ়রায়েলি ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক প্যালেস্তাইনি বালিকার।

ইজ়রায়েলি ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক প্যালেস্তাইনি বালিকার। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
বেরুট শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৩২
Share: Save:

গত কাল প্রায় গোটা রাতটাই অপারেশন থিয়েটারে কাটিয়েছেন ইলিয়াস ওয়ারাক। বেরুটের মাউন্ট লেবানন হসপিটালে কর্মরত এই প্রৌঢ় চোখের সার্জন আজ একটি ব্রিটিশ সংবাদ চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, গত কাল সারা দিনে মোট যে ক’টি চোখের অস্ত্রোপচার তিনি করেছেন, সারা জীবনে তত অস্ত্রোপচার তাঁকে করতে হয়নি। বেশির ভাগ অস্ত্রোপচারই ছিল অল্পবয়সি পুরুষদের একটা চোখ বাঁচানোর চেষ্টা। চিকিৎসক জানালেন, কারও কারও একটা চোখ বাঁচাতে পারলেও অনেক ক্ষেত্রেই বহু তরুণের দু’টি চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক মুখপাত্রও আজ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁদের দেশ এখন এক অভূতপূর্ব চিকিৎসা সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে চলছে।

গত মঙ্গল ও বুধবার পর পর দু’দিন পেজার এবং ওয়াকি টকি বিস্ফোরণে লেবাননে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৫১ জনের। পেজার বিস্ফোরণে ১৪ জন এবং ওয়াকি টকি বিস্ফোরণে ৩৭ জনের মৃত্যুর খবর আজ নিশ্চিত করেছে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রক। নিহতদের মধ্য বেশির ভাগই অল্পবয়সি তরুণ। বিস্ফোরণের শিকার হয়েছে ছোট শিশুরাও। আহতের সংখ্যা চার হাজার ছুঁইছুঁই। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ৩০০ জনের অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক। যাঁরা আহত, তাঁদের বেশির ভাগেরই হয় একটি চোখ, না হলে দু’টি চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। লেবানন জুড়ে এখন রক্তের আকাল। হাসপাতালগুলিতে উপচে পড়ছে আহতদের ভিড়। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা কার্যত গত দু’দিন না ঘুমিয়ে পরিষেবা দিয়ে চলেছেন। আহতদের মধ্যে অন্তত ৯০ জনকে তেহরানের হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসা করানো হচ্ছে।

হিজ়বুল্লা গোষ্ঠীর সদস্যদের ব্যবহৃত পেজার এবং ওয়াকি টকিগুলিতে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পিছনে ইজ়রায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের হাত রয়েছে বলে আগেই অভিযোগ করেছিল লেবানন সরকার। সরাসরি এই বিস্ফোরণগুলির দায় স্বীকার না করলেও পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং হিজ়বুল্লাকে নিয়ে গত কাল প্রথম বারের জন্য মুখ খুলেছে ইজ়রায়েল সরকার। সে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওয়াভ গ্যালান্ট এক সেনা ঘাঁটি থেকে বলেছেন, ‘‘যুদ্ধ পরিস্থিতি এখন এক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।’’ সেই সঙ্গেই হিজ়বুল্লা গোষ্ঠীর উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘হিজ়বুল্লা যা করছে, তাদের তার দ্বিগুণ মূল্য চোকাতে হবেই।’’ অর্থাৎ মোসাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে পরোক্ষে সিলমোহরই দিয়েছেন ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

তাঁর গোষ্ঠীর সদস্যদের উপরে একের পর এক হামলা নিয়ে জাতীয় টেলিভিশনে আজ মুখ খুলেছেন হিজ়বুল্লা প্রধান হাসান নাসরুল্লা। মোসাদ বাহিনীর এই হামলাকে তিনি ‘যুদ্ধের ঘোষণা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। নাসরুল্লা যখন টিভিতে বক্তৃতা দিচ্ছেন, তখনই দক্ষিণ লেবানন জুড়ে হিজ়বুল্লার বড় ঘাঁটিগুলিতে হামলার কথা জানিয়েছে ইজ়রায়েল। রাজধানী বেরুটও আজ কয়েক বার তীব্র বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠেছে। তবে প্যালেস্টাইন, বিশেষত গাজ়া ভূখণ্ডে আক্রমণের প্রতিশোধ তাঁরা নেবেনই বলে ইজ়রায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন নাসরুল্লাও। সব মিলিয়ে পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও জটিল হল বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

লেবাননের সেনা আপাতত রাস্তায় রাস্তায় বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম থেকে বিস্ফোরক উদ্ধারের কাজে নেমেছে। জাপানের যে সংস্থার তৈরি ওয়াকি টকিগুলিতে কাল বিস্ফোরণ হয়েছে, অন্তত দশ বছর আগে সেগুলির উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে ওই জাপানি সংস্থা।

আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের বেশির ভাগ উন্নত দেশ ইজ়রায়েলের বন্ধু হলেও লেবাননে একের পর এক পেজার এবং ওয়াকি টকি বিস্ফোরণের কড়া নিন্দা করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নজিব মিকাতির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন তিনি। এই কঠিন সময়ে লেবাননবাসীর পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মাকরঁ। ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের জন্য আজই রাষ্ট্রপুঞ্জের দ্বারস্থ হয়েছেন মিকাতি। তাঁর অভিযোগ, নতুন ধরনের এক ‘প্রযুক্তিগত যুদ্ধ’ শুরু করেছে ইজ়রায়েল। যা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত বলে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Lebanon israel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy