—প্রতীকী চিত্র।
বর্ণবৈষম্যের যুগ শেষ হয়েছে ত্রিশ বছর আগে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় এই প্রথম আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি)-এর আসন টলোমলো। আজ দেশের সাধারণ নির্বাচনে ভোট দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অন্তত আড়াই কোটি মানুষ। ভোটের আগের বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এ বার ফের ক্ষমতায় ফেরা মুশকিল বর্তমান প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার দল এএনসি-র। বিশেষজ্ঞদের মতে, এএনসি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনা প্রবল নেলসন ম্যান্ডেলার দেশে।
আজ স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। ভোট কেন্দ্রগুলি খোলা ছিল রাত ৯টা পর্যন্ত। দক্ষিণ আফ্রিকার ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইলেক্টোরাল কমিশন’ (আইসি)-এর ডেপুটি সিইও মাসেগো সেবুরি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভাবেই হয়েছে আজকের ভোটগ্রহণ। বেশির ভাগ বুথে নির্ধারিত সময়ে ভোট শুরু হলেও জোহানেসবার্গের আলেকজ়ান্দ্রার মতো কিছু এলাকায় ব্যালট বাক্স পৌঁছতে দেরি হওয়ায় ভোটগ্রহণ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়।
আজ একই সঙ্গে পার্লামেন্ট এবং প্রাদেশিক পর্যায়ের ভোটগ্রহণ চলেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। পার্লামেন্ট বা ন্যাশনাল অ্যাসেমব্লি-তে রয়েছে মোট ২০০টি আসন। আর ন’টি প্রদেশে আরও ২০০টি আসনে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে সকাল থেকেই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাধারণ মানুষ। প্রাদেশিক আইনসভায় আসনের সংখ্যা নির্ধারিত হয় সেই এলাকার আয়তনের হিসেবে।
দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জেকব জ়ুমা থেকে শুরু করে বর্তমান রামাফোসা। আজ সকাল সকাল পরিবার-সহ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে দেখা মিলেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের। বিরোধী দল ‘ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটার্স’-এর নেতা জুলিয়াস মালেমাকেও দেখা গিয়েছে ভোট কেন্দ্রের সামনে।
বেকারত্ব, দুর্নীতি, অপরাধ আর সন্ত্রাস। মূলত এই চার ধরনের সমস্যায় দীর্ঘদিন জর্জরিত এই দেশ। আজ ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে নাগরিকেরা নিজেদের ক্ষোভ লুকিয়ে রাখেননি। ‘‘ত্রিশ বছরে কিছুই বদলায়নি’’, ক্ষোভ ঝরে পড়ল কেপ টাউনের বাসিন্দা মেলানি রসের গলায়। জানালেন, সেই ১৯৯৪ সালে নেলসন ম্যান্ডেলাকে ভোট দিয়েছিলেন। তবে সেই যুগ যে আর নেই, সেই আক্ষেপও করলেন। ৫৩ বছরের মেলানির কথায়, ‘‘রামাফোসার উপরে আমার প্রবল আস্থা ছিল। কিন্তু দেখলাম উনিও কোনও পরিবর্তন আনতে পারলেন না। সর্বত্র দুর্নীতি। মানুষ খুন হচ্ছে যত্রতত্র। এখন মনে হচ্ছে একটা বদল এলে ভালর জন্যই হবে।’’ অপরাধের মাত্রা এ দেশে এতটাই বেশি যে ফের মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তিও ফিরিয়ে আনার পক্ষে সওয়াল করলেন অনেকে। কেপ টাউনেরই এডউইন স্মিথ বেকার। বছর চৌত্রিশের যুবক প্রকাশ্যেই বললেন, ‘‘সরকারের অবিলম্বে মৃত্যুদণ্ড ফিরিয়ে আনা উচিত। এ দেশে ভয়াবহ ভাবে খুনের সংখ্যা বাড়ছে। কারণ অপরাধীরা জানে তারা সহজেই জেল থেকে মুক্ত হয়ে যেতে পারবে।’’
রামাফোসার ফেরা যে কঠিন, তা একবাক্যে স্বীকার করছেন তাঁর অতি বড় সমর্থকও। তবে এই আবহে ঘুরে ফিরে আসছে দুর্নীতির দায়ে গদিচ্যুত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জেকব জ়ুমার নাম। তাঁর এমকে পার্টি এ বারের প্রাদেশিক নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত ভাল ফল করবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তবে পার্লামেন্টে ক্ষমতায় ফেরার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা জ়ুমা আদৌ পাবেন কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এর মধ্যেই এক ব্যবসায়ীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে ভারতের উত্তরাখণ্ড থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে জ়ুমা ঘনিষ্ঠ ভারতীয় ব্যবসায়ী অজয় গুপ্ত ও তাঁর শ্যালককে। অজয় ও তাঁর দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকায় কোটি কোটি ডলার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। গুপ্ত ভাইদের সেই দুর্নীতিতে মদত দেওয়ার জন্যই ক্ষমতা হারান জ়ুমা। জ়ুমা গদিচ্যুত হওয়ার পরে গুপ্ত ভাইয়েরা দেশ ছেড়ে পালান। গুপ্তদের বাকি দুই ভাই দুবাইয়ে গ্রেফতার হয়েছেন। অজয়কে দেশে ফেরাতে ভারত সরকারের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করবে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy