আমাজনের গভীর জঙ্গলে আদিবাসী অধ্যুষিত আমাপা প্রদেশ। আধুনিক সভ্যতার ছায়া এখনও পড়েনি। বাইরের জগৎটা ঠিক কেমন, জানা নেই সেখানকার বাসিন্দাদের। এরই মধ্যে আচমকা সেখানে হানা দিল এক দল বন্দুকবাজ। কুপিয়ে হত্যা করল গ্রামের মোড়লকে।
কোনও গল্প-উপন্যাস নয়। উত্তর ব্রাজিলে আমাজনের গভীর জঙ্গলে সোনার খোঁজে পা পড়েছে দুষ্কৃতীদের। সোনার খনির দখল নিয়ে সংঘর্ষ লাগতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে ইতিমধ্যেই। পুলিশ নজর রাখছে পরিস্থিতির উপরে। কিন্তু প্রশাসনের ভূমিকাতেই গলদ রয়েছে বলে অভিযোগ একাংশের। অনেকেরই বক্তব্য, ব্রাজিলের অতি-দক্ষিণপন্থী প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো-ই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তিনি জঙ্গল ও জঙ্গলবাসীদের সংরক্ষণের বিরুদ্ধে। বলসোনারো মনে করেন, যে সংখ্যক মানুষ ওখানে থাকে, তার তুলনায় জঙ্গল অনেক বড়। তাই জঙ্গলের খনি এলাকা খুলে দিতে আপত্তি নেই তাঁর। এমনকি বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে খননকাজ শুরু করার চিন্তাভাবনা রয়েছে বলেও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি। নিন্দুকদের দাবি, সেই সুযোগেই বেআইনি খননকাজ শুরু হয়ে গিয়েছে আমাজনের জঙ্গলে। বিপন্ন জঙ্গলবাসীদের জীবন।
স্থানীয় সংবাদ সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি ১০-১৫ জনের একটি সশস্ত্র দল আমাপার ইভিটোটো গ্রামে হানা দেয়। ওয়াজাপি সম্প্রদায়ের বাস ওই গ্রামে। জঙ্গলের মধ্যে প্রায় ৬ লক্ষ হেক্টর এলাকাজুড়ে ১২০০ ওয়াজাপি বাস করেন। আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বহিরাগতদের দেখে ভয়ে ইভিটোটো গ্রাম ছেড়ে পালান সেখানকার বাসিন্দারা। কাছের মারিরি গ্রামে আশ্রয় নেন তাঁরা। কাছের বলতেও পায়ে হেঁটে ৪০ মিনিটের দূরত্ব। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ওয়াজাপিদের থেকে জানতে পেরেছে, তাঁদের নেতা, ৬৮ বছর বয়সি এমিরা ওয়াজাপিকে খুন করেছে সোনা-সন্ধানীরা। তারা নদীর কাছে ফেলে রেখে যায় এমিরার দেহটা। কুপিয়ে খুন করার চিহ্ন স্পষ্ট।
সোনার দখল নিয়ে হালে ব্রাজিলে চাপা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, সে কথা অস্বীকার করছে না প্রশাসনও। কিন্তু এ ভাবে জঙ্গলে ঢুকে কোনও আদিবাসী নেতাকে খুন করার ঘটনা স্মরণকালে মনে পড়ছে না কারও। রবিবার আমাপার ওই অঞ্চলে পৌঁছে গিয়েছিল পুলিশ, সেনাবাহিনী। তদন্ত
শুরু হয়েছে। সেনেটর রোডল্ফ রডরিগেজ় একটি ব্রাজিলীয় দৈনিককে বলেছেন, ‘‘গত ৩০ বছরে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে বহিরাগতদের তাণ্ডবের ঘটনা এই প্রথম।’’
এ বছর জানুয়ারিতেই ক্ষমতায় এসেছেন বলসোনারো। কিছু দিন আগেই একটি দৈনিককে বলেছিলেন, ‘‘এখানে এমন বহু জায়গা রয়েছে, যেখানে মানুষের পা পড়েনি। কিন্তু প্রচুর পরিমাণ মূল্যবান খনিজ রয়েছে। আমেরিকার মতো কোনও প্রথম বিশ্বের দেশ যদি আমাদের সাহায্য করে, তা হলে তাদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ওই খনিজ সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হবে।’’ আমাপার ঘটনার জন্য তাঁর এই সিদ্ধান্তকেই দুষছেন অনেকে। প্রেসিডেন্ট যদিও চুপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy