মিনিয়াপোলিসের সিটি হলে সাংবাদিক বৈঠকে জর্জ ফ্লয়েডের পরিবার। ছিল তাঁর ছ’বছরের মেয়ে জিয়ানাও। —ছবি রয়টার্স।
শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে স্বামীর মৃত্যুর প্রায় আট দিন পরে, গত কালই প্রথম বার প্রকাশ্যে দেখা গেল তাঁকে। মাইক হাতে রক্সি ওয়াশিংটন। মিনিয়াপোলিসের সিটি হলে জর্জ ফ্লয়েডের স্মরণসভায় তখন উপচে পড়ছে ভিড়। মায়ের ঠিক পাশেই সাদা টপ পরা জর্জের ছ’বছরের মেয়ে জিয়ানা। তার দিকে তাকিয়েই রক্সি ভাঙা গলায় বললেন, ‘‘মেয়েটা আমার চোখের সামনেই বড় হবে। এক দিন গ্র্যাজুয়েটও হবে। কিন্তু জর্জের কিছুই দেখা হল না।’’
ছোট্ট জিয়ানা চুপ। ডায়াস ছেড়ে আসা মাকে জড়িয়ে ধরে এক বার শুধু চোখ বুজল সে। তার পর হল থেকে বেরিয়ে এল বাবার বন্ধু, প্রাক্তন বাস্কেটবল তারকা স্টিফেন জ্যাকসন সিনিয়রের হাত ধরে। রাস্তায় নেমে চাপল কাঁধে। মুখখানা উজ্জ্বল, হাসি-হাসি। বাবার জন্য গর্ব নাকি? ‘তোমার বাবা কী করেছিল, তুমি জানো?’— ক্যামেরার পিছন থেকে এক জন প্রশ্ন ছুড়লেন খুদের দিকে। এ বার আরও ঝকঝকে জিয়ানা। সটান উত্তর দিল— ‘আমার বাবা তো দুনিয়াই বদলে দিল!’ এই ক্লিপ ভাইরাল হতেই এক নেটিজ়েন বললেন, ‘‘আট দিনেই যেন অনেকটা বড় হয়ে গেল মেয়েটা।’’
খুনি পুলিশের শাস্তি চেয়ে সাত দিন ধরে প্রতিবাদে ফুঁসছে আমেরিকা। কার্ফু-মোড়া দেশের প্রায় সব বড় শহর সাক্ষী থেকেছে বিক্ষোভের। চলেছে ধরপাকড়, সংঘর্ষ। ন্যাশনাল গার্ড নেমেছিল আগেই। বিক্ষোভ ঠেকাতে সেনা নামানোর হুমকিও দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কাল প্রতিবাদের অষ্টম দিনে দেখা গেল, বিচ্ছিন্ন কিছু সংঘর্ষের ঘটনা ছাড়া মোটের উপর আমেরিকা শান্তই। ‘‘না, সেনার ভয়ে নয়। জর্জের পরিবার যে অশান্তি চাইছে না। তবে বিচার আমরা চাই-ই,’’ হিউস্টনে জর্জের স্মরণ-মিছিল থেকে বললেন এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণী। প্রায় ৬০ হাজার মানুষ হাঁটলেন জর্জের জন্য। কিশোর বয়সে মার্টিন লুথার কিংয়ের সঙ্গে পা-মেলানো বৃদ্ধ বিল লসন হাঁক দিলেন, ‘‘এই ভিড় থেকেই চিৎকার উঠুক। অনেক দিন তো মুখ বুজেই থাকলাম!’’
আরও পড়ুন: বিক্ষোভকারীদের জন্য দরজা খুলে দিলেন রাহুল
হাঁটু দিয়ে জর্জ ফ্লয়েডের গলা চেপে রাখা পুলিশের এই ছবিই ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।
কাল বহু ক্ষেত্রে ‘শান্ত’ দেখা গিয়েছে পুলিশ-প্রশাসনকেও। শুক্রবার মিনিয়াপোলিসে গ্রেফতার হয়েছিলেন দুই সাংবাদিক। সে জন্য কাল ক্ষমা চেয়েছেন প্রদেশের গভর্নর। সোমবার হোয়াইট হাউস লাগোয়া একটি পার্ক থেকে বলপ্রয়োগ করেই বিক্ষোভকারীদের হটিয়েছিল পুলিশ। কাল দেখা গেল, আরও বড় জমায়েত। কার্ফু শুরুর পরেও। পুলিশ শুধু নজর রাখল দূর থেকে।
তবে কালও সূর্য ডোবার পরে নিউ ইয়র্ক থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো বেশ কিছু শহরে কার্ফু ভেঙে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে জড়িয়েছেন প্রতিবাদীদের একাংশ। লুটপাট, ভাঙচুর অবশ্য তেমন হয়নি। সূত্রের খবর, ২৬ মে থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই অবস্থায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফ্লয়েড-খুনের সুবিচার চেয়ে আজ সরব হয়েছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। সূত্রের খবর, কৃষ্ণাঙ্গদের সমানাধিকারের দাবিতে পোক্ত নীতিবদলের আর্জি জানিয়ে স্থানীয় সময় আজ রাতে জ়ুম-কনফারেন্সে যোগ দিতে পারেন বারাক ওবামা।
মার্কিন বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে সমাবেশ লন্ডনের হাইড পার্কে। —ছবি এপি
ফ্লয়েড-খুনের তদন্তে গভীরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে সেনেটও। আমেরিকার পরিস্থিতি নিয়ে আজ উদ্বেগ প্রকাশ করে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মুখপাত্র স্টিফেন সেবার্ট বলেন, ‘‘দুঃখজনক এই মৃত্যুর ঘটনা কিন্তু চাইলেই এড়ানো যেত।’’ চিনের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, তাদের আশা, এই বর্ণবিদ্বেষ-জনিত সমস্যা সমাধানে শীঘ্রই সুচিন্তিত পদক্ষেপ করবে ওয়াশিংটন।
আরও পড়ুন: সীমান্ত খুলল ইটালি, সতর্ক বাকি ইউরোপ
বিক্ষোভকারীদের দমন করতে যখন সেনা নামানোর হুমকি দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তখন টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে বিক্ষোভকারীদের সমর্থন করে পোস্ট দিয়েছেন ট্রাম্পের ছোট মেয়ে টিফানি ট্রাম্প। আজ ট্রাম্পের প্রতিরক্ষাসচিব মার্ক এস্পারও ফ্লয়েড-খুনের ঘটনাকে ‘ভয়াবহ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলে উপস্থিত সব পুলিশ অফিসারকেই এই খুনের জন্য দায়ী করা উচিত।’’
মিনেসোটার পুলিশ প্রধান টড অ্যাক্সলও আজ অভিযুক্ত অফিসার ডেরেক শভিনকে একহাত নিয়ে বলেন, ‘‘এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমার সব অফিসারকে জানিয়েছি, কারও যদি শভিনের বলপ্রয়োগ যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়, তারা যেন অবিলম্বে চাকরি ছেড়ে দেয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy