বিভিন্ন মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশ্ন। তা হলে দাদা কিম জং উনের পরে কি বোন কিম ইয়ো জং-য়ের হাতেই উত্তর কোরিয়াকে শাসনের ভার?
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২০ ১০:০০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
পারিবারিক ধারা মেনেই তাঁর সম্বন্ধে বিভিন্ন তথ্য স্পষ্ট করে জানা যায় না। ধোঁয়াশায় পিছনে এই তরুণী এখন আন্তর্জাতিক আলোচনার অন্যতম কেন্দ্র। তেত্রিশ বছর বয়সি কিম ইয়ো জং-কে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে ‘উত্তর কোরিয়ার ইভাঙ্কা ট্রাম্প’।
০২১৬
বছর দুয়েক আগে তিনি রকেটের গতিতে উঠে আসেন খবরে। ২০১৮-য় সোলে আয়োজিত শীতকালীন অলিম্পিক্সে পিয়ংইয়ংয়ের প্রতিনিধি হিসাবে যোগ দিতে যান কিম ইয়ো। করোনা ভাইরাসের কালবেলাতেও সংবাদমাধ্যমের নজর তাঁর দিকে। বিভিন্ন মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশ্ন। তা হলে দাদা কিম জং উনের পরে কি বোন কিম ইয়ো জং-য়ের হাতেই উত্তর কোরিয়াকে শাসনের ভার?
০৩১৬
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি কিম জং উনকে। ঠাকুরদা কিম ইল সাংয়ের জন্মবার্ষিকী পালন উৎসবেও দেখা যায়নি তাঁকে। তখন থেকেই তাঁর অনুপস্থিতির কারণ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। পরে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ওয়েব পোর্টাল জানায়, হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচারের পর সঙ্কটজনক অবস্থায় রয়েছেন কিম।
০৪১৬
সোলের তরফে সেই দাবি খারিজ করা হলেও, পিয়ংইয়ং থেকে এখনও পর্যন্ত সে নিয়ে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তাতেই কিমের উত্তরসূরি হিসাবে তাঁর বোন কিম ইয়ো জংকে বাজি রাখতে শুরু করেছেন কূটনৈতিক মহল।
০৫১৬
উত্তর কোরিয়ার ‘ফার্স্ট ফ্যামিলি’-র সদস্য, ৩২ বছর বয়সী কিম ইয়ো সম্প্রতি সক্রিয় রাজনীতিতে পা রেখেছেন। তবে গত দু’বছরে মাত্র কয়েক বারই ক্যামেরার সামনে ধরা দিয়েছেন তিনি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে দাদার ‘চিফ অব স্টাফ’ হিসাবে যোগ দেওয়া।ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর।
০৬১৬
মার্কিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিম ইয়ো জং পড়াশোনা করেছেন উত্তর কোরিয়ার পাশাপাশি সুইৎজারল্যান্ডের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে। তাঁর বিষয় কম্পিউটার সায়েন্সের পাশাপাশি তিনি শিখেছেন ব্যালে নাচ। ভালবাসেন ঘোড়ায় চড়তেও। প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মিলিটারি ইউনিভার্সিটিতেও।
০৭১৬
মার্কিন কূটনীতিবিদ মাইকেল ম্যাডেনের দাবি, ছেলের চেয়েও মেয়ের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন উত্তর কোরিয়ার প্রয়াত শাসক কিম জং ইল। তাই কৈশোরেই রাজনীতি শিক্ষার জন্য সে দেশের ‘চাণক্য’ বলে পরিচিত কিম কি নমের কাছে মেয়েকে সঁপে দেন তিনি।
০৮১৬
তবে উত্তর কোরিয়ার সংবিধানে মহিলাদের সমানাধিকারের কথা বলা হলেও, সে দেশের সমাজব্যবস্থা এখনও পুরুষতান্ত্রিক। সে ক্ষেত্রে এক জন মহিলা সদস্যের নেতৃত্ব মেনে নেবে কি না, সে নিয়ে সংশয়ও রয়েছে কূটনীতিবিদদের মধ্যে।
০৯১৬
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোরীয় উপদ্বীপ যখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়, তখন থেকেই বংশ পরম্পরায় উত্তর কোরিয়া শাসনভার কিম পরিবারে হাতে। কিম ইল সাংয়ের পর ক্ষমতায় আসেন তাঁর ছেলে কিম জং ইল।
১০১৬
২০১১-য় তাঁর মৃত্যুর পর দেশের শাসনভার নিজের হাতে তুলে নেন কিম জং উন। অর্থাৎ তিন প্রজন্ম ধরে কিম পরিবারের পুরুষ সদস্যরাই উত্তর কোরিয়া শাসন করে এসেছেন।
১১১৬
কিম জং উনের দাদা কিম জং চোল বরাবরই রাজনীতি থেকে দূরে। সঙ্গীতচর্চায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন তিনি। ভবিষ্যতেও রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়তে তিনি ইচ্ছুক নন বলে দাবি ইংল্যান্ডে উত্তর কোরিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত তে ইয়াং হো-র।
১২১৬
আর এক বোন কিম সোল সং সরকারের নীতি প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও, শাসনভার সামলানোর জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ নেই তাঁর।
১৩১৬
কিম জংয়ের পিসি কিম কিয়ং হুই একসময় দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং শাসনব্যবস্থাকে অচল করে দেওয়া ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ২০১৩-য় তাঁর স্বামী জেং সং তেক-এর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর থেকেই নিভৃতবাসে তিনি। এ বছরের গোড়ার দিকে এক বার মাত্র জনসমক্ষে আসেন তিনি।
১৪১৬
দক্ষিণ কোরিয়ার গুপ্তচর সংস্থা ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স সার্ভিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কিম জং উনের তিন সন্তান রয়েছে। তাঁর বড় ছেলের বয়স ১০ বছর। ২০১৭ সালে তাঁর সর্বকনিষ্ঠ সন্তানের জন্ম হয়। এই মুহূর্তে তাদের কেউই ক্ষমতায় বসার উপযুক্ত নয়।
১৫১৬
সে ক্ষেত্রে যত দিন পর্যন্ত তারা প্রাপ্তবয়স্ক না হচ্ছে, তত দিন তাদের রাজনৈতিক অভিভাবক হিসাবে কাউকে নিয়োগ করা যেতে পারে। তাদের হয়ে দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে গঠিত ‘কেয়ারটেকার সরকার’ শাসনকার্য চালাতে পারে।
১৬১৬
এই পরিস্থিতিতে দাদার অবর্তমানে কিম ইয়োর হাতেই দেশের শাসনভার ওঠার কথা। সেরকম হলে এই প্রথম এক জন মহিলা উত্তর কোরিয়াকে নেতৃত্ব দেবেন।