ইজ়রায়েলের হানায় ধোঁয়ায় ঢেকেছে গাজা়র আকাশ। ছবি: রয়টার্স।
ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গালান্ত গত কাল হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন গাজ়া স্ট্রিপের চেহারাকে বদলে দেওয়া হবে। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গাজ়া সম্পূর্ণ ভাবে অবরুদ্ধ। পালেস্টাইনের হয়ে অস্ত্র ধরা হামাসকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে গাজ়ার বাসিন্দাদের হাতে ও ভাতে মারার কোনও পন্থাই বাদ রাখছে না ইজ়রায়েল সরকার। গাজ়ায় এ দিকে যেমন চলছে যুদ্ধবিমানের হানা, অন্য দিকে খাবার, বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আজ ঘোষণা করেছেন, ‘‘এই যুদ্ধ পশ্চিম এশিয়ার মানচিত্রকে পাল্টে দেবে।’’ হামাস হামলার পরে আজ প্রথম জনসমক্ষে এসে তিনি বলেন, “হামাস কী আমরা জানি। এখন ন বিশ্ব জানছে। হামাস হল আইএস।”
ইজ়রায়েল-হামাস রক্তক্ষয়ী সংঘাতে প্রাণহানিও বাড়ছে ঝড়ের গতিতে। রাত পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, ১৫০০-র বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এই মৃত্যু মিছিল কোথায় থামবে তা হয়তো কেউই জানে না।
হামাসের হামলার জবাব দিতে গত কালই সেই দেশের সেনাবাহিনীকে খোলাখুলি ছাড় দিয়েছিল ইজ়রায়েল সরকার। গত কাল রাত থেকে ইজ়রায়েলি যুদ্ধবিমানগুলি নির্বিচারে বোমা ফেলেছে গাজ়ায়। সূত্রের দাবি, কমপক্ষে হাজার জায়গায় হামলা চালিয়েছে বোমারু বিমানগুলি। ব্যবহার করা হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্রও। আজ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই অবরুদ্ধ করা হয় গাজ়াকে। বিরসেবায় ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)-এর সাদার্ন কমান্ডের দফতরে বসে গাজ়ার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন গালান্তে। পরে বলেন, ‘‘গাজ়াকে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছিলাম। তা করা হয়েছে। সেখানে বন্ধ করা হয়েছে বিদ্যুৎ, খাদ্য, জ্বালানি। আমরা মানবরূপী পশুর সঙ্গে লড়াই করছি এবং তারা যে ভাষা বোঝে, সেই ভাষাতেই জবাব দেওয়া হবে।’’
দেশের রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে আজ নেতানিয়াহু বলেন, ‘‘আমরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। হামাসকেও কঠিন ও ভয়ানক অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। আমরা যুদ্ধ-পরিস্থিতিতে রয়েছি, যা সবেমাত্র শুরু হয়েছে। আপনারা দৃঢ় ভাবে দেশের পাশে দাঁড়ান। আমরা পশ্চিম এশিয়াকে পাল্টে দিতে চলেছি।’’
জীবনধারণের জন্য প্রাথমিক ভাবে যে সব জিনিসপত্রের প্রয়োজন সেই গুলির জন্য ইজ়রায়েলের উপরে নির্ভরশীল গাজ়া। গাজ়া অবরুদ্ধ হওয়ায় সেখানকার ২৩ লক্ষ বাসিন্দার জীবনে অনিশ্চয়তা নেমে আসবে। লেবাননের একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আজ সকাল থেকেই গাজ়ার শহরগুলি কার্যত জনশূন্য। মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র এবং বোমা বিস্ফোরণের শব্দ। আইডিএফের দাবি, হামাসের ৫০০টি ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। হামাসের পাল্টা দাবি, নিরীহ মানুষকে নিশানা করছে ইজ়রায়েল। গুঁড়িয়ে গিয়েছে গাজ়ার বহু জনপদ। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যবহার করা হয়েছে হোয়াইট ফসফরাস বোমা। যা কিনা যুদ্ধাপরাধ। কিন্তু আমেরিকা, ব্রিটেন-সহ পশ্চিমি দেশগুলিকে পাশে পাওয়া ইজ়রায়েল কিছুকেই তোয়াক্কা করছে না। আকাশপথে হামলা চালানো হয়েছে গাজ়ার জাবালিয়ার ত্রাণ শিবিরে। যার জেরে মৃত্যু হয়েছে বহু শরণার্থীর। হামাস জানিয়েছে, ৬৮০ জন নিহত হয়েছেন ইজ়রায়েলি হামলায়। তার মধ্যে ৭৮টি শিশু ও ৪১ জন মহিলা। আহতের সংখ্যা তিন হাজারের কাছে।
ইজ়রায়েল সেনাবাহিনীর প্রধান মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি দাবি করেছেন, সে দেশের গাজ়া সীমান্ত লাগোয়া দক্ষিণাংশের ‘নিয়ন্ত্রণ’ তাঁদের হাতে। কিন্তু উত্তর এবং মধ্য ইজ়রায়েলে আজও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে হামাস। তাদের মুখপাত্র আবদেল-লতিফ-আল-কানৌয়া দাবি করেছেন, গাজ়ার বাইরে হামাস লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এবং আজ সকালে ইজ়রায়েলের কিছু জায়গা তাঁরা দখলে নিয়েছেন। সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন ইজ়রায়েল সেনার এক মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস । চলতি সংঘাতে ইজ়রায়েলের ৯০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে সে দেশের সংবাদমাধ্যম। আমেরিকার অন্তত তিন নাগরিক নিহত হয়েছেন। প্রাণ হারান এক ফরাসি নাগরিকও। ইজ়রায়েলকে সমর্থন জানিয়ে আমেরিকা পূর্ব ভূমধ্যসাগরে একটি বিমানবাহী রণতরী মোতায়েনের কথা ঘোষণা করেছে।
আজ সেনা জওয়ানদের সঙ্গে দেখা করেন ইজ়রায়েলের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেত্তা। এই পরিস্থিতির জন্য তিনি প্রকারান্তরে দায়ী করেছেন, নেতানিয়াহু সরকারকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy