Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
IS Militants

শিশুর মাংস খেতেও বাধ্য করেছিল আইএস জঙ্গিরা

২০১৪ সালের গ্রীষ্মকাল। ইরাকের সিনজ়ার শহর। সেখানে বাস কুর্দভাষী ইয়েজ়িদিদের। ফজ়িয়া সিদো তখন ন’-দশ বছরের বালিকা। তাদের শহর দখল করে ফেলল ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস।

সংবাদ সংস্থা
বাগদাদ শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০২
Share: Save:

সাক্ষাৎকার যিনি নিচ্ছিলেন, তিনি নিজে প্রাক্তন ব্রিটিশ সেনাকর্মী। সাধারণ ছাপোষা মানুষের থেকে অনেক বেশি নিষ্ঠুরতা দেখেছেন। দু’ঘণ্টার কথোপকথনে সেই তিনিও স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিলেন বার বার। কিন্তু আশ্চর্য শান্ত স্বরে বলে যাচ্ছিলেন বছর কুড়ির ফজ়িয়া।

২০১৪ সালের গ্রীষ্মকাল। ইরাকের সিনজ়ার শহর। সেখানে বাস কুর্দভাষী ইয়েজ়িদিদের। ফজ়িয়া সিদো তখন ন’-দশ বছরের বালিকা। তাদের শহর দখল করে ফেলল ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস। তার পরে তিন বছর ধরে শুধুই হিংসা, হত্যা আর অত্যাচার। রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট বলছে, অন্তত পাঁচ হাজার ইয়েজ়িদির মৃত্যু হয়েছে ওই সময়ে। ১১ হাজার ইয়েজ়িদি মহিলা, বালিকা অপহৃত হন। ফজ়িয়া ও তাঁর দুই ভাইকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল জঙ্গিরা। আরও অনেকের সঙ্গে গবাদি পশুর মতো তাড়িয়ে তাড়িয়ে তাদের নিয়ে গিয়েছিল তাল আফারে। তিন-চার দিন টানা হাঁটা। এক কণা খাবারও দেওয়া হয়নি কাউকে।

তাল আফার তখন আইএস-এর দখলে। পৌঁছে বলা হয়, খেতে দেওয়া হবে। দেওয়া হয়। ভাত আর মাংস। সেই মাংস অদ্ভূত খেতে। খেয়ে পেটে ব্যথা শুরু হয় কারও কারও। খাওয়া শেষ হলে জঙ্গিরা ছিন্নশির ইয়েজ়িদি শিশুদের ছবি দেখায়। বলে, সবাই যা খেয়েছেন, সেই মাংস এই শিশুদেরই। শুনে অসুস্থ হয়ে সেখানেই মৃত্যু হয় এক মহিলার। ছবির এক শিশুর ধড়ের হাত দেখে বন্দি মা চিনতেও পারেন, সেটি তাঁরই সন্তান।

সপ্তাহ দুয়েক আগে ফজ়িয়াকে গাজ়া থেকে উদ্ধার করেছে ইজ়রায়েলি সেনা ও আমেরিকান দূতাবাস। তার নেপথ্যে ছিলেন অ্যালান ডানকানও। গত জুলাইয়ে ইজ়রায়েলের মুষ্টিমেয় ক’জন ফজ়িয়ার কথা সামনে নিয়ে আসেন। ডানকান তাঁদের অন্যতম। ইজ়রায়েল সরকারকে ফজ়িয়াকে মুক্ত করে আনার জন্য তিনি চাপ দিয়ে গিয়েছেন। এক সময়ে ইকারি কুর্দদের সঙ্গে স্বেচ্ছায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন প্রাক্তন ব্রিটিশ সেনাকর্মী ডানকান। বর্তমানে তথ্যচিত্র নির্মাতা। মুক্ত হয়ে সিনজ়ারের বাড়িতে ফেরার পরে সম্প্রতি ফজ়িয়া তাঁর প্রথম সাক্ষাৎকার ডানকানকেই দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, আইএস জঙ্গিরা বন্দিদের মানুষের মাংস খেতে বাধ্য করে বলে আগেও অভিযোগ উঠেছিল। ইরাকি সাংসদের ইয়েজ়িদি সদস্যা ভিয়ান দাখিল ২০১৭ সালে বিষয়টি সামনে আনেন। ফজ়িয়ার মতোই কোনও
এক জনের অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছিলেন তিনি।

সাক্ষাৎকারে ফজ়িয়া বলেছেন, তাল আফার সেই বীভৎস ঘটনার পরে প্রায় ন’মাস শ’দুয়েক ইয়েজ়িদি মহিলা ও শিশুর সঙ্গে তাঁকে মাটির নীচে একটি জেলে বন্দি রাখা হয়। দূষিত জল খেয়ে সেই অন্ধকূপে কিছু শিশুর মৃত্যু হয়। মাঝে মাঝে জঙ্গিরা এসে একটু বড় মেয়েদের নিয়ে চলে যেত।

ন’মাস পরে ফজ়িয়াকে একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়, যেটা দেখে স্কুল বলে মনে হয়েছিল তাঁর। সেখান থেকে তাঁকে ও আরও চারটি মেয়েকে কিনে নেয় আবু মহম্মদ নামে একটি লোক। জোর করে সবার ধর্ম পরিবর্তন করানো হয়। ফজ়িয়াকে তুলে দেওয়া হয় এক জনের হাতে। লোকটা ধর্ষণ করে তাঁকে। ফজ়িয়ার বয়স তখন ১০-১১। তার পর থেকে পাঁচ বার বিক্রি হয়েছেন তিনি। প্রথমে এক জন সিরিয়ার বাসিন্দার কাছে, তারপর সৌদিতে। ফের সিরিয়া। শেষে গাজ়া। চলতি মাসের গোড়ায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছে। সংবাদ সংস্থা

অন্য বিষয়গুলি:

Bagdad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy