ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ফাইল ছবি।
মাত্র ছ’মাস আগেই নয়াদিল্লি এসে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বিস্তারিত বৈঠক করেছিলেন ফ্রান্সের বিদেশমন্ত্রী এবং সে দেশের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকঁর-র বিশেষ আস্থাভাজন ক্যাথরিন কোলোনা। বৈঠকের পরে ক্যাথরিন বলেছিলেন, চিনের আক্রমণাত্মক মনোভাব সম্পর্কে ভারত এবং ফ্রান্সের এক আশ্চর্য মিল রয়েছে। তাঁর কথায়, “আমরা জানি চিন কী ভূমিকা পালন করছে। আমরা এটা নিশ্চিত করতে চাই যে, চিন যেন অঞ্চলের (ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয়) ভারসাম্য নষ্ট করতে না পারে।”
ভারত কিছুটা উদ্বেগের সঙ্গেই লক্ষ্য করছে, ফ্রান্সের চিন-নীতিতে তারতম্য ঘটেছে। শুধু ফ্রান্সই নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অনেক দেশই গত একমাসে চিন অভিমুখী। যেন সফরের ঢল নেমেছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লেয়েন এই মুহূর্তে বেজিংয়ে। সম্প্রতি তিনি ব্রাসেলসে একটি বক্তৃতায় ইউরোপের ভবিষ্যৎ বাণিজ্য-দিশা তৈরি করে দিতে চেয়ে বলেছেন, চিনের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ইউরোপের জন্য ক্ষতিকর। বরং চিনের সঙ্গে সম্পর্কে যা যা ঝুঁকি বা বিপদের দিক রয়েছে, সেগুলি কমিয়ে আনতে হবে।
গত কালই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ বৈঠক করেছেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে। ইউক্রেন যুদ্ধ কী ভাবে থামানো যায়, সে নিয়ে কথা বলেছেন। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ় নভেম্বরে চিনে গিয়েছিলেন। ডিসেম্বরে ইউরোপীয় কাউন্সিলের কর্তা শার্ল মিশেল যান সে দেশে। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ়ও গত সপ্তাহে বেজিং সফর করেছেন। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, ইউরোপের নেতাদের চিনে এত বার সফরের একাধিক উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত, রাশিয়াকে ক্রমাগত সামরিক সাহায্য জোগানো থেকে বেজিংকে বিরত রাখা। ইউরোপের ধারণা, চিন যদি তার যুদ্ধ সরঞ্জাম নিয়ে পুরোপুরি ভাবে রাশিয়ার পাশে দাঁড়ায়, খুব বড় মাপের সংঘাত ও সঙ্কট এড়ানো যাবে না। দ্বিতীয়ত, যে ভাবে মস্কো বেজিংয়ের উপর ঝুঁকে পড়ছে, তা ইউরোপের কৌশলগত স্বার্থের জন্যও সহায়ক নয়। বরং চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ালে রাশিয়ার সঙ্গে প্রয়োজনীয় দর কষাকষি করতে পারবে ইউরোপ। তৃতীয়ত, আমেরিকা ও চিনের ভূ-রাজনৈতিক এবং বাণিজ্য যুদ্ধের শরিক যে ইউরোপ হতে চায় না, সেই বার্তাও জিনপিংকে দিতে চাইছে ইউরোপীয় কমিশন। কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, এটা ভুললে চলবে না যে, ইইউ এবং চিনের মধ্যে রয়েছে ৯০ হাজার কোটি ডলার বাণিজ্য ও পরিষেবা চুক্তি।
বিষয়টি সাউথ ব্লকের কাছে চিন্তার। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, কোয়াড বা আমেরিকার নেতৃত্বাধীন চতুর্মুখী অক্ষের সদস্য না হলেও ফ্রান্সের স্বার্থ জড়িয়ে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগারীয় অঞ্চলকে ঘিরে। এখানে ফরাসি দ্বীপগুলি রয়েছে, যা নৌ বাণিজ্য পরিবহণের অন্যতম স্পর্শকাতর এলাকাও বটে। ভারত এ-ও খেয়াল করেছে যে, মাকরঁর সঙ্গে চিন সফরে গিয়েছেন বেশ কিছু সাইবার নিরাপত্তা সংস্থার কর্তারা। তাদের সঙ্গে চিনের চুক্তি ভারতের জন্য অনুকূল না-ও হতে পারে। চিন ভারতের অন্যতম বড় বাণিজ্য অংশিদার এবং সেই সঙ্গে কৌশলগতক্ষেত্রে খুব বড় চ্যালেঞ্জও বটে। ফলে ফ্রান্স তথা ইউরোপের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলে তা ভারত এবং ইউরোপের সম্পর্কে বদল আনতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy