আফ্রিকার পশ্চিম প্রান্তের দেশ নাইজেরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে লেগোস দেশের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে কর্মব্যস্ত শহর। মোটামুটি দু’শো বাঙালি পরিবারের বাস এই শহরে। ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য লেগোসের আবহাওয়া সারা বছরই গরম আর বৃষ্টি ভেজা। শরতের পেঁজা তুলোর মত মেঘ নেই এখানে, নেই কাশফুল বা শিউলির গন্ধ, না আছে অফিস বা স্কুলে ছুটি। তবু সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে শত কর্মব্যস্ততার মধ্যেও লেগোসের প্রবাসী বাঙালিরা মেতে ওঠে মণ্ডপ সজ্জা, পুজোর ভোগ প্রস্তুতি, নৈবেদ্য সাজানো, স্পন্সরশিপ জোগাড় করা, চাঁদা তোলা এবং আরো অনেক কাজে। প্রতি বছরের মতো এ বারেও লেগোস বঙ্গীয় পরিষদের উদ্যোগে লেগোসের প্রবাসী বাঙালিরা নিউ ক্যাসল্ হোটেলের কমিউনিটি হলে দিনক্ষণ, পঞ্জিকা মেনে মায়ের পুজোয় মেতে উঠব।
লেগোসের দুর্গাপূজা বছর চল্লিশের পুরোনো। তবে প্রথম প্রতিমা এনে পুজো হয় ২০০৭ সালে। এর আগে পুজো হতো কোলাজে। এখানে স্বাভাবিক কারণেই প্রতি বছর প্রতিমা পাল্টানো সম্ভব হয় না। ২০০৭ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত একই প্রতিমায় পুজো হয়। ২০১৭ সালে মায়ের নতুন মূর্তি আনা হয়। সেই মূর্তিতেই এতদিন মায়ের পুজো হচ্ছিল। এই বছর নতুন মূর্তি আনা হয়েছে কলকাতার কুমোরটুলি থেকে। এই বছরের পুজোর এটাও একটা বড় আকর্ষণ। পুজোর দশকর্মার জিনিসপত্রও আনা হয় কলকাতা থেকেই।হোটেলের কমিউনিটি হল পাঁচ দিনের জন্য হয়ে ওঠে বারোয়ারি পুজোর মণ্ডপ।
দেশ থেকে বহু দূরে বসে এই পাঁচটা দিন আমাদের কাছে বিশাল পাওনা। আড়ম্বর কম, কিন্তু আবেগ বা উচ্ছ্বাসের কোনও অভাব নেই। ঢাকের বাদ্যি, মন্ত্রোচ্চারণের সাথে সাথে চলতে থাকে আড্ডা, রাজনীতি, পরনিন্দা-পরচর্চা, গল্প গুজব আরও কত কী। সব মিলিয়ে মনে হয় আমরা যেন কলকাতাতেই আছি।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)