ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল চিত্র।
চোখে জল আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের। মার্কিন হানায় জেনারেল কাসেম সোলেমানি খুনের প্রতিশোধ চেয়ে গত শুক্রবার থেকেই ফুঁসছেন তিনি। কাল সোলেমানির কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। ‘শ্যাডো কমান্ডারের’ শেষকৃত্য তখন ইরানের সরসারি টিভিতে ‘লাইভ’। গোটা দুনিয়া দেখছে। আর সেখানেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাথার দাম ঠিক করে দিল তেহরান— ৮ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫৭৬ কোটি টাকা)। ঘোষণা হয়ে গেল, এ জন্য প্রত্যেক ইরানিকে ১ ডলার করে দিতে হবে। যে মারবে, ৮ কোটির পুরোটা তার! কালই আবার পার্লামেন্টের জরুরি বৈঠক শেষে ২০১৫-র পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার কথা ঘোষণা করল তেহরান। এ দিকে জামকরন মসজিদের মাথার উপর আজও উড়তে দেখা গিয়েছে ইরানের ‘যুদ্ধ নিশান’ ওই লাল পতাকা।
সমানে-সমানে টক্কর দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্পও। ইরানে ‘মার্কিন দাদাগিরির’ প্রতিবাদে গত কাল তাঁর নিজের দেশেরই ৮০টি শহরে মিছিল হয়েছে। হাউসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি আজ জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহেই ‘যুদ্ধবাজ শক্তির ঘোষণাপত্র’ এনে ভোটাভুটি হবে কংগ্রেসে। উদ্দেশ্য, ট্রাম্পকে আটকানো। মার্কিন আগ্রাসনের নিন্দায় সরব বেজিংও। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তবু ইরানের ‘৫২ টার্গেট’ ধ্বংসে অনড়ই।
২০১৮ থেকেই ট্রাম্প আর তেহরানের টানাপড়েন চরমে উঠেছে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে রাশ টানতে ২০১৫-য় ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চিনকে সঙ্গে নিয়ে ইরান পরমাণু চক্তিতে সই করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বিনিময়ে ইরানের উপর থেকে দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞার অনেকটাই তুলে নেয় আমেরিকা। কিন্তু এই চুক্তি ‘ত্রুটিপূর্ণ এবং একপেশে’ দাবি করে ২০১৮-র মে মাসে চুক্তি ছেড়ে বেরিয়ে যান ট্রাম্প। ফের নিষেধাজ্ঞা চাপে ইরানের উপর। এর পরেই নিজেদের উপস্থিতি ফের জানান দিতে শুরু করে সোলেমানির কাডস বাহিনী।
এই ‘পরিকল্পিত’ খুনের বদলা নিতেই সোলেমানির শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান থেকেই তেহরান জানাল— ‘‘তোমরা অন্যায় ভাবে সেনাপ্রধানকে মেরেছ, আমরাও তাই আর চুক্তির শর্ত মানতে বাধ্য নই।’’ বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে ট্রাম্প আগেই ভেন্টিলেশনে পাঠিয়েছিলেন পরমাণু চু্ক্তিকে। ইরানের ঘোষণায় সেটির মৃত্যু হল।
চুক্তির পরিণতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এ দিন তাঁরা যৌথ বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘উত্তেজনা কমিয়ে আঞ্চলিক স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আমরা সব পক্ষের সঙ্গেই আলোচনায় বসতে রাজি।’’ ইরানের চুক্তি ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও।
ইরান কিন্তু বদলার দাবিতেই সুর চড়াচ্ছে। সরাসরি হোয়াইটে হাউসে হামলার হুমকি দিয়ে ইরানের এমপি আবলফজ়ল আবোতরাবি কাল বলেন, ‘‘ওদের দেশেই আমরা ওদের জবাব দিতে পারি। সে ক্ষমতা আমাদের আছে। সময় হলেই আমেরিকা সেটা টের পাবে।’’ চোখের জল মুছে বাবার শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান থেকে ট্রাম্পকে ‘উন্মাদ’ বললেন সোলেমানি-কন্যা জ়েনাবও। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘আমার বাবা শহিদ হওয়া মানেই সব শেষ, এটা ভেবে থাকলে বড় ভুল করবেন।’’
এ দিকে ইরান-আমেরিকার উত্তেজনার আঁচ পড়ল ইরাকেও। ইরাকের মাটিতে আমেরিকা বা অন্য কোনও দেশর সেনা থাকতে পারবে না— এই মর্মে গত কালই একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে ইরাকের পার্লামেন্টে। এর পাল্টা আরও বড়সড় নিষেধাজ্ঞা চাপানোর হুমকি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাফ জানিয়ে দিলেন, ইরাকে ঘাঁটি তৈরির অর্থ ফেরত না-দিলে কোনও ভাবেই সেখান থেকে সেনা সরাবেন না তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy