Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সব চেয়ে কম বর্ণবিদ্বেষী আমিই: ট্রাম্প

ভার্জিনিয়ার জেমসটাউনে ভরা সভা থেকে ওই দর্শককে বার করে দেওয়া হলেও সেখানে ট্রাম্প বিশেষ রা কাড়েননি।

ছবি এপি।

ছবি এপি।

সংবাদ সংস্থা
জেমসটাউন (ভার্জিনিয়া) শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৯ ০৩:২১
Share: Save:

দাসপ্রথার ভয়ঙ্কর অধ্যায় নিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! মার্কিন গণতন্ত্রের জন্মলগ্ন নিয়ে এক অনুষ্ঠানে ভার্জিনিয়ার জেমসটাউনে বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। তবে তাঁকে মাঝপথে থামিয়ে এক শ্রোতা জানিয়েছেন, আপনি আর ঘৃণা তো সমর্থক বিষয়। ওই দর্শক ট্রাম্পকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, মার্কিন নাগরিকদের একটা বড় অংশই প্রেসিডেন্টকে বর্ণবিদ্বেষী বলেই ভাবেন। ট্রাম্প অবশ্য এ সবে তোয়াক্কা করার পাত্র কোনও দিনই ছিলেন না, এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। জেমসটাউনের বক্তৃতা সেরে হোয়াইট হাউস থেকে সাংবাদিকদের কাছে তাঁর বার্তা, ‘‘বিশ্বে আমার মতো কম বর্ণবিদ্বেষী ব্যক্তি খুব কমই আছেন!’’

যে বার্তা শুনে আর এক প্রস্ত সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট। ভার্জিনিয়ার জেমসটাউনে ভরা সভা থেকে ওই দর্শককে বার করে দেওয়া হলেও সেখানে ট্রাম্প বিশেষ রা কাড়েননি। ৪০০ বছর আগে ব্রিটিশদের উপনিবেশ ছিল এখানে। ব্রিটিশরাই ১৬১৯ সালে প্রথম বিধানসভা গড়ে তোলে এখানে। মনে করা হয়, এখান থেকেই মার্কিন গণতন্ত্রের গোড়াপত্তনের পথটি তৈরি হয়েছিল। তাই সেই দিনটিকে মনে রেখে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে এসেছিলেন ট্রাম্প। ভার্জিনিয়ার আফ্রো-মার্কিন সেনেটররা অনুষ্ঠান বয়কট করেন। তাঁদের মতে, অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের উপস্থিতি পুরো বিষয়টাকেই ‘কলঙ্কিত’ করে। তাঁরা বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘বর্ণবিদ্বেষ ও বিদেশি-ভীতি ছড়িয়ে যে ধরনের ঘৃণা ও অবজ্ঞার প্রতীক হয়ে উঠেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তাকে অবহেলা করা কঠিন।’’

ট্রাম্প তাঁর বক্তৃতায় গুছিয়ে বলতে শুরু করেছিলেন, ‘‘ব্রিটিশ উপনিবেশের হাত ধরেই এসেছিল আফ্রিকার দাসেরা। জেমসটাউন তাই শুধু স্বাধীনতার প্রতীক নয়, এই জায়গা মনে পড়ায় দাসত্বের সেই অধ্যায়কেও। দাসত্বের ভয়ঙ্করতার শিকার হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের প্রত্যেককে স্মরণ করি। মানুষের জীবনে এর চেয়ে বর্বরোচিত পর্ব আর হয় না।’’ এর পরেই ট্রাম্প চলে যান আমেরিকার গৃহযুদ্ধের প্রসঙ্গে। তিনি মনে করিয়েছেন, ১৮৬৫ সালের গৃহযুদ্ধই দাসপ্রথার অবসান ঘটায়। তার পর ট্রাম্পের উল্লেখ, আরও এক শতকের লড়াই চলেছে আফ্রো-মার্কিনদের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষী নীতি মুছে ফেলার জন্য।

মুখে এ সব কথা বললেও ট্রাম্প নিজেই ইদানীং কালে যে ভাবে অ-শ্বেতাঙ্গ এবং আফ্রো-মার্কিন রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক বর্ণবিদ্বেষী আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন, তাতে ক্ষুব্ধ মার্কিন নাগরিকদের বড় অংশ। তাই জেমসটাউনে এক শ্রোতা ব্যতিক্রমী পথে প্রেসিডেন্টের বক্তৃতা থামিয়ে দু’টি পোস্টার হাতে দাঁড়িয়ে পড়েন, যাতে লেখা ‘ঘৃণা বিদেয় করুন’ এবং ‘নিজের দুর্নীতির আখড়ায় ফিরে যান।’ সব শুনে ট্রাম্প তখনের মতো থেমে যান। লোকটিকেও পত্রপাঠ সভা থেকে বার করে দেওয়া হয়। সে যাত্রা আর কিছু বলেননি প্রেসিডেন্ট।

হোয়াইট হাউসে ফিরেই স্বমূর্তিতে তিনি। জেমসটাউন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন ‘‘বিশ্বে আমার মতো কম বর্ণবিদ্বেষী ব্যক্তি খুব কমই আছেন!’’ গত এক সপ্তাহের রেকর্ড অবশ্য তা বলছে না। কখনও বল্টিমোরের আফ্রো-মার্কিন সেনেটর অ্যালাইজ়া কামিংসকে আক্রমণ করতে গিয়ে গোটা বল্টিমোরকেই ‘ইঁদুরের আস্তানা’ বলে দেওয়া, কখনও কামিংসের পাশে দাঁড়ানোর অপরাধে আর এক আফ্রো-মার্কিন আন্দোলনকারী আল শার্পটনকে বর্ণবিদ্বেষী বলে তোপ দেগেছেন প্রেসিডেন্ট। তার আগে হাউসের অশ্বেতাঙ্গ মহিলাদের বিরুদ্ধেও ট্রাম্পের বর্ণবিদ্বেষী তির ধেয়ে এসেছে। বস্তুত বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০২০ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে মাথায় রেখেই এতটা ‘বেপরোয়া’ হয়ে উঠেছেন ট্রাম্প। তবে তিনি বুঝছেন না, জনসমীক্ষা থেকে উঠে আসছে, দেশ জুড়ে কৃষ্ণাঙ্গরা ইতিমধ্যেই মুখ ফিরিয়েছেন তাঁর থেকে।

অন্য বিষয়গুলি:

USA Donald Trump Racism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy