‘মাইন কাম্ফ’-এর নতুন সটীক সংস্করণ। (ডানদিকে) অ্যাডল্ফ হিটলার। ছবি: এএফপি।
কাটল বাধা। এক রাশ উদ্বেগ আর বিতর্কের হাত ধরাধরি করেই ৭০ বছর পরে জার্মানিতে ফের প্রকাশিত হল ‘মাইন কাম্ফ’ (আমার সংগ্রাম)। গ্রন্থস্বত্বের মেয়াদ ফুরিয়েছে গত ৩১ ডিসেম্বর। আর আজ থেকে নাৎসি-নায়ক অ্যাডলফ হিটলারের এই আত্মজীবনী দেশের ক্রেতারা সরাসরি দোকান থেকেই কিনতে পারবেন বলে জানিয়েছে বইটির প্রকাশক সংস্থা ‘দ্য ইনস্টিটিউট ফর কন্টেম্পোরারি হিস্ট্রি’।
বিতর্কিত হলেও এত দিন কিন্তু বইটি জার্মানিতে সেই অর্থে নিষিদ্ধ ছিল না। বরং বিশ্ব বই-বাজারের একাধিক রিপোর্ট বলছে, ‘মাইন কাম্ফ’ ঘিরে জার্মান পাঠকের উৎসাহ সত্তর বছরেও কমেনি। ১৯৪৫-এর আগেই প্রায় দেড় কোটি কপি ছাপানো হয় বইটির। ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও। অনলাইনে তো বটেই, আজও বহু পাঠক পুরনো বইয়ের দোকানে এর মূল বা অনূদিত সংস্করণ খোঁজ করেন। তাই এর পুনঃপ্রকাশে জার্মান বই ব্যবসায়ীদের একাংশ আগাম উত্তেজনায় ফুটছেন। যদিও বার্লিন শহরের সব চেয়ে বড় বইয়ের দোকান ডাসম্যান প্রথম দিন থেকেই ধীরে খেলতে চাইছে। তাঁদের
কথায়, ‘‘এতো সংবেদনশীল একটা বই নিয়ে আমরা ফাটকা ব্যবসার পক্ষপাতী নই। একটাই কপি রেখেছি দোকানে। তা-ও কোনও বিজ্ঞাপনী প্রচার ছা়ড়াই।’’ পাঠকের অর্ডার বুঝেই বইয়ের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
‘মাইন কাম্ফ’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২৫ সালে। হিটলার তার আরও ৮ বছর পরে জার্মানির ক্ষমতায় আসেন। তারপর ১৯৪৫-এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পতন হয় নাৎসি-জার্মানির। পরাজয় নিশ্চিত ধরে নিয়ে হিটলার নিজেও বাঙ্কারে আত্মহত্যা করেন। ‘মাইন কাম্ফ’ অপ্রকাশিত সেই বছর থেকেই। আর বইটির স্বত্ব চলে যায় দক্ষিণ জার্মানির ব্যাভেরিয়ার প্রাদেশিক সরকারের হাতে। বইটি ফের প্রকাশ হলে দেশে ঘৃণা ছড়াতে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই ‘মাইন কাম্ফের’ পুনর্মুদ্রণ নিষিদ্ধ করা হয় সরকারি তরফে।
তবে এত দিন মূল বাধা ছিল গ্রন্থস্বত্বের। এ বার লেখক হিটলারের মৃত্যুর সত্তর বছর পেরিয়ে যাওয়ায় সেই বাধাও কাটল। কী বলছে নয়া প্রকাশক? মিউনিখের ইতিহাস বিষয়ক সংস্থাটির দাবি— মূলের হুবহু প্রকাশ নয়, বরং বইটির সঙ্গে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টীকা-ভাষ্যও জু়ড়ে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ২ হাজার পাতার বই। যার দাম পড়ছে ৫৯ ইউরো (৪ হাজার ৩০০ টাকা)। ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ অবশ্য ‘অমূল্যই’ বলছেন। তাঁরা সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন সমকালের ইতিহাসবিদদের টীকা-টিপ্পনির উপরেই। বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে সংস্থার এক কর্তা জানিয়েছেন, নাৎসি বাহিনীর বর্ণবাদী নীতি নিয়ে হিটলারের
নানাবিধ মিথ্যাচার, অসংলগ্ন যুক্তির মধ্যে থেকে সত্যিটা আলাদা করতেই এই সটীক সংস্করণ। কিন্তু এ বই পড়ায় যে আনন্দ নেই, স্বীকার করছেন মিউনিখের ইতিহাসবিদরা। তবু হিটলার আর তাঁর ইহুদি-নিধনের আসল চেহারাটা এই বই থেকেই আরও স্পষ্ট হবে বলে দাবি প্রকাশকের।
তাঁদের আরও দাবি, আজকের প্রজন্মকে হিটলারের প্রকৃত স্বরূপ চেনাতে স্কুলেও পাঠ্য হওয়া উচিত মাইন কাম্ফের এই নয়া সংস্করণ। কিন্তু ফের যদি ঘৃণা ছড়ায়? একনায়কই যদি আবার দেশের ‘নায়ক’ হয়ে ওঠেন! আশঙ্কা আছে বলেই, টীকা-ভাষ্য ছাড়া বইটির মূল পাঠ যে ভাবেই হোক আটকাতে চাইছে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেলের প্রশাসন।
বিতর্ক তবু পিছু ছাড়ছে না। একনায়ক হিটলারের ইহুদি-বিরোধী এই বই বাজারে ছড়ালে নব্য-নাৎসিদের পালে হাওয়া লাগতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশের বেশ কয়েকটি ইহুদি-সংগঠন। আবার এর বিপরীতে দাঁড়িয়ে অন্য অংশের দাবি, হিটলারের মুখোশ খোলার ক্ষেত্রে এর চেয়ে বড় পদক্ষেপ আর হতে পারে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy