Food crisis in North Korea: Coffee retails over Rs 7,000, Bananas for Rs 3,300 per kg dgtl
North Korea
সাড়ে তিন হাজারে এক কেজি কলা, কফি সাত হাজার টাকা, খাদ্যাভাবে ধুঁকছে উত্তর কোরিয়া
বাবার হাত থেকে দেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রত্যেকের খাবার টেবিলে মাংসের টুকরো তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিম। তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২১ ১১:৫১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উন মেনে নিলেন, দেশে খাদ্যাভাব চলছে।
০২২৩
সম্প্রতি একটি বৈঠকে কিম স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ‘‘উত্তর কোরিয়ায় খাবারের জোগান খুব খারাপ জায়গায় পৌঁছছে।’’
০৩২৩
গত কয়েক মাস ধরেই অবশ্য উত্তর কোরিয়ার এই খাদ্য সঙ্কটের পরিস্থিতি বিপজ্জনক জায়গায় যাচ্ছিল।
০৪২৩
কিছু দিন আগে রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টেও বলা হয়েছিল কম করে ৮ লক্ষ ৬০ হাজার টন খাদ্য শস্যের সঙ্কট রয়েছে উত্তর কোরিয়ায়।
০৫২৩
সেই রিপোর্টের পর মাস কয়েক কেটে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা এর মধ্যে খাদ্যের অভাব আরও বেড়েছে। কিম সেই আশঙ্কাতেই সিলমোহর দিলেন।
০৬২৩
চট করে হার স্বীকার না করতে চাওয়া কিম এমন আচমকা দেশের খাদ্য সঙ্কটের কথা মেনে নেওয়ায় চিন্তা বেড়েছে বহির্বিশ্বের।
০৭২৩
কিছু দিন আগেই উত্তর কোরিয়ার শাসক দল ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কিম। সেখানে দলের নেতাদের অবিলম্বে দেশের খাদ্য সঙ্কটের সমস্যার সমাধান করার নির্দেশ তিনি।
০৮২৩
বৈঠকে দেশের খাদ্য সঙ্কটের কারণও ব্যাখ্যা করেছেন কিম। জানিয়েছেন, টাইফুন এবং বন্যায় চাষের জমির ক্ষতি হয়েছে। ফলে খাদ্যশস্যের যে বার্ষিক উৎপাদনের কোটা, তা এ বার পূরণ হয়নি।
০৯২৩
প্রতি বছর দেশের খাবার উৎপাদন, বণ্টন এবং সংগ্রহের যে পরিকল্পনা থাকে, তা-ও ভেস্তে গিয়েছে।
১০২৩
উত্তর কোরিয়া যে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে, তা অবশ্য মাস দু’য়েক আগে এক বার বুঝিয়েছিলেন কিম। মার্চের শুরুতে সরকারি কর্তাদের দেওয়া নির্দেশে বলেছিলেন, ‘‘আরও কঠিন সময়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।’’
১১২৩
কিমের ওই নির্দেশে প্রমাদ গণেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। ১৯৯০ সালে যখন উত্তর কোরিয়া চরম দুর্ভিক্ষের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তার আগে ঠিক এই একই কথা, একই শব্দ প্রয়োগ করে দেশবাসীকে সতর্ক করেছিলেন কোরিয়ার প্রশাসক।
১২২৩
ওই দুর্ভিক্ষে কত লোকের মৃত্যু হয়েছিল তার কোনও সরকারি হিসেব সামনে আনা হয়নি। তবে বেসরকারি মতে কম করেও ৩০ লক্ষ মানুষ স্রেফ না খেতে পেয়ে মারা গিয়েছিলেন।
১৩২৩
