Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ফিরে এল ‘অব কি বার ট্রাম্প সরকার’, বৈচিত্রই শক্তি, মোদীর মুখেও

এ দিন হিউস্টনে রওনা হওয়ার আগেই ট্রাম্প টুইট করে বলেছিলেন, ‘‘বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। টেক্সাসে দিনটা ভালই কাটবে।’’

মিত্রশক্তি: হিউস্টনে ‘হাউডি মোদীর’ মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি।

মিত্রশক্তি: হিউস্টনে ‘হাউডি মোদীর’ মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি।

অগ্নি রায়
নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:০১
Share: Save:

প্রথমে ইংরেজিতে ‘ভারতের বিশ্বস্ত বন্ধু’ ডোনাল্ড ট্রাম্পের হয়ে জয়ধ্বনি, তার পর হিন্দিতে বলতে উঠে ভারতের অন্তর্নিহিত বৈচিত্রের জয়ধ্বনি। রবিবার হিউস্টনে ‘হাউডি মোদী’র মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী এই দু’টো বার্তাই অনাবাসী ভারতীয়দের সামনে রাখলেন। সেই সঙ্গে নাম না করে পাকিস্তানকে বিঁধে এবং সন্ত্রাস দমনে ট্রাম্পের অঙ্গীকারকে মনে করিয়ে কূটনীতির লড়াইয়েও ভারতকে এগিয়ে দিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।

এ দিন হিউস্টনে রওনা হওয়ার আগেই ট্রাম্প টুইট করে বলেছিলেন, ‘‘বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। টেক্সাসে দিনটা ভালই কাটবে।’’ জবাবে মোদী লেখেন, ‘‘নিশ্চয়ই। আপনার সঙ্গে শীঘ্রই দেখা হবে।’’ ভারতীয় সময় রাত সাড়ে দশটা নাগাদ পৌঁছন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর পরে বেশ কিছু ক্ষণের জন্য ‘হাউডি মোদী’র মঞ্চ কার্যত পরিণত হয় ট্রাম্পের আগাম নির্বাচনী প্রচারে। ট্রাম্পকে ‘ভারত-বন্ধু’ হিসেবে তুলে ধরে প্রশস্তির বৃষ্টি তো করলেনই মোদী। করমর্দন থেকে আলিঙ্গন, অনুষ্ঠানের শেষে হাত ধরে ঘুরে ঘুরে প্রায় ‘ভিকট্রি ল্যাপ’ নেওয়ার কায়দায় জনতার অভিবাদন গ্রহণ— উষ্ণতার প্রদর্শনীতে বাকি রইল না কিছুই। ট্রাম্প বক্তৃতা শুরু করার আগে ইংরেজিতে একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিলেন মোদী। সেখানে ট্রাম্পের মুখে ‘অব কি বার ট্রাম্প সরকার’ স্লোগানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার-সুরও যেন বেঁধে দিয়ে গেলেন। ট্রাম্পও তাঁর বক্তৃতায় সেই ধরতাইটাই কাজে লাগালেন। টেক্সাসে অনাবাসী ভারতীয়দের মঞ্চ থেকে ভোটব্যাঙ্ক বাড়ানোর চেষ্টায় খামতি রাখলেন না।

‘বন্ধু’র পরে ফের মঞ্চে এসে হিন্দিতে বক্তৃতা শুরু করেন মোদী। তাঁর শাসনকাল সম্পর্কে বিরোধীদের যা যা অভিযোগ, যা কিছু অপ্রীতিকর প্রসঙ্গ ওঠে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে, আপাত ভাবে সে সবের ধার দিয়ে গেলেন না। গণতন্ত্রের অবক্ষয়, অসহিষ্ণুতা, বেহাল অর্থনীতির নামগন্ধ ছিল না তাঁর কথায়। কিন্তু ভারতের বৈচিত্র, নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানের কথা বলে, বৈচিত্রকেই ভারতের বিশেষত্ব এবং জোরের জায়গা বলে তুলে ধরে— কার্যত ভাবমূর্তির ক্ষত মেরামতের চেষ্টাই তিনি এ দিন করেছেন বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। ঘরের মাটিতে যে জওহরলাল নেহরুকে ইদানীং প্রতি পদে আক্রমণ করেন মোদী-অমিত শাহ, এ দিন অনেকটা সেই নেহরুর মতো করেই ‘বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য’-এর কথা বলতে হয়েছে মোদীকে। ‘সব কিছু ভাল চলছে’ কথাটা নানা ভাষায় বলে তিনি হিন্দি নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কের ব্যাপারেও একটা বার্তা দিতে চাইলেন বলে মনে করা হচ্ছে। মোদী বলেছেন, ‘‘ভাষা, উপাসনার পদ্ধতি এমনকি ঋতুর বৈচিত্রও আমাদের দেশের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শক্তি।’’

মোদী জমানায় কতটা ভাল আছে ভারত? মোদীর দাবি, তাঁর সরকার মানুষের কল্যাণের (ওয়েলফেয়ার) জন্য যেমন কাজ করছে তেমনই বিদায় (ফেয়ারওয়েল) জানিয়েছে অনেক কিছুকে। কর সংস্কার, জিএসটি চালুর ‘সাফল্য’-এর দীর্ঘ খতিয়ান দিয়েছেন মোদী। কর্পোরেট কর কমানোয় লগ্নি আসার সুবিধা হবে বলে আশা দেখিয়েছেন।

এর পরেই মোদী সোজা ব্যাটে খেলেছেন ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজের প্রসঙ্গ। যে মোদী জমানায় সাংবিধানিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা, সেই মোদী নিজে কিন্তু বলেছেন, ৩৭০ উঠে যাওয়ায় জম্মু-কাশ্মীর-লাদাখের মানুষ এ বার ভারতীয় সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার ভোগ করতে পারবেন। সেই সঙ্গে নাম না করে পাকিস্তানকে নিশানা করে বলেছেন, ‘‘৩৭০ লোপে কাদের অসুবিধে হচ্ছে সকলেই জানে। ৯/১১ ও ২৬/১১ হামলার চক্রীদের কোথায় খোঁজ পাওয়া গিয়েছে তা-ও সবাই জানে।’’ রাষ্ট্রপুঞ্জে পা দেওয়ার আগে এ ভাবেই পাকিস্তানকে কোণঠাসা করে মার্কিন সমর্থন আদায়ের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকতে চাইলেন মোদী।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Donald Trump Howdy Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy