Advertisement
E-Paper

Afghanistan: সরকার গঠন নিয়ে হক্কানি-বরাদরের বিরোধ চরমে, আইএসআই-কর্তার কাবুল সফর নিয়ে রহস্য

হক্কানির শীর্ষস্তরের নেতৃত্ব চাইছেন, কাবুলের নতুন তালিব সরকারের চরিত্র হোক আগের বারের (১৯৯৬-২০০১) মতোই মধ্যযুগীয়। বরাদর তা চাইছেন না।

এ বার তালিবানের কোন মুখ? -ফাইল ছবি।

এ বার তালিবানের কোন মুখ? -ফাইল ছবি।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২১:৫৭
Share
Save

হক্কানি গোষ্ঠীর সঙ্গে তালিবদের মধ্যপন্থী নেতা মোল্লা বরাদরের বিরোধ তুঙ্গে পৌঁছেছে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে দাবি, এই মতবিরোধের জন্যই ক্ষমতা দখলের সপ্তাহ তিনেক পরও সরকার গঠন করতে পারেননি তালিব নেতারা। পাকিস্তানের আইএসআই মদতপুষ্ট হক্কানি গোষ্ঠী তালিবদের ক্ষমতা দখলের সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল। এখন সরকার গঠনে তাদের দাবি জোরদার ভাবে তুলে ধরতে চাইছে তারা। এই পরিস্থিতিতে দেশে সব কাজ ফেলে রেখে ইসলামাবাদ থেকে তড়িঘড়ি কাবুলে পৌঁছে গিয়েছেন পাকিস্তানের আইএসআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফইজ হামিদ। তাঁর এই ‘রহস্যময়’ হঠাৎ সফর ঘিরে উঠছে নানা প্রশ্ন।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, হক্কানিদের পাশে দাঁড়াতেই হামিদের এই কাবুল সফর। যাতে বরাদরের নতুন সরকারে থাকতে পারেন হক্কানিরা। কারণ, কাশ্মীরে অশান্তি, ভারতে বিভিন্ন নাশকতামূলক কাজকর্ম সংঘটিত করতে অতীতে বহু বার এই হক্কানি নেটওয়ার্কের সন্ত্রাসবাদীদের ব্যবহার করেছে আইএসআই। হক্কানিরা কাবুলে তালিবদের নতুন সরকারে থাকলে কাশ্মীরকে ভারত থেকে ছিনিয়ে আনার স্বপ্নটা আইএসআই আবার দেখতে পারবে।

শুধু যে হামিদই কাবুলে পৌঁছেছেন তাই নয়, হক্কানিদের ব্যবহার করে আফগানিস্তানে পঞ্জশির উপত্যকায় প্রতিরোধ বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে তালিবদের শক্তি জোগাতে ইতিমধ্যেই ইসলামাবাদ পাক সেনাও পাঠিয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর।

আফগানিস্তানকে যাঁরা হাতের তালুর মতো চেনেন, সেই বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, হক্কানি-বরাদরের মতবিরোধই তালিবানের পরিবর্তিত সংস্করণের সম্ভাবনা কমিয়ে দিচ্ছে। মতবিরোধের কারণ, আমেরিকা-সহ ন্যাটো জোটের সেনাবাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও উত্তর প্রান্ত থেকে এসে আফগানিস্তানের একের পর এক প্রদেশ দখল করে কাবুলের তখতে এ বার তালিবদের পৌঁছে দেওয়ার জন্য সশস্ত্র তালিব যোদ্ধাদের পরিচালনার দায়িত্বে ছিল পাক মদতপুষ্ট হক্কানি নেটওয়ার্ক। হক্কানির শীর্ষস্তরের নেতৃত্ব চাইছেন, কাবুলের নতুন তালিব সরকারের চরিত্র হোক আগের বারের (১৯৯৬-২০০১) মতোই ‘মধ্যযুগীয়’। ইসলামি মতাদর্শকে অক্ষরে অক্ষরে কার্যকর করার জন্য যে সরকার আগের মতোই হবে বর্বর, অনুদার। আপাদমস্তক রক্ষণশীল তালিবদের সেই নতুন সরকারে দেশের বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী ও উপজাতি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব থাকুক, চাইছে না পাক মদতপুষ্ট হক্কানি নেটওয়ার্ক। যাতে আপত্তি রয়েছে আমেরিকা-সহ ন্যাটো জোটের দেশগুলির।

অন্য দিকে, কাবুলের ক্ষমতা দখলের আগে দোহায় আমেরিকা-সহ ন্যাটো জোটের পশ্চিমি দেশগুলির সঙ্গে হওয়া শান্তিপ্রতিষ্ঠার বৈঠকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে চাইছেন মোল্লা বরাদর। চাইছেন, আমেরিকা-সহ ন্যাটো জোটের দেশগুলিকে কাবুলে তালিবদের নতুন সরকারের পাশে থাকুক। তাই বরাদর চাইছেন নতুন সরকারে সংখ্যাগরিষ্ঠ পাশতুনদের প্রতিনিধিত্ব ছাড়াও থাকুক দেশের বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী ও উপজাতি সম্প্রদায়গুলির প্রতিনিধিরা

যার মধ্যে রয়েছে এখন প়ঞ্জশির উপত্যকায় তালিবদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া তাজিক, উজবেক, তুর্কমেনিরাও। রয়েছে হাজারা জাতিগোষ্ঠী, তালিবদের আগের জমানায় যাঁরা দারুণ ভাবে নির্যাতিত হয়েছিলেন। এমনকি, পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশ লাগোয়া আফগান বালুচিদেরও নতুন সরকারে জায়গা দিতে চাইছেন মোল্লা বরাদর। আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলিকে তুষ্ট রাখতে। যাতে আগামী দিনে রাষ্ট্রপুঞ্জের সহায়তা পাওয়া যায়। মেলে বিশ্বব্যাঙ্ক বা আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের ঋণ দেশের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য।

আর এখানেই আপত্তি পাক মদতপুষ্ট হক্কানি নেটওয়ার্কের। কারণ, হক্কানি নেতাদের বিশ্বাস তাঁদের পাশে রয়েছে পাকিস্তান। রয়েছে চিন, রাশিয়াও। তাই পশ্চিমি দেশগুলির কথা না ভেবে আগের বারের মতো এ বারও মধ্যযুগীয় ইসলামি মতাদর্শের গোঁড়ামিতেই আস্থা রাখুক কাবুলের নতুন তালিবান সরকার।

এই মতবিরোধ রয়েছে বলেই কাবুল দখলের তিন সপ্তাহ পরেও সরকার গঠন করতে পারেনি তালিবরা। শনিবার অবশ্য তারা ঘোষণা করেছে, কারা কারা সেই সরকারে থাকছেন দু’এক দিনের মধ্যেই তা জানানো হবে। যদিও শনিবারই হক্কানি নেটওয়ার্কের তরফে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী ও উপজাতি সম্প্রদায়গুলিকে বাদ দিয়ে ‘একলা চলো’-র পথে হাঁটতে বরাদর গোষ্ঠী রাজি থাকলে হক্কানিরা নতুন তালিবান সরকারে থাকবেন। না হলে থাকবেন না।

আগামী দু’তিন দিনে কী হয় কাবুলে তার উপর তাই নজর রাখছেন বিশেষজ্ঞরা। যদি হামিদের দৌত্য সফল হয়, যদি হক্কানিদের দাবিই মান্যতা পায় কাবুলে তালিবদের নতুন সরকার গঠনের ক্ষেত্রে, তা হলে তালিবানের নতুন সংস্করণের স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে যাবে, বিশ্বাস বিশেষজ্ঞদের।

Afghanistan Taliban 2.0 Kabul

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}