শেখ হাসিনা। — ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হয়ে কার্যত নিজ দেশে ভারত-বিরোধী ‘রাজনৈতিক ভাষ্য’ তৈরি করতে চাইছে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এমনটাই ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছে সাউথ ব্লক। বিদেশ মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, এগুলি করা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক গ্যালারিকে বার্তা দিতে। রেড কর্নার নোটিস দিলেই যে ভারত থরহরি কম্প হয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেবে এমন বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা আদৌ নেই। বরং এই সময়ে দাঁড়িয়ে এই কথাই ঢাকাকে মনে করিয়ে দিতে চাইছেন কূটনীতিকেরা, দেশের অর্থনীতিকে কোণঠাসা অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনতে এবং ভবিষ্যতের ধাক্কা সামলাতে ভারতের সঙ্গে বাস্তবোচিত সম্পর্ক তৈরি করা উচিত। নয়াদিল্লির উপর রাজনৈতিক চাপ বাড়ানোর নীতি নিলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সুরাহা হবে না।
আপাতত বিদ্যুৎ বকেয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রবল চাপে রয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। বকেয়া ৮৪.৬ কোটি ডলার পরিশোধ না করায় চলতি মাসের প্রথম থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ৬০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছিল আদানি গ্রুপ। একই সঙ্গে ৭ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া না মেটালে সরবরাহ বন্ধ করার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। এই অবস্থায় দেশকে আঁধারে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচাতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ১৭.৩ কোটিডলারের একটি নতুন লেটার অব ক্রেডিট জারি করেছে। অর্থাৎ, বকেয়ার কিছু অংশ মেটাতে পেরেছে। এখনও অনেকটাই বাকি। কিন্তু শুধু বিদ্যুৎ ক্ষেত্রেই নয়, অন্য অনেক অর্থনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বড় পুঁজির প্রকল্পে ভারতের উপর নির্ভরশীল ঢাকা, যা গত কয়েক দশকে সে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। গত কয়েক বছরে ভারত প্রায় ৮০০ কোটি ডলার নামমাত্র সুদে ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশকে। এ ছাড়া অনুদান দিয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পে। যার মধ্যে রয়েছে সড়ক, রেল, সেচ, নৌ বন্দরের মতো ক্ষেত্র। ওষুধ এবং খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রেও ভারত-নির্ভরতা যথেষ্ট।
সাউথ ব্লকের হিসাব, ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১৬০০ কোটি ডলার। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছে শক্তিক্ষেত্রে সহযোগিতা। পাশাপাশি অয়েল ইন্ডিয়া এবং ওএনজিসি বিদেশ লিমিটেড যৌথ মঞ্চ তৈরি করে সে দেশের উপকূলবর্তী এলাকায় তেল নিষ্কাশনে বড় ভূমিকা নিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, এই মুহূর্তে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। পাইপলাইনে ভারত থেকে বাংলাদেশে হাই স্পিড ডিজেল পরিবহণ উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়, খাদ্য নিরাপত্তা, শক্তি ক্ষেত্রে নিরাপত্তার মতো ফি বছর লেগে থাকা সঙ্কটে নাস্তানাবুদ বাংলাদেশের অর্থনীতি। সূত্রের বক্তব্য, এই ক্ষেত্রগুলিতে ভারতের সহায়তা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সামলাতে খুবই জরুরি এখন। শেখ হাসিনার সময়েই বৈদেশিক ঋণের পাহাড় জমেছে। সর্বশেষ পাওয়া সরকারি তথ্য অনুযায়ী জাপানের কাছ থেকে ৯২১ কোটি ডলার, রাশিয়ার থেকে ৫০৯ কোটি, চিনের থেকে ৪৭৬ কোটি এবং ভারতের থেকে ১০২ কোটি ডলারের ঋণ বাংলাদেশের। বাস্তবে ঋণ আরও বেশি। তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৫৬৩ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে। আওয়ামী জমানার এই ঋণের কিস্তি শোধ করতে হবে এই সরকারকে।
পরিস্থিতি এমন দিকে যাচ্ছে যা সামাজিক ভাবে নৈরাজ্যের জন্ম দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ-সহ কাঁচা বাজারেও মূল্যবৃদ্ধি আকাশ ছোঁয়া। বাংলাদেশ আর্থিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়লে তা ভারত তো বটেই গোটা দক্ষিণ এশিয়ার পক্ষেই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। দিল্লির মতে, এই কোণঠাসা পরিস্থিতিতে ভারতকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা না করে বরং ভারতের সহায়তা নিয়েই অর্থনীতিকে কিছুটা চাঙ্গা করা লক্ষ্য হওয়া উচিত ইউনূস সরকারের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy