ইজ়রায়েল ও প্যালেস্তাইন সংঘর্ষ চলতেই থাকছে। —ফাইল চিত্র।
দু’দিকেই এক ছবি।
শ্নাইডার শিশু হাসপাতালের করিডরে দূর থেকে বাবাকে দেখতে পেয়েই দৌড় লাগায় ওহাদ মুন্দার। দু’হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়েছিল বাবাও। কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ল ওহাদ। আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল বাবা। ৪৮ দিন হামাসের ডেরায় বন্দি ছিল ৯ বছরের ইজ়রায়েলি বালক। গত কাল মুক্তি পেয়েছে সে। ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ও পূর্ব জেরুসালেমেও উৎসবের রোশনাই। ১৩ জন ইজ়রায়েলির মুক্তির বিনিময়ে গত কাল ৩৯ জন প্যালেস্টাইনিকে জেল থেকে ছাড়া হয়েছে। ২৪ জন মহিলা ও ১৫ জন কিশোর।
ইজ়রায়েল জানিয়েছিল, আজ আরও ৪২ জন প্যালেস্টাইনি বন্দিকে ছাড়া হবে। পরিবর্তে ১৪ জন ইজ়রায়েলিকে মুক্তি দেবে হামাস। তবে এ নিয়ে অশান্তি দানা বাধে আজ। হামাসের দাবি, চুক্তিমতো ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছে না ইজ়রায়েল। ত্রাণ না দিলে তারা বন্দি ছাড়বে না। ইজ়রায়েল পাল্টা জানায়, বন্দি না ছাড়লে আবার যুদ্ধ শুরু করা হবে। শেষ পর্যন্ত সেই অচলাবস্থার শেষে হামাস জানিয়েছে, সংঘর্ষবিরতির দ্বিতীয় দিনে আরও ১৩ জন ইজ়রায়েলি এবং সাত জন বিদেশিকে মুক্তি দেবে তারা। যদিও এখনও হামাসের অভিযোগ, প্রবীণদের ছাড়ছে না ইজ়রায়েল।
ঘরেও বেশ চাপে ইজ়রায়েল সরকার। আজ রাতে হাজার হাজার ইজ়রায়েলি নাগরিক সরকার-বিরোধী বিক্ষোভ দেখান তেল আভিভে। তাঁদের দাবি, হামাসের হাত থেকে সমস্ত বন্দিকে উদ্ধার করে আনতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিও জানাচ্ছেন। জেরুসালেমে আজও বিক্ষোভ-আন্দোলন চলেছে। সাধারণ মানুষ প্রথমে নেতানিয়াহুর দফতরের সামনে ভিড় করেন। পরে তাঁর বাসভবনের সামনে সরকার-বিরোধী স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা।
প্রথম দফার বন্দি-বিনিময় সফল হতে আশার আলো দেখা দিয়েছিল। এক প্যালেস্টাইনি মানবাধিকার আইনজীবী মহম্মদ খাতিব আজ বলেন, ‘‘ইজ়রায়েলি বা প্যালেস্টাইনি, বন্দি-মুক্তি দু’পক্ষের জন্যই আশার আলো। ওরা আমাদের মানুষ বলে গ্রহণ করুক, আমাদের অস্তিত্বকে স্বীকার করুক, এটাই আমাদের চাওয়া। আমরাও মানুষ। আমাদের নাম আছে, পরিবার আছে, জীবন আছে। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর এক কিশোরের চোখে আমি এটাই দেখলাম।’’
আজও বহু প্যালেস্টাইনিকে গ্রেফতার করা হয়েছে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে। গাজ়া শান্ত হলেও পশ্চিম ভূখণ্ড জ্বলছে। অভিযোগ, আসকার এবং বালাটা শরণার্থী শিবিরে রোজই হামলা চালাচ্ছে ইজ়রায়েলি বাহিনী। আজ তারা ১৮টি বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে। ৯ জন প্যালেস্টাইনিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ছেলেকে আটক করার সময়ে এক বৃদ্ধকে এমন মারধর করা হয়েছে যে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি তিনি।
যুদ্ধ-বিরতির দ্বিতীয় দিনে আজ দলে দলে প্যালেস্টাইনি গাজ়ায় নিজেদের ঘরে ফিরেছেন। যদিও ফিরে গিয়ে ভগ্নস্তূপ ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পাননি তাঁরা। দক্ষিণ গাজ়ার খান ইউনিসের বাসিন্দা এক মহিলা বলেন, ‘‘বাড়িতে এসেছিলাম, যদি কিছু পাওয়া যায়, সেই সন্ধানে। কিন্তু কিছুই অক্ষত পাইনি।’’
তবু বহু দিন বাদে কাল রাতে মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছেন। গাজ়া শহরে আজ বহু দিন বাদে বাজার বসেছিল। সেই চেনা ভিড়। দু’দিন বাদে আবার যুদ্ধ শুরু হবে। ইজ়রায়েল হুমকি দিয়ে রেখেছে, আরও ভয়াবহ গতিতে হামলা শুরু করবে তারা। তাই সাধ্যমতো খাবার, পানীয় জল মজুত করে রাখার চেষ্টা করছেন বাসিন্দারা।
অনেকে উত্তর গাজ়াতেও ফিরেছেন বলে শোনা গিয়েছেন। ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এই অংশ। গাজ়ার এক সাংবাদিক হানি মেহমুদ জানান, যুদ্ধের মাঝে অনেকে পরিবারের থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছেন। যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁরা পরিবারের আর কেউ জীবিত রয়েছেন কি না, সেই সন্ধান শুরু করেছেন। তবে এ-ও কত ক্ষণ, জানা নেই। যে কোনও সময় ফের শুরু হয়ে যেতে পারে যুদ্ধ, আছড়ে পড়তে পারে রকেট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy