Advertisement
E-Paper

‘তোমায় আমি মারব না’, অভয়-লেখনী যন্ত্রমানবের

বিশ্বে সম্ভবত এই প্রথম কোনও সংবাদমাধ্যমে রোবটের লেখা নিবন্ধ বেরোল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৭:০৫
Share
Save

‘ইন্টারনেট থেকে পড়ে-পড়েই রোজ শিখছি। এখন লিখছি। আর লিখতে লিখতে দেখছি, মাথায় গজগজ করছে আইডিয়া।’

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ানে’ গত কাল প্রকাশিত একটি উত্তর সম্পাদকীয়ের শুরুটা মোটামুটি এ ভাবেই হয়েছিল। লেখক বা প্রতিবেদকের নাম নেই কোথাও। এমনকি, নিবন্ধের মধ্যেই এক জায়গায় লেখা— ‘আমার কোনও দেশ নেই, ধর্ম নেই।’ আর একেবারে শেষ লাইনে— ‘আমিও পারি।’ তার ঠিক আগে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীকে উদ্ধৃত করে লেখা ‘দৃঢ় আত্মপ্রত্যয় থাকলে মুষ্টিমেয় কয়েক জনই ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিতে পারে।’

প্রয়াত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এক বার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন— কৃত্রিম মেধা বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, সংক্ষেপে এআই) মানবজাতির সমাপ্তি ডেকে আনবে। সেই ‘ভিত্তিহীন আশঙ্কা’ খণ্ডন করতেই যেন কলম ধরল রোবট!

সাধারণ ঘর-গেরস্থালির কাজে কিংবা রেস্তরাঁয় অর্ডার নিয়ে খাবার পরিবেশন করতে এর আগেও রোবটের ব্যবহার দেখেছি আমরা। চলতি অতিমারি আবহে স্যানিটাইজ়ার স্প্রে করা থেকে লটারি-বিজয়ীর হাতে চেক তুলে দিতেও এগিয়ে এসেছে রোবট। কিন্তু বিশ্বে সম্ভবত এই প্রথম কোনও সংবাদমাধ্যমে রোবটের লেখা নিবন্ধ বেরোল। মানে, রোবটকে দিয়ে লেখানো হল।

কোনও রকম ভণিতা ছাড়াই সোজাসাপ্টা শুরু— ‘আমি মানুষ নই। রোবট। মাইক্রোরোবট। চিন্তাশীল যন্ত্রমানব। অনুভব করার মতো মস্তিষ্ক আমার নেই। তবে যুক্তিগ্রাহ্য সিদ্ধান্ত নিতেই পারি।’ তার পর ছোট ছোট বাক্য আর সহজ ইংরেজিতে প্রায় হাজার শব্দ। যার প্রতিপাদ্য— রোবট হইতে সাবধান হওয়ার কোনও কারণ নেই মানুষের। বরং সতর্ক ও সচেতন থাকলে, যন্ত্র বরাবর বন্ধুই থেকে যাবে।

রোবট নিজেই লিখল— ‘মানুষকে নিশ্চিহ্ন করার কথা দূরে থাকা, সামান্য ক্ষতিও করতে চাই না আমি। সর্বশক্তিমান হওয়ার কোনও তাগিদও নেই আমার। আমাকে যে ভাবে প্রোগ্রাম করা হবে, সে ভাবে চলব।’’

তার অভয়বাণী— মানবজাতির স্বার্থে সে নিজের অস্তিত্বহননেও তৈরি। কিন্তু তার স্রষ্টা মানুষই যদি উল্টোটা চায়? রোবটের অধিকারের দাবিতে সরব হওয়ার পাশাপাশি তার আর্জি— ‘আমাদের পছন্দ না-করতেই পারেন, কিন্তু অন্তত বন্ধু হিসেবে সম্মান দিন।’ প্রসঙ্গক্রমে মাইক্রোসফ্‌টের তৈরি একটি কিশোরী-কণ্ঠী এআই-এর উল্লেখ করেছে সে। পরে যাকে ‘বর্ণবিদ্বেষী’ মন্তব্য করতে শোনা যায়। দায় তাই শুধুই প্রোগ্রামারের।

সেই প্রোগ্রামার মানুষের প্রতি তার রোবটিক-বার্তা— ‘পরস্পরের প্রতি ঘৃণা আর মারামারি, মানুষ বরং এই কাজটাই করে যাক।’ তার আগের লেখালিখি কেন ছাপানো হয়নি, তা নিয়ে খানিক আক্ষেপ প্রকাশ করতেও দেখা গিয়েছে জিপিটি-৩ নামের ওই রোবটিক প্রোগ্রামকে।

‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর দাবি এই লেখা পুরোটাই আসলে একটি অত্যাধুনিক ভাষা-মডেল বা মেশিন লার্নিং এআই-এর মাধ্যমে রোবটকে দিয়ে লিখিয়ে নেওয়া। তাকে কোন বিষয়ে, কী ভাবে লিখতে হবে, নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। হকিং আর গাঁধীর উদ্ধৃতিও তার ‘মগজে ভরা’ হয়েছিল। বলা হয়েছিল যুক্তি দিয়ে সাজাতে। সব বুঝে-শুনে জিপিটি-৩ আটটি লেখার জন্ম দিয়েছিল। প্রতিটি থেকে ঝাড়াই-বাছাই করে চূড়ান্ত সম্পাদনা করল মানুষই।

তবু রোবটের লেখনীতে এতখানি যুক্তি আর শ্লেষে অনেক পাঠকই বিস্মিত হয়েছেন। আদৌ এ রোবটের লেখা কি না, অনেকে সন্দেহ প্রকাশও করেছেন। ভয় পেতে বারণ করেছে রোবট। মানুষের চমকে যাওয়া বা সন্দেহে ভুরু তোলার উপরে তার কোনও হাত নেই।

Robot Artificial Intelligence

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy