Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
China

গালওয়ানে ভারতীয় সেনা হত্যার ভিডিয়ো দেখানো হল চিনের কমিউনিস্ট পার্টির পার্টি কংগ্রেসে

২০২০ সালের ১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনাবাহিনীরসঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছিলেন ২০ জন ভারতীয় জওয়ান। দীর্ঘ ৪৫ বছর পরে ভারত-চিন সেনাবাহিনী এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছিল।

গালওয়ান সংঘর্ষের এই ভিডিয়ো ক্লিপ দেখানো হয়েছে সম্মেলনে।

গালওয়ান সংঘর্ষের এই ভিডিয়ো ক্লিপ দেখানো হয়েছে সম্মেলনে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২২ ০৬:৫১
Share: Save:

চিন আছে চিনেই!

‘গ্রেট হল অব দ্য পিপল’-এ আজ থেকে শুরু হয়েছে চিনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র সপ্তাহব্যাপী সম্মেলন। প্রথম দিনের বড় অংশ জুড়েই থাকল নিজেদের পরাক্রমের ইতিবৃত্ত। সূত্রের খবর, সম্মেলনে দেখানো হয়েছে গালওয়ান সংঘর্ষের কিছু অংশের ভিডিয়ো ক্লিপ। চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গালওয়ানের ঘটনাকে নিজের শক্তিপ্রদর্শনের অন্যতম হাতিয়ার করেছেন বলে মত কূটনীতিকদের একাংশের। তাঁদের মতে, কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলনে গালওয়ান-সংঘর্ষের ভিডিয়ো দেখানো নয়াদিল্লি-বেজিং সম্পর্কের তিক্ততাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

গালওয়ানের ভিডিয়ো দেখানোর লক্ষ্য যদি ভারত হয়, তা হলে তাইওয়ান নিয়ে জিনপিংয়ের বক্তব্যের নিশানা অবশ্যই আমেরিকা। সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা, ‘‘তাইওয়ানে বলপ্রয়োগ করা হবে না, এমন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না।’’ চিনের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য, তাইওয়ানের ভবিষ্যৎ ঠিক করবে চিনের আমজনতাই। জবাব দিতে দেরি না করে তাইওয়ানও আজ বলেছে, মাথা নত করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।

২০২০ সালের ১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনাবাহিনীরসঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছিলেন ২০ জন ভারতীয় জওয়ান। দীর্ঘ ৪৫ বছর পরে ভারত-চিন সেনাবাহিনী এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছিল। ওই ঘটনা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তিক্ত করে তুলেছে। ঘটনার দু’বছর পরেও তা স্বাভাবিক হয়নি। সূত্রের খবর, সিপিসি-র সম্মেলন চলাকালীন চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যমে গালওয়ান সংঘর্ষের ভিডিয়ো ফুটেজ দেখানো হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, নিহত সেনার দেহ, নদীর জল ঠেলে পরস্পরের দিকে এগিয়ে চলেছে দুই দেশের সেনা। লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে চিনের সেনাবাহিনী, গালওয়ান উপত্যকায় নিজেদের জাতীয় পতাকা ধরে দাঁড়িয়ে কয়েক জন চিনা সেনা।এই দৃশ্যগুলি দেখানোর পাশাপাশি, এক চিনা সেনা ওই দিনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে চলেছেন সংবাদমাধ্যমে। তাঁর নাম কিউই ফাবাও। যিনি গালওয়ান সংঘর্ষে আহত হয়েছিলেন। এ বছর বেজিং অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিক্সে এই ফাবাওকে দিয়েই মশাল বহন করিয়েছিল চিন। যার প্রতিবাদে ওই অলিম্পিক্সের উদ্বোধনী এবং সমাপ্তি অনুষ্ঠান বয়কট করেছিল ভারত। গালওয়ান যুদ্ধে আহত ফাবাওকে পরবর্তীকালে পুরষ্কৃতও করেছিল চিন প্রশাসন। ‘বীরত্বে’র জন্য এ বারের পার্টি সম্মেলনে উপস্থিত থাকার সুযোগও পেয়েছেন তিনি। সূত্রের খবর, গ্রেট হল অব দ্য পিপল-এ ফাবাও আজ ছিলেন অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, সিপিসি সম্মেলনের আগে ভারতের সঙ্গে সীমান্তে সংঘর্ষ বাধানো এবং ভারতকে সীমান্তে সেনা মোতায়েনে বাধ্য করে জিনপিং আসলে পার্টির মধ্যে নিজের ক্ষমতা আরও বেশি করে প্রদর্শন করতে চেয়েছেন। বাস্তবে তা-ই হয়েছে। ওই সূত্রটি জানাচ্ছে, পার্টি সম্মেলনে সেনার পরাক্রমের বিভিন্ন ফুটেজ দেখানো হয়েছে। যার বড় অংশ জুড়ে ছিল গালওয়ান। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, আজ জিনপিং বলেছেন, ‘‘সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করা হবে। দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থে সেনাবাহিনীকে আরও আধুনিক করে তোলা হবে।’’ একই সঙ্গে তিনি পরিষ্কার করে দিয়েছেন, সেনাবাহিনী চলবে কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশেই।রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, অরুণাচল এবং লাদাখ সীমান্তে অস্থিরতা নিয়ে বার বার আলোচনার পথে হাঁটার বার্তা দিয়েছে ভারত। ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় রাখার কথা বলেছে। তা সত্ত্বেও সিপিসি-র সম্মেলনে গালওয়ান প্রসঙ্গ তুলে চিন বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা কারও কথায় কান দেবে না।

গালওয়ানের মতোই তাইওয়ান নিয়েও একরোখা চিন। জিনপিং আজ স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘‘তাইওয়ান চিনের বিষয়, চিনই এর সমাধান করবে। চিনের সঙ্গে তাইওয়ান সংযুক্তিকরণে আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে এবং সর্বোত্তম প্রচেষ্টা চালাবো। কিন্তু শক্তিপ্রয়োগ করা হবে না এমন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না।’’ চিন প্রেসিডেন্টের ইঙ্গিত, তাইওয়ান নিয়ে কোনও তৃতীয় পক্ষকে বেজিং কোনও অবস্থাতেই বরদাস্ত করবে না। তাইওয়ানে চিন-বিরোধী গোষ্ঠীগুলির উপরে প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করতে চিন যে পিছপা হবে না তা-ও পরিষ্কার করে দিয়েছেন জিনপিং। পাল্টা জবাবে তাইওয়ানের প্রধানমন্ত্রীর দফতর বিবৃতিতে বলেছে, ‘সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে কোনও আপস করা হবে না। মাথা নত করার কোনও প্রশ্নই নেই। তাইওয়ান প্রণালী এবং দক্ষিণ চিন সাগর অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখা উভয়েরই কর্তৃব্য’।

আমেরিকার হাউজ় অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সম্প্রতি তাইওয়ান সফরের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল চিন। ওই সফরের পরে তাইওয়ান প্রণালীতে সামরিক মহড়াও দিয়েছিল বেজিং। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, তাইওয়ান নিয়ে জিনপিংয়ের হুঁশিয়ারির লক্ষ্য যে আমেরিকা, তা বুঝতে কারও বাকি নেই।

অন্য বিষয়গুলি:

China Galwan Valley
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy