Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Bangladesh Protest

বাংলাদেশের পাশে থাকলেও আগ বাড়িয়ে সমর্থন নয়

দীর্ঘ সীমান্তের ভাগীদার এই প্রতিবেশী রাষ্ট্রে অস্থিরতা নয়াদিল্লির জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে উদ্বেগের কারণ তো বটেই। পড়ুয়াদের প্রতিবাদ-আন্দোলনের মধ্যে কিছু ‘নন স্টেট অ্যাক্টরও’ মিশে রয়েছে বলে খবর এসেছে ভারতের কাছে।

উত্তপ্ত বাংলাদেশ।

উত্তপ্ত বাংলাদেশ। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৪ ০৮:১৯
Share: Save:

বিদেশ সচিবের দায়িত্ব পাওয়ার পরে প্রথম বিদেশ সফরে আজ ভুটান গিয়েছেন বিক্রম মিশ্রি। কিন্তু বিদেশ মন্ত্রকের সতর্ক নজর এখন বাংলাদেশের দিকে। সে দেশের সমস্যা এখন বহুস্তরীয় এবং জটিল বলেই মনে করা হচ্ছে।

দীর্ঘ সীমান্তের ভাগীদার এই প্রতিবেশী রাষ্ট্রে অস্থিরতা নয়াদিল্লির জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে উদ্বেগের কারণ তো বটেই। পড়ুয়াদের প্রতিবাদ-আন্দোলনের মধ্যে কিছু ‘নন স্টেট অ্যাক্টরও’ মিশে রয়েছে বলে খবর এসেছে ভারতের কাছে। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হলেই, আইএসআই-এর মদতপ্রাপ্ত জামাতের দিকে আঙুল তোলার আওয়ামী লীগের ‘প্রবণতা’কে এ বার চোখ বুজে মানতে চাইছে না নয়াদিল্লি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই মানতে না চাওয়ার পিছনেও রয়েছে কূটনৈতিক দেনা-পাওনার সমীকরণ। শেখ হাসিনা সরকারের সাম্প্রতিক চিনা তাস খেলা, তিস্তা মহাপ্রকল্প নিয়ে চিনের আগ্রহের কথা সামনে নিয়ে আসা, এবং সর্বোপরি শেখ হাসিনার কিছু মন্ত্রীর চিনপন্থী প্রবণতাকে তির্যক ভাবেই দেখছে ভারত। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লি ঢাকার পাশে থাকার বার্তাই দিয়েছে। সেই সঙ্গে নিজেদের কিছু ‘দাবি তালিকাও’ পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে আওয়ামী লীগ শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে।

পাশাপাশি এটাও মাথায় রাখা হচ্ছে, এই মুহূর্তে আগ বাড়িয়ে প্রকাশ্যে হাসিনা সরকারের পাশে দাঁড়ালে (বা সে দেশের সেনার সঙ্গে সরাসরি সমন্বয় করলে) ছাত্রসমাজ তথা বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছে ভুল বার্তা গিয়ে হিতে বিপরীত হতে পারে। তবে সূত্রের খবর, ঢাকা নেতৃত্বের ও নিরাপত্তা সংস্থার বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত করতে ভিতর থেকে চেষ্টা চলছে। যদিও এই নিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘‘একে সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখছি।’’

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, বাংলাদেশে হিংসা এবং আইনশৃঙ্খলার চূড়ান্ত অবনতি শুধু সে দেশেরই বিষয় হতে পারে না। তার প্রভাব ভারতের জন্য মঙ্গলজনক নয়। বাংলাদেশে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ও জি২০-র প্রধান সমন্বয়কারী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, “বাংলাদেশে যে ভাবে অস্থিরতা বেড়ে চলেছে, তা খুবই উদ্বেগের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, বিষয়টি কোর্টের বিচারাধীন ও আশা করা যায়, কোর্ট দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। বিষয়টি আরও জটিল হয়েছে কারণ, কিছু ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে ‘নন-স্টেট অ্যাক্টর’রা মিশে গিয়ে হিংসাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। এখন প্রয়োজন হিংসা নিয়ন্ত্রণ করে পরিস্থিতি শান্ত করা ও ছাত্র সম্প্রদায়ের প্রকৃত উদ্বেগ নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা। কিছু প্রশাসনগত বিষয়েও কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি প্রয়োজন।’’ কূটনৈতিক শিবিরের একাংশের দাবি, সম্প্রতি দু’বার ভারতে ঘুরে যাওয়া শেখ হাসিনা এই জটিল পরিস্থিতিতে নিজের সরকারকে সুরক্ষিত রাখতে, পশ্চিমের সমালোচনাকে প্রতিহত করতে, রাজনৈতিক সমর্থনের জন্য ভারতের দিকে তাকাতে ‘বাধ্য’। ভারত সে দেশের নিরাপত্তা সংস্থা এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ব্যক্তি ও সংস্থার সঙ্গে আগাগোড়া যোগাযোগ রেখেছে। ‘নন-স্টেট অ্যাক্টর’রা যাতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধিতার সঙ্গে ভারত-বিরোধিতাকেও একই বন্ধনীতে আনতে না পারে, সে দিকেও নজর রাখা হচ্ছে।

সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সরকারি কাঠামোয় কিছু সংস্কারের পরামর্শ (অর্থাৎ চিনাপন্থী মন্ত্রীদের সরানো) দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে সাউথ ব্লক। ওই সূত্রের বক্তব্য, পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে শেখ হাসিনার প্রয়োজন তাঁর মন্ত্রী ও বাহিনীর কিছু অদলবদল করা। মনে করা হচ্ছে, দেশের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ হাসিনা সরকারের আগেই আঁচ করা উচিত ছিল। অসন্তোষ শুধু কোটা সংস্কারের দাবিকে ঘিরে নয়। দেশের ক্রমশ শ্লথ অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতির মতো বিষয়গুলিকেও গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন ছিল, আছে। নয়তো আজ পরিস্থিতি সামলে নিলেও কাল অন্য কিছু নিয়ে অশান্তি হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE