প্রতীকী ছবি।
জিম ওবারগাফেলের নাম এখন অনেকটা বিস্মৃতির আড়ালে চলে গিয়েছে। কিন্তু আজকের মতো বিশেষ দিনে, যখন এ দেশে সমকামী মানুষদের অধিকার প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ছে, তখন আমাদের ওবারগাফেলের লড়াইয়ের কথা নতুন করে মনে করতে হবে। মনে রাখতে হবে, কেন এই মানুষটির নাম আমেরিকান সংবিধানের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০১৫-র ২৬ জুন। সেই দিন ‘ওবারগাফেল ভার্সেস হজেস’ মামলার রায় ঘোষণা করে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট গোটা দেশে সমলিঙ্গের বিয়েকে পরিপূর্ণ আইনি স্বীকৃতি দিয়েছিল। এ দেশে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের মানুষের দীর্ঘদিনের কঠিন সংগ্রামের সঙ্গে একটি ব্যক্তিগত সংগ্রাম কী ভাবে মিলে গিয়েছিল, ওবারগাফেল মামলা তারই কাহিনি। ২০১৪ সালে জিম ওবারগাফেল তাঁর বহু বছরের সঙ্গী জন আর্থারকে বিয়ে করেন মেরিল্যান্ড প্রদেশে গিয়ে, কারণ তাঁরা যেখানে থাকতেন, সেই ওহায়োয় সমলিঙ্গে বিয়ে বৈধ ছিল না। তখন জন অসুস্থ, প্রায় মৃত্যুপথযাত্রী। বিয়ের পরে তাঁরা ওহায়োয় ফিরে যান। কিন্তু জনের মৃত্যুর পরে তাঁর মৃত্যুর শংসাপত্রে তাঁকে ‘বিবাহিত’ উল্লেখ করতে অস্বীকার করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তখন ওহায়ো প্রদেশের বিরুদ্ধেই মামলা করেন ওবারগাফেল। সেই মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। আর সেই মামলাতেই ইতিহাস সৃষ্টিকারী রায় দেন আমেরিকান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অ্যান্টনি কেনেডি। বিচারপতি কেনেডি তাঁর রায়ে বলেন, ‘‘বিবাহ একটি অতি পবিত্র সম্পর্ক। আমরা যখন বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হই, মানুষ হিসেবেও উন্নত হই। কোনও আইন দু’টি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরমধ্যে এই সম্পর্ককে অবৈধ বলতে পারে না।’’
এই রায়ের ফলে সমলিঙ্গে বিবাহ আইনি স্বীকৃতি পায় দেশের ৫০টি প্রদেশেই। সেই রায়ের সাত বছর পরে এখন প্রশ্ন উঠছে, সুপ্রিম কোর্টের ‘রো ভার্সেস ওয়েড’ রায়কে যে ভাবে সম্প্রতি খারিজ করে দেওয়া হল, সে ভাবেই খারিজ করে দেওয়া হবে না তো বিচারপতি কেনেডির রায়কে? রো ভার্সেস ওয়েড মামলার রায়ের পরে আমেরিকার প্রতিটি প্রদেশে গর্ভপাতকে বৈধ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট এক পাল্টা রায়ে আগের সেই রায় খারিজ করে দিয়ে জানিয়েছে, গর্ভপাত করানো সাংবিধানিক অধিকারের মধ্যে পড়ে না। এক জন মহিলা গর্ভপাত করাতে পারবেন কি না, তা সিদ্ধান্ত নেবে প্রাদেশিক সরকার। কোনও মহিলা (বা পুরুষ) এই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।
গর্ভপাত সংক্রান্ত এই বিবৃতি এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওবারগাফেল সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই আশঙ্কর কথাই প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, ‘‘আমেরিকার ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে আদালতের রায়ের ফলে যে সমস্ত অধিকারকে ‘সাংবিধানিক’ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম সমলিঙ্গে বিবাহকে স্বীকৃতি। এই ‘বৈধতার’ বয়স মাত্র সাত বছর। কোনও ভাবেই এটিকে ‘ঐতিহাসিক অধিকার’ বলা যায় না। সেই কারণে এই অধিকারের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।’’
এখন সুপ্রিম কোর্টে কট্টরপন্থী রিপাবলিকান বিচারপতির সংখ্যাই বেশি। ফলে আমেরিকান কংগ্রেসের প্রগতিশীল নেতাদের আশঙ্কা, সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে যে কোনও সময়ে কোনও ‘নেতিবাচক’ পদক্ষেপ করতে পারে। তার আগেই ‘সমলিঙ্গ এবং ভিন্ন বর্ণের মানুষদের বিয়েকে সম্পূর্ণ ভাবে ভাবে স্বীকৃতি’ দেওয়ার জন্য বিল এনেছেন ৫০ জন ডেমোক্র্যাট ও ১২ জন রিপাবলিকান সেনেটর। তাঁদের ভোটে এই বিল গত সপ্তাহে সেনেটে পাশও হয়ে গিয়েছে।
দিন কয়েক আগেই একটি পানশালায় গুলি করে মারা হল এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের মানুষকে। তাঁরা এই দেশে সম্মানজনক ভাবে বাঁচতে এবং জীবনের বিভিন্ন বাঁকে আইনি নিশ্চয়তা পেতে পারেন, সেটা খেয়াল রাখা খুব জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্তর্বর্তী নির্বাচনের ফলাফলে হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসে এ বার রিপাবলিকানেরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই নতুন সেশন শুরু হওয়ার আগে হাউসে এই বিল পাশ করানোর চেষ্টা করবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। অর্থাৎ যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি এই বিলকে আইনে পরিণত করার চেষ্টা চলছে, যাতে সমলিঙ্গের মানুষের বিয়ে সমস্ত দেশে, সমান সম্মানের সাথে স্বীকৃত হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy