Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
জল বাঁচানোর লড়াইয়ে জয়ী

করে দেখাল কেপ টাউন, ভারত পারবে না কেন

জনসাধারণকে আরও উৎসাহিত করতে কেপ টাউন পুরসভা ওয়েবসাইটে প্রতিদিন প্রকাশ করতে লাগল জলাশয়গুলির জলস্তর কী ভাবে কমছে ও শহরবাসীর প্রচেষ্টায় এই জলস্তর হ্রাসের হার কী ভাবে কমানো সম্ভব হচ্ছে সে সম্পর্কে নানা তথ্য।

সৌভিক সামন্ত
কেপ টাউন শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৯ ০৩:২৯
Share: Save:

জল বাঁচানোর লড়াইয়ে নেমেছে কেপটাউন। যুদ্ধে শামিল সাধারণ মানুষ থেকে বড় বড় সংস্থাও। ২০১৮-র জানুয়ারি মাসে কেপ টাউন পুরসভা সে বছরেরই ১২ মে তারিখটিকে ‘ডে-জ়িরো’ হিসেবে চিহ্নিত করে। সে দিন থেকে শহরের কোনও কলে আর জল পড়বে না।

দেখলাম আমাদের বাড়ির অদূরে, পুরসভার জল সরবরাহ কেন্দ্রের সামনে, ভোর ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সাধারণ মানুষের লম্বা লাইন। সবাই ‘ডে-জ়িরো’-র পরবর্তী সময়ের জন্য জল সংগ্রহ করছে। পুরসভা আগেই জনপিছু ৫০ লিটার জল বরাদ্দ করেছিল। তার মধ্যে পুরসভা থেকে ২৫ লিটার পর্যন্ত পাওয়া যেতে পারে।

কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, তাঁরা প্রতি দিন লাইন দিয়ে জল সংগ্রহ করছেন আর বাড়িতে চৌবাচ্চা তৈরি করে তাতে জমা করছেন। ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে গিয়ে দেখলাম বোতলবন্দি পানীয় জলের দাম ক্রমেই বাড়ছে। আমিও আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বেশ কয়েকটা পাঁচ লিটারের পানীয় জলের বোতল কিনে রাখলাম।

জনসাধারণকে আরও উৎসাহিত করতে কেপ টাউন পুরসভা ওয়েবসাইটে প্রতিদিন প্রকাশ করতে লাগল জলাশয়গুলির জলস্তর কী ভাবে কমছে ও শহরবাসীর প্রচেষ্টায় এই জলস্তর হ্রাসের হার কী ভাবে কমানো সম্ভব হচ্ছে সে সম্পর্কে নানা তথ্য। ক্রমাগত বৈঠকের পর ২০১৮-র ফেব্রুয়ারি মাসে সরকার কৃষক সংগঠনগুলোকে রাজি করাল, তারা যাতে চাষের কাজে সংরক্ষিত জলের একটা বড় অংশ শহরবাসীকে দান করে। মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে পুরসভা ঘোষণা করল, সাধারণ মানুষের সহায়তায় তারা ‘ডে-জ়িরো’ ২১শে জুন পর্যন্ত পিছিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।

তবে লড়াই চললই। মে মাসের শেষে শীতের কেপটাউনে সাধারণ নিয়মে বর্ষা এল এবং ভাগ্যক্রমে এ বার ভালই বৃষ্টি হল। ‘ডে-জ়িরো’-র রক্তচক্ষু থেকে মুক্তি পেল এই শহর। মার্চ মাসে জলাশয়ের যে জলস্তর ২০% এর নীচে নেমে গিয়েছিল, বর্ষার শেষে সেপ্টেম্বরে দেখা গেল তাই ৭৫% হয়ে গিয়েছে। বছর শেষে কেপ টাউন পুরসভার হিসেবে ২০১৮ সালে শহরবাসী বার্ষিক গড় জল ব্যবহারের থেকে ৩০% কম জল ব্যবহার করেছে এবং ২০১৮ সালে কেপ টাউন বার্ষিক জলসঞ্চয়ে বিশ্বের সব শহরের মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করেছে। পুরসভা আরও ঘোষণা করল, যদি ২০১৯-এ একফোঁটা বৃষ্টি না-ও হয় তবুও ২০২০-র মধ্যভাগ পর্যন্ত কেপটাউনকে ‘ডে জিরো’ দেখতে হবে না।

তবে এমন সাফল্যের পরেও সরকার বা সাধারণ মানুষ চুপ করে বসে নেই। সরকার জনপিছু জলব্যবহারের ঊর্ধবসীমা শিথিল করলেও জনসাধারণ সচেতন ভাবেই সঙ্কটকালে তৈরি হওয়া অভ্যেস পরিবর্তন করতে রাজি নয়। উপরন্তু বাড়িতে বাড়িতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ শুরু হয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে জলের ব্যবহার কমাতে বিভিন্ন প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে জলের অপচয় কমাতে জলকর বাড়ানো হয়েছে।

বাথটব-সুইমিং পুল ইত্যাদি শখ-আহ্লাদের উপরে অতিরিক্ত কর ধার্য হয়েছে। সুদূর ভবিষ্যতের কথা ভেবে সমুদ্রের জলকে ব্যবহারযোগ্য করতে বিশেষ উদ্যোগ শুরু হয়েছে।

এ সব দেখে একটাই প্রশ্ন আমাদের মতো অনাবাসী ভারতীয়দের মনে ঘুরপাক খায়। সরকার ও জনসাধারণ হাতে হাত মিলিয়ে যদি কেপ টাউনকে জলসঙ্কট থেকে মুক্তি দিতে পারে, তবে দক্ষিণ আফ্রিকার থেকে জিডিপির বিচারে প্রায় চোদ্দো গুণ শক্তিশালী দেশ ভারত তা পারবে না কেন?

লেখক কেপ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিনাল কেমিস্ট্রি ও ড্রাগ ডিসকভারি নিয়ে গবেষণারত

অন্য বিষয়গুলি:

Water Crisis Drought Cape Town India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy