আমেরিকার শুল্কনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের মনে আমেরিকায় আর্থিক মন্দা সংক্রান্ত ভীতির প্রভাব পড়ল ওয়াল স্ট্রিটে। গত মাসের সর্বোচ্চ অবস্থানের পর থেকে সোমবারের মধ্যে লগ্নিকারীদের ৪ লক্ষ কোটি (৪ ট্রিলিয়ন) ডলার মুছে গিয়েছে আমেরিকার শেয়ার বাজার থেকে। ভারতীয় মুদ্রায় যা ৩৪৯ লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন নীতির কারণে বহু সংস্থা, গ্রাহক এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তিন বাণিজ্যসঙ্গী কানাডা, মেক্সিকো এবং চিনের সঙ্গে শুল্ক-সংঘাতে জড়িয়েছে আমেরিকা। অনুমান করা হচ্ছে, এই টানাপড়েনের প্রভাব পড়েছে মার্কিন শেয়ার বাজারে।
গত কয়েক দিন ধরেই ওয়াল স্ট্রিটের ‘স্বাস্থ্য’ খুব একটা ভাল ছিল না। সোমবার আমেরিকার শেয়ার বাজারে আরও বেশি পতন দেখা যায়। ঘটনাচক্রে, রবিবারই মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ফক্স নিউজ়’ আমেরিকার প্রেসিডেন্টের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। সেখানে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, নতুন শুল্কনীতির কোনও প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে দেখা যাবে কি না। জবাবে সরাসরি কোনও মন্তব্য না করে ট্রাম্প বলেন, ‘‘এই ধরনের কোনও ভবিষ্যদ্বাণী করতে আমি পছন্দ করি না। আমরা যেটা করছি, সেটা খুব বড় একটা কাজ। ফলে এখন একটা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে আমরা চলেছি। আমরা আমেরিকার সম্পদ পুনরুদ্ধার করছি। সেটা খুব বড় কাজ।’’ এই লক্ষ্যে পৌঁছোতে যে কিছুটা সময় লাগবে, তা-ও মেনে নিয়েছেন ট্রাম্প। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ওই মন্তব্যের পরেই শেয়ার বাজারে লগ্নিকারীদের মনে মন্দার আশঙ্কা জন্ম নেয়। অনেকেই মনে করেন, আমেরিকার অর্থনীতি মন্দার মুখোমুখি হতে পারে, সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না ট্রাম্প।
সোমবার ওয়াল স্ট্রিটে বাজার বন্ধের সময়ে ‘এস অ্যান্ড পি ৫০০’-এর সূচক ২.৭ শতাংশ নেমে যায়। চলতি বছরে এটিই সবচেয়ে বড় পতন ‘এস অ্যান্ড পি ৫০০’-র সূচকে। ন্যাসড্যাক-এর সূচকও সোমবার ৪ শতাংশ নীচে নামে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের পর থেকে এটিই ন্যাসড্যাকের এক দিনে সবচেয়ে বেশি পতন।
আরও পড়ুন:
বেশ কিছু মার্কিন সংস্থার কর্তা মনে করছেন, সাম্প্রতিক শুল্কনীতির কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ল্যাজ়ার্ডের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক পিটার অর্সজ়াগ রয়টার্সকে বলেন, “কানাডা, মেক্সিকো এবং ইউরোপের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধের পরিস্থিতির কারণেই এই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।” তাঁর মতে, চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক স্তরে উত্তেজনার কারণ মানুষ বুঝতে পারছে। কিন্তু কানাডা, মেক্সিকো এবং ইউরোপের সঙ্গে টানাপড়েন সাধারণ মানুষের কাছে বেশ বিভ্রান্তিকর। আগামী মাসের মধ্যে এই পরিস্থিতি না-কাটলে আমেরিকার অর্থনৈতিক প্রগতিতে প্রকৃত অর্থেই ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
সোমবার উড়ান সংস্থা ‘ডেল্টা এয়ারলাইন্স’-এর শেয়ারদর ১৪ শতাংশ কমেছে। এর জন্য আমেরিকার অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তায় ঘেরা পরিস্থিতিকেই দায়ী করছেন সংস্থার মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক এড বাস্টিন। কেন্টাকির এক বাজার বিশেষজ্ঞ রস মেফিল্ড জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসনকে দেখে মনে হচ্ছে যেন শেয়ার বাজারে পতন রুখতে তারা কিছু করতে চাইছে না। নিজেদের বৃহত্তর লক্ষ্য পূরণের জন্য তারা হয়তো মন্দাকেও মেনে নেবে।