৩১ বছর পর ২০২১ সালে উত্তর কোরিয়ার রাজধানীতে আকাশ ছুঁয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় খাবারের দাম। এক কেজি কলা সেখানে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ মার্কিন ডলারে। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩ হাজার ৩০০ টাকা।
১৪২৩
ভয়ঙ্কর বেড়েছে চা-কফির দামও। রাজধানী শহর পিয়ং ইয়াংয়ে এক কেজি চা পাতার দাম উঠেছে ভারতীয় মূদ্রায় ৫১৬৭ টাকা পর্যন্ত। কফির প্রতি কেজির দাম এসে ঠেকেছে ৭৩৮১ টাকায়।
১৫২৩
যে ভুট্টা ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ভারতে, উত্তর কোরিয়ার মানুষ তা কিনছেন প্রতি কেজি ২০৫ টাকা দিয়ে।
১৬২৩
বিদেশ থেকে খাবার আমদানি করার রাস্তাও বন্ধ। করোনা মোকাবিলার পদক্ষেপ হিসেবে দেশের সমস্ত সীমান্ত আটকে দিয়েছেন তিনি। ফলে দেশ থেকে বাইরে বেরনোর যেমন উপায় নেই, তেমনই দেশের ভিতরে কিছু আসারও উপায় নেই।
১৭২৩
খাবার, সার এবং জ্বালানির জন্য চিনের উপর অনেকটাই নির্ভর করে উত্তর কোরিয়া। সীমান্ত বন্ধ থাকায় চিন থেকে জোগানও বন্ধ। প্রতি বছর যেখানে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের আমদানি হয়, তা এ বছর এসে ঠেকেছে ৫০ কোটিতে।
১৮২৩
সারের অভাবে উত্তর কোরিয়ার কৃষি জমিগুলির অবস্থা এতটাই বেহাল যে, কিমের সরকার কৃষকদের প্রতি দিন ২ লিটার করে মূত্র দান করার নির্দেশ দিয়েছে। যাতে তা দিয়ে সার বানানো যেতে পারে।
১৯২৩
বন্ধ সীমান্তের জন্য কাজ করতে পারছে না স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিও। এ ছাড়া কিমের পরমাণু সংক্রান্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার কারণে উত্তর কোরিয়ার উপর আরোপিত অন্য বিধিনিষেধও রয়েছে।
২০২৩
সমস্যা হল, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম দেশের সঙ্কটের কথা মেনে নিলেও তার সমাধানের চেয়ে দায়ের বোঝা হালকা করতেই বেশি আগ্রহী। দেশের এই পরিস্থিতির জন্য তিনি দায়ী করেছেন কোভিড পরিস্থিতি, টাইফুন এবং গত বছরের বন্যাকে।
২১২৩
কিম বলেছেন, করোনা বিরুদ্ধে লড়াইকে একটি প্রলম্বিত যুদ্ধ হিসেবেই মেনে নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের ভয়, এমনটা আসলে দেশের সীমান্ত বন্ধ করে রাখার মেয়াদ বাড়ানোরই ইঙ্গিত। তা যদি করা হয়, তা হলে উত্তর কোরিয়ার বিপদ আরও বাড়বে। সে ক্ষেত্রে খাবার তো বটেই দেশে ওষুধপত্রেরও অভাব দেখা দিতে পারে।
২২২৩
গত বছরই জনসমক্ষে কান্না চাপতে দেখা গিয়েছিল কিমকে। দেশের মানুষকে স্বচ্ছলতার প্রতিশ্রুতি দিয়েও পূরণ করতে না পারার কান্না। বাবার হাত থেকে দেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রত্যেকের খাবার টেবিলে মাংসের টুকরো তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিম। তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
২৩২৩
তার পরও অবশ্য আত্মনির্ভরতার বাণী শুনিয়েছেন কিম। কিন্তু বর্তমান খাদ্য সঙ্কটের পরিস্থিতিতে বিশ্বের সাহায্য অস্বীকার করে আত্মনির্ভর হতে চাইলে তার দাম দিতে হবে সাধারণ জনগণকেই, আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।