রাজনৈতিক সঙ্কটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় সরকার-সমর্থক ও বিরোধীদের সংঘর্ষে তছনছ সংগ্রহশালাও। মাটিতে পড়ে শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের বাবা ডি এ রাজাপক্ষের মূর্তি। বুধবার বীরাকেটিয়ায়। ছবি: পিটিআই।
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় এখন গুজব উড়ছে হাওয়ার চেয়েও দ্রুত গতিতে। গত কাল প্রাণ বাঁচাতে দেশের সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে নিজের বাড়ি ছেড়ে পরিবার সমেত নৌসেনা ঘাঁটিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তার পর থেকেই খবর রটতে শুরু করে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন রাজাপক্ষে। যা নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে। গত কাল রাতেই শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের তরফে টুইট বার্তায় জানানো হয়, দেশের কোনও রাজনীতিকই তাঁর পরিবার নিয়ে পড়শি দেশে আশ্রয় নেননি। এই খবর সম্পূর্ণ ভুয়ো।
আজ সকালে ফের গুজব ছড়ায় যে, বিক্ষোভে রাশ টানতে শ্রীলঙ্কায় সেনা পাঠাচ্ছে ভারত সরকার। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জানানো হয়, এই খবরও ভুয়ো। ভারত সরকার শ্রীলঙ্কায় কোনও সামরিক বাহিনী পাঠাচ্ছে না। তারা বিশ্বাস করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরবে শ্রীলঙ্কায়। শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষামন্ত্রী কমল গুণরত্নে আজ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মাহিন্দা রাজাপক্ষে ও তাঁর পরিবার সুরক্ষিত রয়েছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগামী কাল পর্যন্ত গোটা দেশে কার্ফু জারি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গোতাবায়া রাজাপক্ষে সরকার। টুইটের মাধ্যমে আজ ফের দেশের মানুষকে শান্ত ও সংযত থাকতে অনুরোধ করেছেন প্রেসিডেন্ট। সমাজে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনও প্ররোচনায় পা না দিতেও সাধারণ মানুষের কাছে আর্জি জানান তিনি।
গত কালের তুলনায় আজ দেশের পরিস্থিতি মোটামুটি শান্ত ছিল। রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভের চেনা ছবি তেমন দেখা যায়নি। তার একটা বড় কারণ, রাজধানী কলম্বো-সহ সব বড় শহরে টহল দিচ্ছে সেনার ট্যাঙ্ক ও বাইক বাহিনী। সরকারি সম্পত্তি ও সাধারণ মানুষের প্রাণ রক্ষা করতেই সেনা নামানোর সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে সরকার। অশান্তি এড়াতে গত কালই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে সেনা, বায়ুসেনা ও নৌসেনাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কেউ সরকারি সম্পত্তি বা জীবনহানির চেষ্টা করলেই দেখা মাত্র যেন গুলি করা হয়। এই নির্দেশের পরে কিছুটা হলেও দেশ জুড়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন প্রশমিত হয়েছে।
তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, গত দু’দিনের অশান্তি ও সংঘর্ষে ৪১টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ১৩৬টি লুটপাটের ঘটনার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এই ক’দিনে শাসকদলের অজস্র নেতার বাড়িতে হামলা হয়েছে। তবে অমরকীর্তি নামে যে এমপি-র গুলিবিদ্ধ দেহ গত পরশু উদ্ধার হয়েছিল, তিনি উন্মত্ত জনতার হাত থেকে বাঁচতে নিজেই আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। গুলিবিদ্ধ দেহ মিলেছে তাঁর গাড়ির চালকেরও। আজ অবশ্য নতুন করে হতাহতের কোনও খবর মেলেনি। গত কয়েক দিনের হিংসার তদন্তে মাহিন্দা রাজাপক্ষের মুখ্য নিরাপত্তা অফিসারকে আজ তলব করেছিল কলম্বো পুলিশ। গোটা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাশেলে। শান্তি রক্ষার আর্জি জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিসও।
মাহিন্দা রাজাপক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ায় কয়েক দিনের মধ্যেই পার্লামেন্টের অধিবেশন ডাকার কথা জানিয়েছিলেন স্পিকার। কিন্তু এ বিষয়ে জট এখনও কাটেনি। প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আহ্বানে সাড়া দিতে নারাজ বিরোধী দলগুলি। দেশের বৃহত্তম বিরোধী দল এসজেবি এখনও অনড়, রাজাপক্ষে পরিবার সরকারে থাকলে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ হবে না। এই পরিস্থিতিতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর পি নন্দলাল বীরসিঙ্ঘে আজ প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষকে দু’সপ্তাহ সময় দিয়েছেন। তার মধ্যে রাজনৈতিক সঙ্কট না কাটলে তিনি ইস্তফা দেবেন বলে জানিয়েছেন। আজ রাতেই প্রেসিডেন্ট অবশ্য জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই নতুন ক্যাবিনেট গঠন করা হবে এবং তাঁর আশ্বাস, সেখানে রাজাপক্ষে পরিবারের কোনও সদস্য থাকবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy