গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত ও চিনের মধ্যে যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, তা কি আরও বাড়তে চলেছে? চেহারা নেবে কোনও যুদ্ধের? নাকি এই উত্তেজনা থিতিয়ে যাবে অচিরেই? এই সব প্রশ্নে আপাতত বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলি দ্বিধাবিভক্ত। সহমতে পৌঁছতে পারেননি বিশেষজ্ঞদেরও একাংশ।
কেউ বলছেন, নিজের নিজের দেশের মানুষের ভাবাবেগের কথা মাথায় রাখতে গিয়ে এখনই উত্তেজনা থিতিয়ে নিয়ে যাওয়ার রাস্তায় না-ও হাঁটতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। আবার কেউ বলছেন, করোনা সংক্রমণের জেরে দু’টি দেশই যে ভাবে ব্যাতিব্যস্ত, তাতে এই মুহূর্তে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিটা কেউই নিতে চাইবে না। তবে উত্তেজনাও চট করে থিতিয়ে যাবে না।
কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ ১৯৫৯ সালের ঘটনা মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন। তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু বেজিংয়ের সঙ্গে সমস্যা কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নিতে চাইলেও পরে জনমতের চাপে কী ভাবে ‘এগিয়ে চলার নীতি (ফরওয়ার্ড পলিসি)’ নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
“সেই নীতির পরিণতি ভাল হয়নি। ১৯৬২-তে চিনের সঙ্গে বড় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল ভারত। তাতে অনেক খেসারতও দিতে হয়েছিল নেহরুর দেশকে’’, বলেছেন চিন বিশেষজ্ঞ তনভি মদন।
আরও পড়ুন- হোঁচট খেলে হাত টেনে ধরার লোক পায়নি সুশান্ত, লিখলেন সুজিত সরকার
আরও পড়ুন- ‘আমি যদি তোমার ভেঙে যাওয়া মনটাকে জোড়া দিতে পারতাম... ’
সংঘর্ষে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চিনেরও ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার খবর মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের নাগরিকদের ভাবাবেগটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যে কোনও রাষ্ট্রপ্রধানের কাছেই। গলওয়ান উপত্যকায় চিনের সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয়টি সে দেশের নাগরিকদের কাছেও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই এখনই পিছিয়ে আসাটা বেজিংয়ের পক্ষেও কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিউ ইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ক্রিস্টোফার ক্ল্যারি। মার্কিন দৈনিক ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’-এ প্রকাশিত তাঁর নিবন্ধে।
তাঁর কথায়, “ভারত কী করবে, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। বিশ্বে ভারত শক্তিশালী হয়ে উঠছে, এটা বোঝাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতের বিদেশনীতিকে কিছুটা আগ্রাসী করে তুলতে চাইছে। করে তুলেছেও। দেশে জঙ্গি হানাদারির পর পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতের বিমান-হানার মধ্যেই তার ছাপ স্পষ্ট হয়ে যায়। সেই বিমান-হানার নির্দেশ দিয়েছিলেন মোদীই। যা যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল দু’দেশের মধ্যে।’’
তবে ভারত এখন চিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি নিতে চাইবে না বলেই মনে করেন দিল্লির সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের অধ্যাপক ভারত করনাড। তাঁর বক্তব্য, “ভারত যেটা করতে চাইছে, সেটা করার মতো অবস্থায় সে নেই। মোদী সরকার খুবই সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য এখন আমরা মোটেই প্রস্তুত নই।’’
'নিউ ইয়র্ক টাইমস'-এ প্রকাশিত নিবন্ধে সিঙ্গাপুরের প্রাক্তন কূটনীতিক বিলহারি কৌশিকান লিখেছেন, “মোদী ও শি দুজনেই জাতীয়বাদী আবেগকে উস্কে দিয়েছেন। তাই তাঁরা এখন উত্তেজনা থিতিয়ে নিয়ে যাওয়ায় চেষ্টা করলেও নাগরিকদের ভাবাবেগের চাপে তা কতটা করতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’’
তবে শি-র তুলনায় চাপটা মোদীর উপরেই বেশি বলে মনে করেন দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের চিনা সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শ্রীকান্ত কোন্ডাপল্লি। লন্ডনের 'দ্য ফাইনান্সিয়াল টাইমস' দৈনিকে শ্রীকান্ত লিখেছেন, “চিনের অর্থনীতি যেখানে ১৪ ট্রিলিয়ান ডলারের সেখানে ভারতের অর্থনীতি ৩ ট্রিলিয়ান ডলারেরও কম। প্রতিরক্ষায় চিনের ব্যয়বরাদ্দ যেখানে ২২০ বিলিয়ান ডলার সেখানে ভারতের বরাদ্দ মাত্র ৫২ বিলিয়ান ডলার। তাই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে ভারতকেই বেশি ঝুঁকিটা নিতে হবে।’’
তবে উত্তেজনা চট করে থিতিয়ে যাবে এমনটাও মনে করছেন না বিশেষজ্ঞদের একাংশ। লন্ডনের 'দ্য গার্ডিয়ান' দৈনিকে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ মিশেল কুগেলম্যান লিখেছেন, “এই সমস্যা চট করে মেটার সম্ভাবনা কমই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy