'জি২২২' বিমান। -ফাইল ছবি।
ঠিক যেন বাবার অগাধ সম্পত্তি উড়িয়ে দেওয়া ভয়ঙ্কর বাউন্ডুলে ছেলে! আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে গত দু’দশক ধরে আমেরিকার বরাদ্দ করা কয়েক হাজার কোটি ডলার এই ভাবেই ফুৎকারে উড়ে গিয়েছে। আমেরিকার কংগ্রেসের ওয়াচডগ সংস্থা ‘স্পেশাল ইনস্পেক্টর জেনারেল ফর আফগানিস্তান রিকনস্ট্রাকশান (সিগার)’-এর রিপোর্টই এ কথা জানিয়েছে।
মুঠোয় থাকবে বলে আফগানিস্তানকে ঢেলে সাজার লক্ষ্যে আমেরিকার কয়েক হাজার কোটি ডলার এসেছে গত ২০ বছরে। কিন্তু আফগানিস্তানে মোতায়েন আমেরিকার সেনাবাহিনীর অফিসার ও অন্য প্রশাসনিক কর্তারা অগাধ সম্পত্তি থাকা বাবার বাউন্ডুলে ছেলের মতোই আচরণ করেছেন। ফুৎকারে উড়ে গিয়েছে সব কিছু। আফগান নাগরিকদের কাজে লাগেনি। ফলে, আমেরিকার কোনও ভাবমূর্তিই তৈরি হয়নি আফগান নাগরিকদের কাছে। কয়েক হাজার কোটি আমেরিকার ডলার নয়ছয় হয়েছে। আফগানিস্তানের উন্নয়ন হয়নি ছিটেফোঁটাও।
চিন, রাশিয়া নয়। তালিবানও নয়। এমনটাই দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।
আফগানিস্তান পুনর্গঠনের কাজে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে বরাদ্দ করা আমেরিকার অর্থ কী কী ভাবে খরচ করা হচ্ছে, তা প্রাসঙ্গিক হচ্ছে কি না, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি অর্থবরাদ্দ করা হয়েছে কি না, ২০০৮ সাল থেকেই সেই সব খতিয়ে দেখতে শুরু করে ‘সিগার’।
সিগার দেখেছে, গত ১৩ বছর ধরে আফগানিস্তানে আমেরিকার বরাদ্দ করা বিপুল অর্থের বেশির ভাগটাই ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তা আফগানিস্তান পুনর্গঠনের কোনও কাজেই লাগছে না।
গত দু’দশকে আফগানিস্তান পুনর্গঠনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমেরিকার বরাদ্দ করা বিপুল অর্থের নয়ছয় হয়েছে এমন অন্তত ১০টি প্রকল্পকে চিহ্নিত করে সিগার। কোনওটিতে কোটি কোটি ডলার খরচ করে আফগান বিমানবাহিনীর জন্য কেনা হয়েছে দেড় ডজনেরও বেশি পরিবহণ বিমান। কিন্তু বছরের পর বছর সেগুলিকে কাবুল বিমানবন্দরের লাগোয়া এলাকায় রেখে দেওয়া হয়েছে। কাজে লাগানো হয়নি। বেশির ভাগ বিমানেই আগাছা জন্মেছে। ভেঙেও গিয়েছে বহু বিমান। সেগুলি পরে ফেলে দেওয়া জিনিসপত্রের দরে বিক্রি করা হয়েছে। কোথাও আধুনিক জাতীয় সড়ক বানানোর এক মাসের মধ্যেই রাস্তা ফেটে দুভাগ হয়ে গিয়েছে। হয়ে পড়েছে চলাচলের অযোগ্য। দুর্গম। তালিবান ও অন্য জঙ্গিদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য আফগান সেনাবাহিনীর জওয়ানদের জন্য ২ কোটি ৮০ লক্ষ ডলার ব্যয়ে নতুন পোশাক বানিয়ে পাঠিয়েছিল পেন্টাগন। কোনও আফগান জওয়ানের গায়ে ওঠেনি সে সব গত ২০ বছরে! আবার কোথাও আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আমেরিকার বরাদ্দ করা ৫ লক্ষ ডলারে বিশাল ভবন নির্মিত হওয়ার ৪ মাসের মধ্যেই দেওয়াল ফুঁড়ে জল ঢুকে সেই ভবনে কাজকর্ম অসম্ভব করে দিয়েছে। ভেঙে পড়েছে ইট, খসে পড়েছে বালি, সুড়কি।
সিগার-এর রিপোর্ট জানাচ্ছে, প্রকল্পগুলির অন্যতম আফগান বিমানবাহিনীর জন্য ইটালি থেকে আনা পরিবহণ বিমান। ৫৪ কোটি ৯০ লক্ষ ডলার মূল্যের ২০টি পরিবহণ বিমান ‘জি২২২’ ইটালি থেকে আনা হয়েছিল কাবুলে। কিন্তু তার মধ্যে ১৬ টিতেই পরে আগাছা জন্মায়। কোনওটা এক পাউন্ড কোনওটা সর্বাধিক ৩২ হাজার ডলারে বিক্রি করে দিতে হয়। আমেরিকার এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের বরাদ্দ করা ১৭ কোটি ৬০ লক্ষ ডলারে যে আধুনিক সড়কপথ বানানো হয়েছিল গারদেজ শহর থেকে খোস্ত প্রদেশ পর্যন্ত, কাজ শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যেই সেই রাস্তায় এত বড় বড় ফাটল দেখা দেয় যে তা দুর্গম হয়ে পড়ে। গাঁজা চাষ বন্ধ করার জন্য গত ১৫ বছরে আফগানিস্তানে ৮৬০ কোটি ডলার অর্থবরাদ্দ করেছিল আমেরিকা। গাঁজা উৎপাদনে আফগানিস্তান এখনও বিশ্বের প্রথম তিনটি দেশের অন্যতম। ১০ লক্ষ আফগান নাগরিকের জন্য একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তুলতে আমেরিকা বরাদ্দ করেছিল ১১ কোটি ৬০ লক্ষ ডলার। আমেরিকার সেনাবাহিনীর প্রযুক্তিবিদরাই তা উড়িয়ে দেন। সেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের একাংশ এখনও নির্মিত হয়নি। বাকি অংশে উৎপাদন আদৌ চালু হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্টই সংশয় রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy