কফিনে শায়িত এঞ্জেলের দেহ। বৃহস্পতিবার ম্যান্ডালে-তে। ছবি রয়টার্স।
কালো টি-শার্টটায় সাদা কালি দিয়ে বড় বড় করে লেখা ছিল ‘এভরিথিং উইল বি ওকে’। ম্যান্ডালে-র রাস্তায় বুলেট থেকে বাঁচতে ওই টি-শার্টের শুয়ে পড়ার ছবি গত কালই দেখে ফেলেছিল গোটা বিশ্ব। আজ সকালে জানা গেল, মাথায় গুলি লেগে কাল মারা গিয়েছেন টি-শার্ট পরা মা কিয়াল সিন। পরিচিতদের কাছে তিনি এঞ্জেল নামে জনপ্রিয় ছিলেন। তার পর থেকেই তোলপাড় নেট দুনিয়া থেকে শুরু করে গোটা বিশ্বের সংবাদমাধ্যম।
গত কাল মায়ানমারে গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষের উপরে সেনা-পুলিশের যৌথ অভিযানে মৃত্যু হয়েছে মোট ৩৮ জনের। ১ ফেব্রুয়ারির সেনা অভ্যুত্থানের পর কালই ছিল দেশে সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন। তায়কোন্ডু চ্যাম্পিয়ন, উনিশ বছরের এঞ্জেল টি-শার্টে নিজের রক্তের গ্রুপ লিখে রাখতেন। সঙ্গে একটা যোগাযোগের নম্বরও। লিখে রেখেছিলেন, বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে তাঁর কিছু হলে তাঁর দেহ যেন দান করে দেওয়া হয়। গত নভেম্বরে প্রথম বার ভোট দিয়েছিলেন এঞ্জেল। নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা পোস্টও দিয়েছিলেন। সেই গণতন্ত্র বাঁচাতেই গত কাল রাস্তায় নামেন। মাকে আলিঙ্গন করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। কফিনের ভিতরে শোয়া এঞ্জেলের নিথর দেহের ছবি আজ ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়।
এঞ্জেলের সঙ্গেই কাল ম্যান্ডালের রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন মিয়াত থু নামে এক যুবক। তিনি দাবি করেছেন, কোনও প্ররোচনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ মিছিলে গুলি চালাতে শুরু করেছিল পুলিশ। মিয়াত বললেন, ‘‘প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছিল পুলিশ। জলের পাইপ ফাটিয়ে এঞ্জেলই সকলের চোখেমুখে জল দিতে সাহায্য করেছিল। আমাকে বলল রাস্তায় শুয়ে পড়তে, না হলে গুলি লাগতে পারে। মিছিল ছত্রভঙ্গ হতে ওকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। ভাবতে পারছি না ওই প্রাণবন্ত মেয়েটা আর বেঁচেই নেই।’’
শুধু এঞ্জেলই নন, অল্পবয়সি বেশ কয়েক জন বিক্ষোভকারীকে গত কয়েক দিনে বুকে অথবা মাথায় গুলি করে মেরেছে পুলিশ। অথচ গত সপ্তাহেও সেনার তরফে জাতীয় টিভি চ্যানেলে দাবি করা হয়েছিল, বিক্ষোভ সামলাতে আগ্নেয়াস্ত্রের প্রয়োগ করবে না তারা। মারতে হলে শরীরের নিম্নাংশে মারা হবে।
কালকের পুলিশি অত্যাচার নিয়ে সরব রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে শুরু করে পশ্চিমি বিশ্ব। আমেরিকার বিদেশ দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস কড়া বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘মায়ানমারের সেনার এই নৃশংস অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিশ্বের প্রতিটি দেশকে একত্র হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। আমেরিকা গোটা ঘটনায় বিহ্বল।’’ আমেরিকার সুরেই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ বলেছেন, ‘‘মায়ানমারের মানুষের পাশে রয়েছি আমরা।’’ মায়ানমারে শান্তি ফেরাতে চিনের হস্তক্ষেপও দাবি করেছে পশ্চিমি দেশগুলি।
রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংগঠনের প্রধান মিশেল ব্যাচেলে-ও আজ এক হাত নিয়েছেন জুন্টাকে। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ৫৪ জন বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে। অবিলম্বে সাধারণ মানুষকে এ ভাবে হত্যা করা বন্ধ না করলে মায়ানমারের সেনাকে তার ফল ভুগতে হবে। যদিও মায়ানমার সেনা আজই এক বিবৃতিতে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে এই ধরনের হুঁশিয়ারিতে তারা পিছু হটতে রাজি নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy