Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারত-বিদ্বেষে ঠাসা বক্তৃতায় ইমরানের মুখে পরমাণু যুদ্ধ

প্রায় আগাগোড়া ভারত-বিদ্বেষে ঠাসা বক্তৃতায় নরেন্দ্র মোদীকে সরাসরি গুজরাত দাঙ্গার কথা তুলে আক্রমণ করেছেন ইমরান।

রাষ্ট্রপুঞ্জের ৭৪তম সাধারণ সভার মঞ্চে ইমরান খান। শুক্রবার নিউ ইয়র্কে। ছবি: এএফপি

রাষ্ট্রপুঞ্জের ৭৪তম সাধারণ সভার মঞ্চে ইমরান খান। শুক্রবার নিউ ইয়র্কে। ছবি: এএফপি

নিজস্ব সংবাদদাতা
নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৫০
Share: Save:

রাষ্ট্রপুঞ্জের দিকে বল ঠেলে দিয়ে সেই মঞ্চে দাঁড়িয়েই কার্যত পরমাণু যুদ্ধের হুমকি দিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। যদিও বললেন, ‘‘আমি কোনও হুমকি দিচ্ছি না, কিন্তু আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকেও ভাবতে হবে, তারা ১৩০ কোটি মানুষের ভারতীয় বাজারকে তোষণ করবে, না নিরপরাধ নির্যাতিত মানুষের ন্যায়ের জন্য লড়বে? তা না-হলে ভাল আশা আপনারা করতেই পারেন, কিন্তু খারাপের জন্যও তৈরি থাকুন।’’

প্রায় আগাগোড়া ভারত-বিদ্বেষে ঠাসা বক্তৃতায় নরেন্দ্র মোদীকে সরাসরি গুজরাত দাঙ্গার কথা তুলে আক্রমণ করেছেন ইমরান। সঙ্ঘকে মিলিয়ে দিয়েছেন ফাসিস্তদের সঙ্গে। বলেছেন, ‘‘মিস্টার মোদী আরএসএসের আজীবন সদস্য। যে আরএসএস হিটলার-মুসোলিনির আদর্শে তৈরি। এরা জাত্যভিমানের উপাসক। আরএসএস ভারত থেকে মুসলিমদের মুছে ফেলার ‘জাতি-শোধন’ তত্ত্বে বিশ্বাস করে। আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা গোলওয়ালকর এবং সাভারকরকে দেখুন। গুগল করলেই পাবেন। এই ঘৃণার মতবাদই গাঁধীকে হত্যা করেছিল। এই আদর্শই ২০০২ সালে নরেন্দ্র মোদী মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁকে দিয়ে গুজরাতের মুসলিমদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা করিয়েছিল। হিটলারের ‘ব্রাউনশার্ট’ বাহিনী দ্বারা অনুপ্রাণিত আরএসএসের গুন্ডাদের তিন দিন ধরে খোলা ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। প্রাক্তন কংগ্রেসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, আরএসএস ক্যাম্পে জঙ্গি তৈরি হয়। এই ‘জঙ্গিরাই’ ২০০০ জনকে কেটে ফেলেছিল। ঘরছাড়া হয়েছিলেন দেড় লক্ষ মুসলিম।’’

কয়েক দিন ধরেই নিউ ইয়র্কে বসে কাশ্মীর নিয়ে হাওয়া গরম করে চলেছেন ইমরান। কখনও সাংবাদিক বৈঠকে, কখনও থিঙ্ক ট্যাঙ্কের আলোচনায়। গত কাল তাঁর মন্ত্রী ভারতীয় সাংবাদিকদের দিকে ঘৃণা ছুড়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘কাশ্মীরের খুনিদের সঙ্গে বসে আমি কথা বলি না।’’ আজ যে কাশ্মীর নিয়ে ইমরান তাঁর স্বর সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাবেন, তার মঞ্চ প্রস্তুত ছিল। পাক প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘প্রথাগত যুদ্ধ শুরু হলে যা-কিছু হতে পারে। যখন দু’টি পরমাণু শক্তিধর দেশ পরস্পরের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়, তখন ফলাফল সীমান্তেই আটকে থাকে না। এখন এটা রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে পরীক্ষা, তারা কী চাইছে।’’

বারবার কাশ্মীরের কার্ফুর কথা উল্লেখ করে উপস্থিত বিশ্বপ্রতিনিধিদের কাছে ভারত-বিরোধী বার্তা দিতে চেয়েছেন ইমরান। তাঁর হুঁশিয়ারি, কার্ফু উঠে গেলেই রক্তস্নান হবে। আরও একটা পুলওয়ামা হবে। ভারত তখন পাকিস্তানকে দুষে ফের বোমা ফেলতে আসবে। এই প্রসঙ্গে হলিউডের ছবি ‘ডেথ উইশ’-এর কথা বলেছেন ইমরান। বলেছেন, ‘‘মনে করে নিচ্ছি, আমি কাশ্মীরের জেলে রয়েছি। শুনছি ভারতীয় সেনা ধর্ষণ করছে। আমি কি সেটা মানতে পারতাম? আমি বন্দুক তুলে নিতাম। ভারত সরকার কাশ্মীরিদের সে দিকেই নিয়ে যাচ্ছে আর আমাদের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছে।’’

ইমরান বলেন, ক্রিকেটের সূত্রে ভারতে তাঁর অনেক বন্ধু। ক্ষমতায় এসে তিনি প্রথমেই মোদীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। দায় ঠেলাঠেলি ভুলে সামনে এগোতে চেয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও ভারতের ‘উগ্র জাতীয়তাবাদী’ শাসক দল পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চায়নি। পুলওয়ামার বিস্ফোরণের পরে পাকিস্তানের দিকে আঙুল ওঠায় তাঁরা প্রমাণ চেয়েছিলেন। উল্টে ভারত পাঠিয়েছিল যুদ্ধবিমান। এর আগে বালাকোট অভিযানের সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিল আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর একাংশ। আজ ইমরান বালাকোটের কথা স্বীকার করেও বলেছেন, ‘‘দশটা গাছ ছাড়া কিছুরই ক্ষতি হয়নি ভারতের হামলায়। ভারতের এক পাইলট ধরা পড়েছিলেন। আমরা তাঁকে মুক্তি দিয়েছি। অথচ এটাকে শান্তি প্রক্রিয়া না-ভেবে ১৫০ জন জঙ্গি মারা গিয়েছে বলে ভোটে মিথ্যা প্রচার চালিয়েছিলেন মোদী।’’ নির্ধারিত ১৫ মিনিট পেরিয়ে আজ অন্তত আধ ঘণ্টা বেশি বলেছেন ইমরান। সময়সীমা ছাড়ানোর জন্য সতর্ক করতে পোডিয়ামে জ্বলে ওঠা লাল আলোটাকে উপেক্ষা করেই।

পরে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার টুইটারে লেখেন, ‘‘পরমাণু যুদ্ধ, জেহাদ, সন্ত্রাসে মদত, মিথ্যাচার, বিশ্বের সর্বোচ্চ মঞ্চের অপব্যবহার ইত্যাদির বাইরেও যে জীবন আছে, এটা সবাই ভাবেন না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Imran Khan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy