পাকিস্তানকে অনুপ্রবেশকারীদের দেহ ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলার পর জবাব দিলেন ইমরান খান। —ফাইল চিত্র
পাকিস্তানকে তাদের দেশের পাঁচ অনুপ্রবেশকারীর দেহ ফিরিয়ে নিতে বলেছিল ভারত। অনুপ্রবেশের অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা ভারতের দিকেই আঙুল তোলার চেষ্টা করলেন ইমরান খান। ভারতের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন, মারাত্মক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ তুলে রাষ্ট্রপুঞ্জকেও জড়িয়ে দিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে খুঁচিয়ে তুললেন কাশ্মীর ইস্যুতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রসঙ্গ। অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে ভারতীয় সেনার হাতে নিহত পাক বর্ডার অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (ব্যাট) পাঁচ সদস্যের দেহ ফেরানোর কথা বলে নয়াদিল্লি যে ইসলামবাদকে কৌশলগত ভাবে বেশ চাপে ফেলে দিয়েছে, পাক প্রধানমন্ত্রীর পর পর টুইটে সেটাই ফুটে উঠেছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
পাক সেনার অফিসার-জওয়ান এবং জঙ্গিদের নিয়ে গঠিত পাকিস্তানের ব্যাট বাহিনী জম্মু-কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর জঙ্গি কার্যকলাপে মদত দেয়। একই সঙ্গে প্রায় সারা বছর ধরে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াও এই বাহিনীর অন্যতম কার্যপন্থা। ভারতীয় সেনা জানায়, হত ২৯ থেকে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এই ব্যাট বাহিনীরই একাধিক দল পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করে। তার মধ্যে কেরন সেক্টর দিয়ে একটি দল ঢোকার সময় নজরে আসে ভারতীয় সেনার। গুলিযুদ্ধে অন্তত পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। এই পাঁচ জনের দেহই পাকিস্তানকে রবিবার দেশে ফেরত নেওয়ার কথা বলে ভারতীয় সেনা। সেনার বার্তা ছিল, সাদা পতাকা অর্থাৎ শান্তির বার্তা দিয়ে পাঁচ জনের দেহ নিয়ে যাক পাকিস্তান।
কিন্তু ইসলামাবাদ গোড়া থেকেই অনুপ্রবেশের কথা অস্বীকার করে আসছিল। পাক সেনার মুখপাত্র মজের জেনারেল আসিফ গফুর শনিবার রাতে বলেন, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ভারতের অপপ্রচার। একই সঙ্গে তাঁর দাবি ছিল, কাশ্মীরের মূল সমস্যা থেকে বিশ্ববাসীর নজর ঘোরাতেই ভারত এই পরিকল্পনা করছে। শনিবার মধ্য রাতে পাক বিদেশমন্ত্রকও ভারতের দাবি অস্বীকার করে প্রায় একই রকম বিবৃতি প্রকাশ করে বলে, ‘‘নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে পাকিস্তানের কার্যকলাপ এবং মৃতদেহ নিয়ে ভারত যে দাবি করেছে, আমরা তা অস্বীকার করছি।’’
এর পর রবিবার বিকেলে ব্যাট তুলে নেন অধিনায়ক নিজেই। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পরপর তিনটি টুইট করে ভারতের দিকেই পাল্টা তির ছোড়ার চেষ্টা করেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সীমান্তের ওপারে সাধারণ নাগরিকদের উপর যে অত্যাচার চলছে এবং যে ধরনের অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে, তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল এবং এই ঘটনার নিন্দা করি। এতে ১৯৮৩ কনভেনশনও লঙ্ঘিত হচ্ছে।’’ বিষয়টি আন্তর্জাতিক শান্তির পরিপন্থী, তাই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বিষয়টিতে নজর দেওয়া উচিত— মন্তব্য পাক প্রধানমন্ত্রীর।
I condemn India's attack across LOC on innocent civilians & it's use of cluster munitions in violation of int humanitarian law and it's own commitments under the 1983 Convention on Certain Conventional Weapons. UNSC must take note of this international threat to peace & security.
— Imran Khan (@ImranKhanPTI) August 4, 2019
আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীর ছাড়ার নির্দেশ মেন্টর ইরফান-সহ সাপোর্ট স্টাফদের, বাড়ি ফেরানো হল ক্রিকেটারদেরও
অন্য টুইটে ইমরান বলেছেন, কাশ্মীরের মানুষের ভোগান্তির দীর্ঘ কালরাত্রির অবসানের সময় এসেছে। নিরাপত্তা পরিষদের চুক্তি মতো তাঁদের স্বতন্ত্রতার অধিকার দেওয়া উচিত। কাশ্মীর সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানই খুলে দিতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও নিরাপত্তা রাস্তা।’’
It is time to end the long night of suffering for the people of Occupied Kashmir. They must be allowed to exercise their right to self determination according to UN SC resolutions.The only road to peace & security in South Asia runs through a peaceful & just settlement of Kashmir
— Imran Khan (@ImranKhanPTI) August 4, 2019
সম্প্রতি পাক প্রধানমন্ত্রীর আমেরিকা সফরকালে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন কাশ্মীর ইস্যুতে মোদী তাঁকে মধ্যস্থতা করার আর্জি জানিয়েছিলেন। ট্রাম্পের এই বক্তব্য ভারতে কার্যত পরমাণু বোমার মতো আছড়ে পড়ে। বিরোধীরা তীব্র আক্রমণ করতে শুরু করে সরকার পক্ষকে। সংসদেও ঝড় ওঠে। বিদেশমন্ত্রীকে সংসদের উভয় কক্ষে এবং মন্ত্রককে বিবৃতি জারি করে ট্রাম্পের বক্তব্যকে খারিজ করতে হয়। কারণ কাশ্মীর সমস্যায় তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ কখনও চায় না ভারত। বরং দ্বিপাক্ষিক সমস্যা হিসেবেই সমাধান করতে চায়। উল্টো দিকে পাকিস্তানের অবস্থান প্রায় উল্টো। তারা চায় মার্কিন হস্তক্ষেপে মিটুক কাশ্মীর সমস্যা।
আরও পডু়ন: পাঁচ অনুপ্রবেশকারীর মৃতদেহ ফেরত নিক পাকিস্তান, বলল ভারতীয় সেনা, নীরব ইসলামাবাদ
দেশে সেই ইস্যু কিছুটা থিতিয়ে যাওয়ার পর রবিবার ফের সেই ইস্যুই খুঁচিয়ে তুলে আনলেন পাক প্রধানমন্ত্রী। ইমরানের টুইট, ‘‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতা করতে চেয়েছিলেন। সেটা করার এটাই সময়। কারণ ভারতীয় সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যকলাপে নিয়ন্ত্রণরেখায় পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। আঞ্চলিক সমস্যা এতে আরও বাড়বে।’’
President Trump offered to mediate on Kashmir. This is the time to do so as situation deteriorates there and along the LOC with new aggressive actions being taken by Indian occupation forces. This has the potential to blow up into a regional crisis.
— Imran Khan (@ImranKhanPTI) August 4, 2019
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্যকলাপে মদত দেওয়ার অভিযোগ বিশ্ববাসীর কাছে অজানা নয়। যদিও পাকিস্তান বরাবরই সে অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। কূটনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা, নিহত পাঁচ জন যে পাকিস্তানি, তা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ হাতে রয়েছে ভারতের। পাকিস্তানকে সেই পাঁচ জনের দেহ ফিরিয়ে নিতে বলে সন্ত্রাসে মদতের প্রশ্নে কার্যত পাকিস্তানের মুখোশ খুলে দিয়েছে ভারত। সেই চাপ থেকে বেরিয়ে আসতেই রাষ্ট্রপুঞ্জকে সাক্ষী মানতে চেয়েছেন। ভারতের অস্বস্তি বাড়ানোর কৌশল হিসেবে টেনে এনেছেন ট্রাম্পের কাশ্মীর-মধ্যস্থতার প্রসঙ্গও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy