Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Global Warming

Global Warming: মানুষের হাতে সময় ৩ বছরেরও কম, রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু-রিপোর্টে উদ্বেগ

বিশ্ব উষ্ণায়নকে নিয়ন্ত্রণে আনতে শক্তি ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে।

হাতে আর তিন বছর।

হাতে আর তিন বছর। ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
প্যারিস শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২২ ০৫:২১
Share: Save:

আর বিলম্ব নয়। হাতে মাত্র তিন বছর। এর মধ্যে কার্বন নিঃসরণে রাশ টানতে না পারলে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী। যে হারে পৃথিবীর উত্তাপ বাড়ছে, সবুজ কমছে, নিরন্তর ক্ষয় হচ্ছে ওজ়োন স্তর, তাতে পৃথিবীকে আর বাসযোগ্য রাখাটা দুষ্কর। আজ ২৮০০ পাতার সবিস্তার রিপোর্টে (‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ২০২২: মিটিগেশন অব ক্লাইমেট চেঞ্জ’) মানবসমাজকে এই একান্ত জরুরি বার্তাটি দিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু সংক্রান্ত সংস্থা ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)।

আজ আইপিসিসি যে রিপোর্ট পেশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী কার্বনের নিঃসরণ কমাতে মানুষের কাছে তিন বছরেরও কম সময় আছে। অর্থাৎ ২০২৫ সালের আগেই এ নিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ করতে হবে। পাশাপাশি বলা হয়েছে, গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৩ শতাংশ কমিয়ে ফেলতে হবে। ওই সময়েই মিথেনের পরিমাণও কমিয়ে ফেলতে হবে এক-তৃতীয়াংশ। না হলে বিপজ্জনক ভাবে বাড়বে তাপমাত্রা। বহু দেশ ভুগবে জলকষ্টে। বিশ্ব জুড়ে বাড়বে জলস্তর। তলিয়ে যাবে বহু জায়গা। খাদ্যসঙ্কট দেখা যাবে। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস রিপোর্ট প্রসঙ্গে ভিডিয়ো বার্তায় বলেছেন, ‘‘ কিছু সরকারি কর্তা এবং শিল্পপতি এক রকম কথা বলেন, আর অন্য রকম আচরণ করেন। এতে পৃথিবী বিপর্যয়ের দিকে চলেছে।”

আইপিসিসি-র এই রিপোর্টটি অনুমোদন করেছে ১৯৫টি সদস্য দেশ। যা বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে সবচেয়ে বিশদ রিপোর্ট বলে মানছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে বারবার সতর্ক করলেও অভিযোগ, আমেরিকা-সহ একাধিক দেশ যেমন কার্বন নিঃসরণ কমানোর দায় চিন-ভারতের মতো দেশগুলির দিকে ঠেলতে ব্যস্ত। অন্য দিকে এই দেশগুলিও উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলে তা কমানোর দায় উন্নত বিশ্বের কোর্টেই ঠেলে দিয়েছে। সব মিলিয়ে প্যারিস থেকে গ্লাসগো জলবায়ু আলোচনা বা চুক্তি— সবই থেকে গিয়েছে নিছক কাগজে-কলমেই।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমায়িত করার যে আন্তর্জাতিক লক্ষ্য রয়েছে, তা কার্যত ‘লাইফ সাপোর্টে’ রয়েছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ওই তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রিতে বেঁধে দেওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল, তার দ্বিগুণেরও বেশি, অর্থাৎ তিন ডিগ্রিরও বেশি তাপমাত্রা বাড়তে পারে এই গ্রহের। এই তাপমাত্রাকে কমিয়ে আনার যে সময়সীমা দেওয়া হয়েছে, তা বেশ কম বলেই মানছেন সকলে। আইপিসিসি-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১০-২০১৯ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী গড় গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ মানব সভ্যতার ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণে ছিল।

বিশ্ব উষ্ণায়নকে নিয়ন্ত্রণে আনতে শক্তি ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে জোর দেওয়া হয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর উপরে। এর পাশাপাশি বিকল্প জ্বালানির (হাইড্রোজেন) ব্যবস্থাও যে প্রয়োজন, তা জানাচ্ছে রিপোর্ট। আইপিসিসি শীর্ষ কর্তা হুসাং লি জানিয়েছেন, বেশ কিছু দেশ পরিবেশগত ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করেছে। এই ব্যবস্থা যদি আরও ব্যাপক ভাবে প্রয়োগ করা হয়, নতুন উদ্ভাবনের পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণও কমিয়ে আনা যাবে। রিপোর্টের অন্যতম লেখিকা জয়শ্রী রায় বলেছেন, ‘‘এখনও সময় আছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ঠেকানো সম্ভব।’’

অন্তত ১৮টি দেশ দেখিয়ে দিয়েছে, গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো সম্ভব। কার্বন মুক্ত কিংবা কার্বন পরিমাণ কম, এমন প্রযুক্তির মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানির দহন কমানো সম্ভব হয়েছে। পরিবহণ ক্ষেত্রেও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির মাধ্যমে দূষণ কমানো সম্ভব হয়েছে। গত এক দশকে ব্যাটারির দাম ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়াও এর একটা বড় কারণ। ডিজিটালাইজ়েশনের ফলেও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির পরিমাণ বেড়েছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, গত কয়েক দশকে মেরু অঞ্চলে যে ভাবে বরফ গলে চলেছে, পৃথিবীর নানা প্রান্তে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটেছে, তা এই বিপর্যয়েরই ইঙ্গিত। বারবার সতর্ক করা হলেও অধিকাংশ দেশই তা কার্যত অগ্রাহ্য করেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Global Warming Environment United Nation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy