চার গণতন্ত্রকামী নেতার মৃত্যুর প্রতিবাদ। ইয়াঙ্গনে। রয়টার্স
মাত্র তিন দিন আগে, মানে গত শুক্রবারই কারাগারে বন্দি ছেলের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা বলেছিলেন মা। হিন উইন মে ঘুণাক্ষরেও তখন টের পাননি এই শেষ দেখা। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই জুন্টা সরকার মেরে ফেলবে তাঁর ছেলে, গণতন্ত্রকামী নেতা হিয়ো জ়ায়ার থায়ো-কে। আজ সকালে মায়ানমারের সেনা সরকার সংবাদমাধ্যমকে জানায়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামির সাজা কার্যকর করা হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহ, দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত চার গণতন্ত্রকামী নেতার মৃত্যুর খবরে নড়ে উঠেছে গোটা বিশ্ব। জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সরব রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে শুরু করে নানা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। ১৯৮৮ সালের পরে এই প্রথম মৃত্যুদণ্ডের আদেশ কার্যকর করল মায়ানমারের জুন্টা সরকার। আগে ফাঁসি দেওয়া হলেও এ বার কী ভাবে ওই চার নেতাকে মারা হয়েছে,তা স্পষ্ট নয়।
মায়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী আউং সান সু চি-র ঘনিষ্ঠ সহযোগী, তথা মায়ানমার আইনসভার প্রাক্তন সদস্য জ়ায়ার হিপহপ তারকা ছিলেন। গত নভেম্বরে ইয়াঙ্গনের ফ্ল্যাট থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল সেনা। অভিযোগ, সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয় দেশের ট্রাইবুনাল আদালত। বন্ধ ঘরের সেই বিচার নিয়ে বহু আগেই প্রশ্ন তুলেছিল মানবাধিকার সংগঠনগুলি। সাজার বিরুদ্ধে আবেদন করেও লাভ হয়নি। এপ্রিল মাসে মৃত্যুদণ্ডের সাজাই বহাল রাখে আদালত। আজ সংবাদমাধ্যমে ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে স্তম্ভিত জ়ায়ারের মা হিন। জানালেন, তিন দিন আগেও যখন কথা হয়েছিল, ছেলে তাঁর কাছে চশমা, অভিধান আর কিছু দরকারি জিনিস চেয়ে পাঠিয়েছিলেন। তাঁর কখনও মনে হয়নি, ছেলের হাসি মুখটা সেই শেষ দেখছেন।
জ়ায়ারের সঙ্গেই হত্যা করা হয়েছে আরও তিন গণতন্ত্রকামী নেতাকে। যাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন কো জিমি ওরফে কিয়ো মিন ইউ। ১৯৮৮ থেকে সেনা-বিরোধী গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন জনপ্রিয় এই নেতা। গত অক্টোবরে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকে। অভিযোগ ছিল জ়ায়ারের মতোই। বিচারও হয়েছে জ়ায়ারের মতোই। জিমি ছাড়া মেরে ফেলা হয়েছে আরও দুই নেতা, লা মিয়ো আউং এবং আউং থুরা জ়ায়োকে। শেষ দু’জনের সম্পর্কে বিশেষ তথ্য মেলেনি। শুধু জানা গিয়েছে, সেনাকে তথ্য দিতেন, এমন এক মহিলাকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল এই দু’জনকে।
জ়ায়ারের বাড়ির লোকের মতো বাকি তিন নেতার বাড়ির কাউকেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা নিয়ে সরকারি ভাবে কিছুই জানানো হয়নি। প্রিয়জনের দেহ পেতে তাই আবেদন জানিয়েছেন ওই চার জনের পরিবারের লোকজন। জ়ায়ারের মা জানিয়েছেন, ঐতিহ্য মেনে ছেলের শেষকৃত্য করতে চান তিনি। কিন্তু সরকার দেহ না দিলে, সেটাও করতে পারছেন না বৃদ্ধা। জিমির স্ত্রীও তাঁর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেনা-বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন সেই ছাত্রী বয়স থেকে। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পরে আজ তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়াজানা যায়নি।
তবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, মায়ানমারে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি টম অ্যান্ড্রুজ়। বলেছেন, ‘‘জুন্টা সরকারের এই হীন আচরণের জন্য গোটা বিশ্বকে গর্জে উঠতে হবে।’’ রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসের মুখপাত্রও এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন। উদ্বিগ্ন দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলিও। এর পরে আরও শতাধিক গণতন্ত্রকামী নেতা ও বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy