Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

দ্বিপাক্ষিক অনাস্থার ছায়ায় যাত্রা শুরু করতারপুরে

গত দু’দিন ধরে তীর্থযাত্রীদের কাগজপত্র ও পরিষেবা মূল্য নিয়ে চলেছে নাটকীয় ডিগবাজি।

করতারপুর সাহিব। ছবি: পিটিআই।

করতারপুর সাহিব। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৩৬
Share: Save:

পুলওয়ামায় জঙ্গি হানা ও ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রবল সংঘাতপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক আবহ সত্ত্বেও বাস্তবায়নের মুখে করতারপুর করিডর প্রকল্প। আগামিকাল, শনিবার প্রথম দফায় পাঁচশোরও বেশি তীর্থযাত্রী পাকিস্তানের দরবার সাহিব গুরুদ্বারে পা রাখবেন।

তবে এক দিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আগামিকাল এই করিডরের উদ্বোধন করলেও দ্বিপাক্ষিক আস্থার অভাব কিন্তু থেকেই গেল। গত দু’দিন ধরে তীর্থযাত্রীদের কাগজপত্র ও পরিষেবা মূল্য নিয়ে চলেছে নাটকীয় ডিগবাজি। অবশ্য আজ দিনের শেষে পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মহম্মদ ফৈজল টুইট করেছেন, ‘‘করতারপুরে ভারতীয় পুণ্যার্থীদের ২০ ডলার করে লাগবে না।’’ তাঁর বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রতিশ্রুতি মতো আগামিকাল অর্থাৎ করতারপুর করিডরের উদ্বোধনের দিন ও ১২ নভেম্বর অর্থাৎ গুরু নানকের ৫৫০তম জন্মদিনের দিন কোনও পরিষেবা মূল্য নেবে না পাকিস্তান। ফৈজল বলেছেন, ‘‘এই বিষয়টি আগেই স্পষ্ট করেছিল ইসলামাবাদ। দুর্ভাগ্যজনক হল, ভারত এই সব সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।’’

এ ক্ষেত্রে যদিও ভারতের বক্তব্য, তীর্থযাত্রীদের পাসপোর্ট লাগবে কি লাগবে না, ২০ ডলার মূল্য দিতে হবে কি হবে না, এই বিষয়গুলি করতারপুর করিডর সংক্রান্ত সমঝোতা পত্রেই স্পষ্ট করে দেওয়া উচিত ছিল পাকিস্তানের। পরে টুইট করে এক এক সময় এক এক কথা বলা অর্থহীন। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে আজ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। ভারতের বক্তব্য, দ্বিপাক্ষিক সমঝোতাপত্র এক তরফা ভাবে বদলাচ্ছে পাকিস্তান। সমঝোতা পত্রে প্রথমে কোনও সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলেনি ইমরান খান সরকার। কিন্তু এখন টুইট করে অন্য কথা বলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট। যতক্ষণ না দ্বিপাক্ষিক ভাবে সমঝোতা পত্র সংশোধন করা হচ্ছে ততক্ষণ আগের চুক্তিই বলবৎ থাকুক। তা হলে তীর্থযাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তি কমবে। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এ-ও বলা হয়েছে, ‘‘আমরা পাকিস্তানকে চার দিন আগেই তীর্থযাত্রীদের চূড়ান্ত তালিকা জানিয়েছিলাম। যাতে আগে থেকে তারা প্রস্তুতি নিতে পারে।’’ এরই মধ্যে ভারত-বিরোধিতার ধারা অন্য ভাবে বজায় রেখেছে পাকিস্তান। করতারপুর করিডর উদ্বোধনের আগের দিন একাত্তরের যুদ্ধের সময়ের একটি বোমার প্রদর্শন করে ভারত বিরোধী প্রচার চালাচ্ছে দেশটি।

আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় নীতি নিয়েই প্রশ্ন মুডি’জের, অর্থনীতিতে আরও লম্বা ঝিমুনির বার্তা

করতারপুর নিয়ে এই তথ্যগুলো জানেন?

নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করতারপুর করিডর নিয়ে কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে নয়াদিল্লি। এটি যে সম্পূর্ণ ভাবে পাক সেনার মদতপ্রাপ্ত একটি প্রকল্প তা বুঝেও এখন আর পিছিয়ে আসার কোনও উপায় নেই ভারতের। কারণ এর সঙ্গে শিখ আবেগ যুক্ত। আর এই শিখ আবেগকে যে পাকিস্তানের মতো একটি দেশ কাজে লাগাবে না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই সাউথ ব্লকের কাছে। এ কথাও মনে করা হচ্ছে, সম্প্রতি লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশনারের সামনে কাশ্মীর নিয়ে যে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে, তার মধ্যেও মিশে ছিল খলিস্তানি অংশ। পঞ্জাব সীমান্তের কাছে পাক সেনা যে এই করিডরটি তৈরি করল সেটি আইএসআই ও সেনার ভারত বিরোধিতার কোনও কৌশলগত ঘাঁটি হবে কি না, সেটিও হিসেবের মধ্যে রাখতে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে।

অন্য দিকে, করতারপুর নিয়ে যে পাকিস্তান এক এক সময় এক এক রকম কথা বলছে এটা নতুন কিছু নয়। কারণ, রাজনৈতিক ও সামরিক—এই দুই নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব পাকিস্তানের চিরাচরিত ব্যাপার। ইমরান প্রধানমন্ত্রী পদে বসার পরে মনে করা হয়েছিল, এ বার একসুরে কথা বলবে সরকার ও সেনা। কিন্তু যত দিন গড়াচ্ছে ততই টের পাওয়া যাচ্ছে ইমরানের অভ্যন্তরীণ কর্তৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়ছে ক্রমশ। এবং এটাও ভারতের কাছে স্পষ্ট হচ্ছে যে, শেষমেশ করতারপুর প্রকল্প পুরোপুরিই চালাবে পাক সামরিক নেতৃত্ব।

অন্য বিষয়গুলি:

Kartarpur Kartarpur Corridor Pakistan India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy