জায়গাটায় ঠাসাঠাসি করে ছিল প্রচুর তাঁবু আর সেই তাঁবু ভর্তি ঘরছাড়া মানুষ। কিছু ঘরবাড়িও ছিল। একের পর এক ইজ়রায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ার পরে সেগুলোকে আর বাড়ি বলে চেনা যাচ্ছে না। আর মানুষগুলো? গাজ়া সিটির শুজাইয়া এলাকার যুবক আয়ুব সেলিম বললেন, ‘‘মৃতদেহগুলোকে কেউ যেন টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলেছে। চতুর্দিকে ছিটকে যাচ্ছে শ্র্যাপনেল। ধুলোর স্তর ভেদ করে শুধু আর্তনাদ ভেসে আসছে।’’
গাজ়া সিটির উত্তরাংশের এই শুজাইয়া এলাকায় ইজ়রায়েলি হামলায় অন্তত ২৯ জন প্যালেস্টাইনি নিহত হয়েছেন বলে খবর। মারা গিয়েছেন মহিলা ও শিশুরাও। গাজ়া সরকারের তথ্য দফতরের প্রধান জানিয়েছেন, ২০২৩-এর অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সেখানে নিহতের সংখ্যা এখন ৬১,৭০৯। আহত ১ লক্ষ ১৫ হাজারেরও বেশি। সম্ভাব্য নিহতদের মধ্যে প্রায় ৭৬ শতাংশের দেহ উদ্ধার হয়েছে। ১৪ হাজারেরও বেশি নিখোঁজ। তাঁরা ধ্বংসস্তূপের নীচে বা দুর্গম এলাকায় আটকে রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এক সাংবাদিক বলছিলেন, হাজার হাজার বসতবাড়ি যেন এখন কবরে বদলে গিয়েছে। শুধু শুজাইয়া নয়, ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স জানাচ্ছে, দক্ষিণ গাজ়ার আল-মাওয়াসি-তে তথাকথিত ‘নিরাপদ এলাকা’য় তাদের ক্লিনিকের গা ঘেঁষেও চলেছে ইজ়রায়েলি হামলা। খান ইউনিসের পশ্চিম দিকে এই হামলায় একটি ছোট্ট মেয়ে-সহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।
ইজ়রায়েল অবশ্য সদর্পে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজ়া জুড়ে ৪৫টি নিশানায় হামলা চালিয়েছে তাদের বিমান। গাজ়া সিটির শুজাইয়া এলাকায় হামলার লক্ষ্য ছিলেন হামাসের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা। ওই অঞ্চলে ঘাঁটি গেড়ে তিনি জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করছেন বলে ইজ়রায়েলের দাবি। হামলার পরে সাধারণ মানুষের রক্তস্রোত বইলেও ওই হামাস নেতার পরিচয় বা তিনি বেঁচে আছেন কি না, এ সব কিছুই ভেঙে বলেনি ইজ়রায়েল। তবে জানিয়েছে, সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘লায়ন’স ডেন’-এর প্রাক্তন সদস্য মেহমুদ বানাকে পশ্চিম ভূখণ্ডে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধরা পড়েছেন খলিল হানবালি নামে এক অস্ত্র ব্যবসায়ী। দু’জনেই জঙ্গি কার্যকলাপের ছক কষছিলেন বলে ইজ়রায়েলের দাবি।
যুদ্ধে ইজ়রায়েলকে বেগ দিচ্ছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজ়বুল্লা। এক নেতা জানিয়েছেন, ইজ়ারেয়েলি সেনা দক্ষিণ লেবানন থেকে সরলে তাঁরা নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)