তেহরানে ইসলামিক আজ়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অন্তর্বাস পরে তরুণী। —ফাইল চিত্র।
ইরানের যে মহিলারা হিজাব পরতে চাইবেন না, তাঁদের জন্য বিশেষ ক্লিনিক তৈরি করা হচ্ছে সে দেশে। ইরানের নারী ও পরিবারকল্যাণ দফতর থেকে এ কথা জানানো হয়েছে। সেখানে ‘চিকিৎসা’ করা হবে হিজাব পরতে অনিচ্ছুক মহিলাদের। ইরানে এই ঘোষণার পর থেকে আরও জোরালো হতে শুরু করেছে প্রতিবাদের স্বর। যে ক্লিনিকের কথা বলা হচ্ছে সেটি আদৌ কোনও চিকিৎসাকেন্দ্র, নাকি কোনও গারদ? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিশ্ব জুড়ে।
ইরানে মহিলাদের পোশাকের ক্ষেত্রে কড়া ফতোয়া রয়েছে। সে দেশে মহিলাদের আবশ্যিক ভাবে মাথা ঢেকে রাখতে হয় হিজাবে। রাস্তায় বার হলে সবসময় ঢিলেঢালা পোশাক পরার নিয়ম। ইরানের প্রাক্তন ধর্মগুরু আয়াতোল্লা খোমেইনির পর বর্তমান ধর্মগুরু আলি খামেনেইও এই ফতোয়া জারি রেখেছেন। তা ভাঙলে কড়া শাস্তির বিধানও রয়েছে সে দেশে। তার পরেও হিজাব পরতে অনিচ্ছুকদের জন্য চিকিৎসাকেন্দ্র তৈরির উদ্দেশে নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি এই পোশাক ফতোয়ার প্রতিবাদে ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসলামিক আজ়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া আহু দারইয়াই প্রকাশ্যে অন্তর্বাস পরে হেঁটেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল ইরানের পুলিশ। পরে প্রশাসন থেকে জানানো হয়, তরুণী মানসিক ভাবে সুস্থ নন। তাঁকে এক মানসিক রোগের চিকিৎসাকেন্দ্রে রাখা হয়েছে বলে একাধিক সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে। এই আবহে ইরানে নতুন করে চিকিৎসাকেন্দ্র চালু করা ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
ইরানের ভিতরে এবং বাইরে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। ইরানের এক মানবাধিকার কর্মী হোসেন রইসি জানিয়েছেন, ধর্মীয় নিয়ম বা ইরানের আইন কোথাও এই ধরনের কোনও চিকিৎসাকেন্দ্রের কথা বলা নেই। ইরানের নারী ও পরিবারকল্যাণ দফতরের উপর সে দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলি খামেইনির সরাসরি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বলেও দাবি রইসির। এই চিকিৎসাকেন্দ্রের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সে দেশের মহিলারাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণীর ভয়, “এটি কোনও চিকিৎসাকেন্দ্র হবে না। এটি একটি জেল। দেশে এত কিছু সমস্যা রয়েছে। আর প্রশাসন শুধুমাত্র পোশাক নিয়েই চিন্তিত। এর বিরুদ্ধে সকলকে সমস্বরে প্রতিবাদে শামিল হতে হবে।”
ইরানের নারী ও পরিবার কল্যাণ দফতরের দাবি, হিজাব পরতে অনিচ্ছুক মহিলাদের ‘বিজ্ঞানসম্মত এবং মনস্তাত্ত্বিক’ চিকিৎসা হবে এই ক্লিনিকগুলিতে। সেখানে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে বলেও দাবি ইরানের প্রশাসনের। দফতরের প্রধান মেহরি তালেবির বক্তব্য, যাঁরা হিজাব পরতে চান না, তাঁদের অনেক ধরনের সামাজিক চাপের মুখে পড়তে হয়। সেই কারণে এই চিকিৎসাকেন্দ্রগুলি খোলা হচ্ছে। এখানে মহিলাদের ‘মানসিক বিকাশে’ এবং ‘রুচিশীল পোশাক’ বেছে নিতে সাহায্য করা হবে।
তেহরানের ওই তরুণীকে ইরানের নীতি পুলিশ গ্রেফতার করার পরেই সে দেশের মানসিক রোগের চিকিৎসাকেন্দ্র নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তাদের বক্তব্য, ইরানের মানসিক হাসপাতালগুলিতে বন্দিদের উপর অত্যাচারের ইতিহাস অনেক পুরনো। অনেক প্রতিবাদী এবং রাজনৈতিক বন্দিকে ‘মানসিক রোগী’র তকমা দিয়ে ওই সমস্ত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পর সেখানে অকথ্য অত্যাচার চলে বলে অভিযোগ। বিদ্যুতের শক দেওয়া, হাত-পা বেঁধে মারধর এমনকি বিষাক্ত রাসায়নিক প্রয়োগ করার মতো দৃষ্টান্তও রয়েছে বলে দাবি অ্যামনেস্টির। তারা জানিয়েছে, সেই সংক্রান্ত প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে।
২০২২ সালে ইরানি তরুণী মাহসা আমিনিকেও হিজাব না পরার ‘অপরাধে’ তুলে নিয়ে গিয়েছিল ইরানের নীতি পুলিশ। ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। মাহসার মৃত্যুর পর গোটা ইরানে যখন প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গিয়েছিল, সেই সময়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল প্রতিবাদী এক কুর্দিশ র্যাপারকে। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় তেহরানের আমিনাবাদ মনোস্বাস্থ্যকেন্দ্রে। গত মাসে সেখান থেকে ছাড়া পেয়েছেন তিনি। অভিযোগ, স্বীকারোক্তি আদায়ের দাবিতে মানসিক হাসপাতালের ভিতরে অকথ্য অত্যাচার করা হয় ওই র্যাপারের উপর। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ‘‘ক্রুশবিদ্ধ যিশুর ভঙ্গিমায় বিছানার উপর হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছিল তাঁর। কড়া ডোজ়ের ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয় তাঁকে। অচেতন অবস্থাতেও তাঁর বাঁধন খোলা হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy