Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Jair Bolsonaro

পুড়ছে জঙ্গল, চটছেন প্রেসিডেন্ট

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের তুরুপের তাস যেমন ছিল ‘মেক্সিকো সীমান্তের প্রাচীর’, তেমনই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বোলসোনারোর প্রচারের অস্ত্র ছিল ‘আমাজন বৃষ্টি-অরণ্যের উন্নয়ন’।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো।—ছবি রয়টার্স।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো।—ছবি রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা 
ব্রাসিলিয়া শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৯ ০১:৪০
Share: Save:

তিন সপ্তাহ ধরে লাগাতার জ্বলছে ব্রাজিলের আমাজন বৃষ্টি-অরণ্য। একসঙ্গে ন’হাজারেরও বেশি দাবানল। প্রথমে এই পরিসংখ্যান মানতে চাইছিলেন না দেশের অতি দক্ষিণপন্থী প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো। আর বুধবার বলে বসলেন, তাঁকে অপদস্থ করতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনই জঙ্গলে ইচ্ছে করে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে থেকেই আমাজন জঙ্গল এলাকার দিকে নজর রয়েছে বোলসোনারোর। আর এক দক্ষিণপন্থী রাষ্ট্রনেতা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের তুরুপের তাস যেমন ছিল ‘মেক্সিকো সীমান্তের প্রাচীর’, তেমনই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বোলসোনারোর প্রচারের অস্ত্র ছিল ‘আমাজন বৃষ্টি-অরণ্যের উন্নয়ন’। পরিবেশ সংক্রান্ত ভাবনা-চিন্তা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে বোলসোনারো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, ব্রাজিলের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে তাঁর প্রধান হাতিয়ার হবে আমাজন জঙ্গল এলাকার বিপুল খনিজ ভাণ্ডার। জঙ্গল সাফ করে খনন কাজ শুরু করতে দু’বার ভাববেন না তিনি। এই ‘উন্নয়নে’ শামিল হতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বন্ধু ট্রাম্পকেও।

এ বছর ১ জানুয়ারি ক্ষমতায় এসেই বোলসোনারো দেখিয়ে দিয়েছেন, সে সব কথার কথা ছিল না। পরিবেশবিদেরা জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসে ভয়াবহ দ্রুত হারে কাটা হচ্ছে এই এলাকার গাছপালা। পৃথিবীর ফুসফুস বলে মানা হয় যে আমাজন বৃষ্টি-অরণ্যকে, তার দুই-তৃতীয়াংশই ব্রাজিল সীমান্তের মধ্যে। সেই অংশটারই সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। গত কয়েক দশকে বৃষ্টি-অরণ্যের ২০ শতাংশ, অর্থাৎ, প্রায় আট লক্ষ বর্গকিলোমিটার এলাকার গাছপালা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আর এই আগুনে ঘি ঢালছে বোলসোনারোর বিতর্কিত সব নীতি।

আরও পড়ুন: এক সঙ্গে ন’হাজারেরও বেশি দাবানল! বিধ্বংসী আগুনে ছাই হচ্ছে আমাজন অরণ্য

বছরের এই সময়ে আমাজন অরণ্যে দাবানল নতুন কোনও ঘটনা নয়। শীতকালের (দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ ব্রাজিলের সব চেয়ে ঠান্ডা মাস জুলাই) শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য জুলাই-অগস্টে এখানে অসংখ্য ছোট-বড় দাবানল হয়। গড়ে বছরে হাজার তিন-চার দাবানলেরও খবর পাওয়া যায়। সেই সংখ্যাটা এ বার ন’হাজার ছাড়িয়েছে বলে দাবি করেছিল ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ‘ইনপে’। বুধবার মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-ও বৃষ্টি-অরণ্যের দাবানলের উপগ্রহ চিত্র প্রকাশ করে জানিয়েছে, ইনপে-র দাবি ঠিক।

অথচ ভুল তথ্য-প্রমাণ দাখিল করছেন এই অভিযোগ তুলে ইনপে-র প্রধান রিকার্দো গালভাওকে ২ অগস্ট বরখাস্ত করেছেন বোলসোনারো। আজই রিকার্দো এক বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘সারা পৃথিবী আমাজন জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আর খোদ প্রেসিডেন্ট অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে রয়েছেন।’’

এই রেকর্ড সংখ্যক দাবানলের কারণ যে ‘প্রাকৃতিক’ নয়, তা বেশ কিছু দিন ধরেই বলে আসছেন পরিবেশবিদেরা। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘‘এই সময়ে আগাছা পুড়িয়ে গবাদি পশুদের জন্য ঘাসজমি তৈরি করা হয়। তাই থেকেই জঙ্গলে আগুন লাগে। এটা নতুন কিছু নয়।’’ কিন্তু দেশ-বিদেশের পরিবেশবিদদের চাপে বোলসোনারোও মেনে নিতে বাধ্য হন যে এ বারের দাবানলের এই বিপুল সংখ্যা অত্যন্ত অস্বাভাবিক। কিন্তু সে কথা মেনে নিয়েও পরিবেশবিদদের উপরে উল্টো চাপ দিতে শুরু করেছেন তিনি। দাবি করছেন, তাঁকে অপদস্থ করার জন্য জঙ্গলে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে এই এলাকার আদিবাসী ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থারাই।

বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদদের উপর প্রেসিডেন্টের এই আক্রমণ ভাল চোখে দেখছেন না সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা। আমেরিকার মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এরিক ডেভিডসনের কথায়, ‘‘যে-কোনও বৈজ্ঞানিক তথ্য-নির্ভর বিশ্লেষণকে এ ভাবে যে এক রাষ্ট্রনেতা উড়িয়ে দিতে পারেন, সেটা সত্যিই আশ্চর্যের। ইনপে-র দেওয়া তথ্য অস্বীকার করে, সংস্থাটির প্রধানকে বরখাস্ত করে সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীদেরই অপমান করলেন বোলসোনারো।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy