Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী গোতাবায়া, অস্বস্তিতে দিল্লি 

প্রাক্-নির্বাচনী একাধিক সমীক্ষায় তিনিই এগিয়ে ছিলেন। শনিবারের নির্বাচনের ফল বেরোতে দেখা গেল, ৫২.২৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ৭০ বছরের গোতাবায়া। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ প্রেমাদাসা ৪১.৯৯ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে।

গোতাবায়া রাজাপক্ষ।—ছবি এএফপি।

গোতাবায়া রাজাপক্ষ।—ছবি এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
কলম্বো শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:১৩
Share: Save:

এক সময় তামিল টাইগারদের কড়া হাতে দমন করে শ্রীলঙ্কার মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন গোতাবায়া রাজাপক্ষ। রবিবার দেশের মানুষ প্রমাণ করে দিলেন, সেই বিশ্বাস হারায়নি। শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হলেন দেশের প্রাক্তন প্রতিরক্ষা সচিব এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের ভাই গোতাবায়া।

প্রাক্-নির্বাচনী একাধিক সমীক্ষায় তিনিই এগিয়ে ছিলেন। শনিবারের নির্বাচনের ফল বেরোতে দেখা গেল, ৫২.২৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ৭০ বছরের গোতাবায়া। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ প্রেমাদাসা ৪১.৯৯ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে। সোমবারই গোতাবায়া শপথ নেবেন।

শনিবার নির্বাচনের দিন একাধিক হিংসার ঘটনা ঘটলেও, ভোট দিয়েছেন প্রায় ৮০ শতাংশ দেশবাসী। জেতার পরে তাই সবার আগে শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিয়েছেন সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। টুইটারে সমর্থকদের প্রতি তাঁর আর্জি, ‘শ্রীলঙ্কার প্রত্যেকটি মানুষ এই নতুন যাত্রায় শরিক হতে চলেছে। এ কথা ভুললে চলবে না। তাই জয়ের উদ্‌যাপন হোক শান্তিপূর্ণ। সম্মান ও শৃঙ্খলা বজায় থাকুক।’

রাজাপক্ষের জয়ের পিছনে তাঁর সন্ত্রাসবিরোধী কড়া অবস্থানকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন অনেকে। ইতিহাস ঘাঁটলে সে কথা আন্দাজ করাটাও খুব একটা কঠিন নয়। দেশের প্রতিরক্ষা সচিব ছিলেন। দীর্ঘদিন কাটিয়েছেন সেনাবাহিনীতে। নব্বইয়ের দশকে এলটিটিই-র বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের

অবসান হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। এই অভিজ্ঞতাই গোতাবায়ার লড়াইয়ে কাজ দিয়েছে। এ বছর ইস্টারের সকালে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়েছিল শ্রীলঙ্কায়। তাতে প্রাণ হারান ২৫৯ জন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েক মাস আগের ওই ঘটনাই রাজাপক্ষের নির্বাচনী প্রচারে মূল অস্ত্র হয়ে উঠেছিল। ক্ষমতায় এলে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। তাই গোতাবায়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, দুর্নীতি এবং চিনকে অন্যায় ভাবে সমর্থনের অভিযোগ উঠলেও শ্রীলঙ্কার মানুষ শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার আশ্বাসেই আস্থা রেখেছেন বলে মনে করছেন রাজনীতিবিদরা। কট্টরপন্থী মনোভাবের জন্য সংখ্যালঘু মুসলিম ও তামিলরা গোতাবায়ার উপরে অসন্তুষ্ট হলেও সংখ্যাগুরু সিংহলীিদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। বৌদ্ধদেরও সমর্থনও পেয়েছেন তিনি।

রবিবার ভোটের ফল জানাজানি হতেই গোতাবায়াকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন ইউএনপি-র মন্ত্রী এবং অন্যমত প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ প্রেমদাসা। এ বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভারতের প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল তাঁর প্রতিই। এ দিন গোতাবায়াকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘আপনাকে শুভেচ্ছা। দুই দেশের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি এবং গোটা উপমহাদেশের নিরাপত্তার জন্য আপনার সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করতে চাই।’’ জবাবি টুইটে ধন্যবাদ জানিয়েছেন গোতাবায়াও। লিখেছেন, ‘উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও ভারতের মানুষকে ধন্যবাদ। ইতিহাস আর বিশ্বাসের নিরিখে আমাদের দু’টি দেশ এক সুতোয় বাঁধা। এই বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হবে আশা করি। আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের অপেক্ষায় রইলাম।’

তবে টুইট সম্ভাষণ যতই মধুর হোক না কেন, গোতাবায় শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় সামান্য হলেও অস্বস্তিতে ভারত। কারণ চিনের কাঁটা। চিন ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে বরাবর সেতু হিসাবে কাজ করেছে রাজাপক্ষ পরিবার। অনেকের দাবি, ২০১৫-য় মহিন্দা রাজাপক্ষের নির্বাচনী প্রচারে বেজিং প্রচুর অর্থ ঢেলেছিল। তাই গোতাবায়ার জমানায় ভারতের তুলনায় চিনকেই যে শ্রীলঙ্কা বেশি গুরুত্ব দেবে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তার উপরে আগামী বছরের শুরুতেই শ্রীলঙ্কায় পার্লামেন্ট নির্বাচন। তাতে ফের প্রধানমন্ত্রীত্ব ফিরে পেতে মরিয়া চেষ্টা চালাবেন গোতাবায়ার দাদা মহিন্দা রাজাপক্ষ। তিনি জয়ী হলে, রাজাপক্ষ ভাইদের হাতেই উঠবে শ্রীলঙ্কা শাসনের রাশ। এই অঙ্কেই দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে ভারতের।

অন্য বিষয়গুলি:

President Election Gotabhaya Rajapaksa Sri Lanka
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE