আওয়ামী লীগের ইস্তাহার বিলি করলে গ্রেফতার করা হবে বলে ঘোষণা করল বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার। শনিবার থেকে পাঁচ দিন দেশ জুড়ে ইস্তাহার বিলির কর্মসূচি নিয়েছে গণঅভ্যুত্থানে দেশছাড়া প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ। তাদের বহু নেতা-কর্মীকে ইতিমধ্যেই ধরপাকড় করছে ইউনূস সরকারের পুলিশ। এর মধ্যেই সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, “তাঁরা (আওয়ামী লীগ) অনলাইনে অপতথ্য ছড়াচ্ছেন। এই সরকারকে নিয়ে ভুয়ো তথ্য ছড়াচ্ছেন। পতিত স্বৈরাচারীকে তাঁরা এখনও প্রধানমন্ত্রী বলছেন। এগুলো আমরা দেখছি। আমাদের কড়া বার্তা, যাঁরা এই সব লিফলেট বিতরণ করবেন, এই ধরনের কর্মসূচিতে যাবেন, তাঁদের গ্রেফতার করা হবে।”
এই ঘোষণার পরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম টেলিফোনে বলেন, “কে একটা প্রেস সচিব এ সব কথা বলার কে? এই লোকটার হাবভাব যেন সে-ই দেশের সরকার প্রধান। আর দেশের মানুষ তাকে এখন ‘মিস্টার ডাস্টবিন’ বলে ডাকছে। তাঁর কথার কোনও গুরুত্ব নেই।”
ঢাকায় শনিবার শুরু হওয়া একুশের বইমেলায় কোটা-বিরোধী ছাত্ররা কিছু ডাস্টবিন বসিয়েছে, যার গায়ে হাসিনার ছবি আঁকা। প্রথম দিনে নানা ভঙ্গিমায় সেই ডাস্টবিনে দলা পাকানো কাগজ ফেলে তার বেশ কয়েকটি ছবি নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন শফিকুল। এক জন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মীর রাজনৈতিক নেতার মতো এই আচরণ ‘কুরুচিকর’
বলে নেটিজ়েনরা হইচই করলে শফিকুল সেই পোস্ট সরিয়ে নেন। এর পরেই একের পর এক
বাণ ছুটে আসে ইউনূসের এই
সচিবের বিরুদ্ধে। প্রামাণ্য ছবি দিয়ে নেটিজ়েনরা সমাজমাধ্যমে দাবি করেন, আগের আওয়ামী আমলে শফিকুল কখনও মুজিব কোট গায়ে দিয়ে নিজেকে ‘সাচ্চা মুজিববাদী’ প্রমাণ করতে চেয়েছেন, কখনও আওয়ামী লীগের প্রতীকের সামনে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে বার্তা দিতে চেয়েছেন, ‘আমি তোমাদের লোক’। তাঁদের দাবি, এই শফিকুলই এখন হাওয়ার গতি বুঝে শেখ হাসিনার ছবি আঁকা ডাস্টবিনে তাঁর বাতিল কাগজ ফেলার ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করছেন। এর পরেই সমাজমাধ্যমে শফিকুলকে ‘মিস্টার ডাস্টবিন’ বলে ডাকা হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা নাম গোপনের শর্তে বলেন, “সরকারের সমালোচনা করব না সিদ্ধান্ত হওয়ায় দলীয় ভাবে কিছু বলা হচ্ছে না। কিন্তু শফিকুলের এই ঘোষণায় অকারণে হিরো করে দেওয়া হল আওয়ামী লীগকে। আরও একটি অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত সরকারের।” এই বিএনপি নেতার দাবি, আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা নেই। মানুষ তাদের গুরুত্বই দিচ্ছে না। এই ঘোষণার পরে ওই দলের নেতারা বলতে পারবেন, ইউনূস সরকার আমাদের কর্মসূচিতে
ভয় পেয়েছে।
হাসিনা-উৎখাত আন্দোলনের শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “আওয়ামী লীগ তো নিষিদ্ধ দল নয়, তবে কেন গ্রেফতার? এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকার রাজনৈতিক স্তরে একটা আলোচনা করে নিলে ভাল হয়।” সাইফুলের কথায়, “১৬ বছরের অপকর্ম, দুর্নীতি, স্বৈরাচার, গুম-খুনের জন্য আওয়ামী নেতৃত্বের তরফে ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা, দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে বলেও শুনিনি। এটা ছাড়া তাদের কোনও কর্মসূচিই মানুষ মানবেন না।”
আওয়ামী লীগ অবশ্য দাবি করেছে, সরকারি দমনপীড়ন অগ্রাহ্য করে তাদের কর্মসূচিতে অভাবনীয সাড়া মিলেছে। ১৬ তারিখে ‘বিশ্ব ইজ়তেমা’-র কারণে তাদের অবরোধ কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। তার বদলে ১৭ তারিখে দেশ জুড়ে মশাল মিছিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কর্মীদের। ১৮ ফেব্রুয়ারি হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)