ছবি সংগৃহীত।
জার্মানির রাইন নদীর তীরে কোলন শহর বিখ্যাত তার ক্যাথিড্রালের জন্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৪টি বোমা পড়ার পরে আজও হয়েও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ঐতিহাসিক এই শহরেই পালিত হচ্ছে ‘ভারত সমিতি’ দ্বারা পরিচালিত ৩১তম দুর্গা পুজো। গত দু’বছর করোনার প্রকোপে পুজো বন্ধ থাকায়, এ বারের উৎসাহ যেন দ্বিগুণ আকার ধারণ করেছে।
এখানে আমরা পুজো পালন করি নির্ঘণ্ট মেনে, অর্থাৎ দেশের মতোই পাঁচ দিন ধরে অফুরান আনন্দের জোয়ার। পুজোর উদ্বোধন করবেন শহরের মেয়র শ্রীমতী রেকার এবং ভারতীয় কনস্যুলেট জেনারেল ডক্টর অমিত তেলাং। কোলন শহরের একমাত্র তথা জার্মানির অন্যতম বড় এই পুজো দেখতে আশেপাশের অন্যান্য শহর, এমনকি পড়শি দেশ যেমন নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ থেকেও বহু মানুষ আসেন।
বছরের শুরুতেই আমাদের প্রথম কাজ হয় অফিস থেকে পুজোর দিনগুলোতে ছুটি নিয়ে নেওয়া। এ বার অষ্টমীর দিন জার্মান ইউনিটি দিবস উপলক্ষে ছুটি থাকায় সোনায় সোহাগা। সুতরাং পুজো এ বার দীর্ঘ সপ্তাহান্তে। আগাম জনসমাগমের কথা মাথায় রেখে নেওয়া হচ্ছে উপযুক্ত ব্যবস্থা। এ বার আগে থেকে নাম নথিভুক্তিকরণ করা হচ্ছে। বিধি অনুযায়ী হলে একত্রিত হতে পারবেন পাঁচশো লোক।
ষষ্ঠী থেকে অষ্টমী, প্রতিদিন থাকছে ঘণ্টা দুয়েকের বিচিত্রানুষ্ঠান। এ বারের বিশেষ আকর্ষণ ‘আগমনী’ যেখানে চণ্ডীপাঠ করবেন মহিলারা। কুচোকাঁচার দল করছে দেশাত্মবোধক গান, প্রয়াত বাপ্পী লাহিড়ীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে তাঁরই গানের মাধ্যমে অষ্টমীর সন্ধ্যায়, সরোদ ও তবলায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুরমুর্ছনার পাশাপাশি থাকছে নৃত্যানুষ্ঠান। মহড়া শুরু হয়ে গিয়েছে এক মাস আগে থেকেই।
পুজোর ক’দিন ডায়েটকে তুড়ি মেরে আমাদের খাওয়াদাওয়ার লিষ্ট কিন্তু লম্বা, তাতে আছে এমন কিছু পদ যা এখানকার কর্মব্যস্ত দৈনন্দিন জীবনে করে ওঠা হয় না। যেমন, পটলের দোর্মা, ছোলা দিয়ে মোচার ঘণ্ট, এঁচোড়ের কালিয়া। সবই রান্না করবেন সমিতির সদস্যেরা। পুজো বাঙালির এক নস্ট্যালজিয়াও বটে। তার কথা মাথায় রেখে আছে আমাদের স্ন্যাকস কাউন্টার ‘মুখরোচক’ যেখানে মজুত থাকা আলুকাবলি, ঝালমুড়ি, ঘুগনি স্কুলছুটির সেই বিকেলগুলোকে মনে করিয়ে দেবেই। সঙ্গে থাকছে শিঙাড়া, আলুর চপ আর চা। না হলে কি আড্ডা জমে, বলুন? জার্মানদের ভারতীয় খাবার প্রীতির কথা মাথায় রেখে সমস্ত সদস্য মিলে প্রকাশ করছি একটি রেসিপির বই যাতে থাকছে ঘরোয়া বাঙালি রান্নার সাতকাহন। এ ছাড়া, কবিতা, গল্প, ভ্রমণকাহিনি সমৃদ্ধ পুজোর ই-ম্যাগাজিন তো আছেই।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফেসবুক তো ছিলই, এ বছর তৈরি হয়েছে ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট। তাতে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিয়ো চড়িয়ে দিচ্ছে পুজোর উদ্দীপনার পারদ। পুজোর সাজসরঞ্জাম, যা এখানে পাওয়া যায় না, সব চলে এসেছে সাগরপাড়ি দিয়ে প্রাণের শহর কলকাতা থেকে।কলাবৌ স্নান, সন্ধিপুজো, ধুনুচি নাচ, সিঁদুর খেলা বাদ দেব না কিচ্ছুটি। এখানে দুর্গা প্রতিমা প্রতি বছর বিসর্জন হয় না। পাঁচ বছর অন্তর প্রতিমা আসে কলকাতা থেকে। তাই এ বার ২০১৯-এ আনা প্রতিমা দিয়েই পুজো হবে।
শরতের আকাশ জানান দিচ্ছে মা আসছেন। পুজোর এই পাঁচ দিন যাতে সবার জন্য আনন্দময় হয়, তার পিছনে থাকে আমাদের সব সদস্যের কঠোর পরিশ্রম, অনেক পরিকল্পনা। বাগবাজারের আরতি বা ম্যাডক্স স্কোয়ারের আড্ডা— সবই যেন কখন কোলনের এই হলের একটা অংশ হয়ে যায়। এই মহোৎসবই পারে কলকাতা আর কোলনকে এক করে দিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy