Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
USA

বাইডেনের শপথে নেই ট্রাম্প

সূত্রের বক্তব্য, ভবিষ্যতের সম্ভাব্য আইনি জটিলতা এড়াতে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে নিজেই নিজেকে ক্ষমা করে দেওয়ার কথা ভাবছেন ট্রাম্প।

জাতির উদ্দেশে টুইটারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তৃতা। রয়টার্স

জাতির উদ্দেশে টুইটারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তৃতা। রয়টার্স

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:২৪
Share: Save:

আমেরিকার ক্যাপিটল ভবনে হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক হামলাকারীদের হাতে জখম এক পুলিশ অফিসারের গত কাল মৃত্যু হয়েছে। ঘরে-বাইরে প্রবল বেকায়দায় পড়ে আজ ভিডিয়ো-বার্তা দিয়ে সে দিনের হিংসার নিন্দা করেছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। তবে টুইট করে ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, জো বাইডেনের শপথে তিনি থাকছেন না। ডেমোক্র্যাটরা অবশ্য রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তুলে মেয়াদ শেষের আগেই ট্রাম্পকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরুর জন্য চাপ বাড়াচ্ছেন। সূত্রের বক্তব্য, ভবিষ্যতের সম্ভাব্য আইনি জটিলতা এড়াতে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে নিজেই নিজেকে ক্ষমা করে দেওয়ার কথা ভাবছেন ট্রাম্প।

ক্যাপিটলে হামলার প্রতিবাদে আমেরিকার শিক্ষাসচিব বেটসি ডেভোস এবং পরিবহণ সচিব এলেইন চাও ইস্তফা দিয়েছেন। ওই হামলায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে ১২ ঘণ্টার জন্য ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছিল টুইটার। সেই নিষেধাজ্ঞা ওঠার পরে টুইটারেই ট্রাম্প একটি ভিডিয়ো-বক্তৃতা পোস্ট করে বলেছেন, ক্যাপিটলে যাঁরা ঢুকেছিলেন, তাঁরা দেশের গণতন্ত্রকে অপবিত্র করেছেন। আরও বলেছেন, ‘‘অন্য আমেরিকানদের মতোই আমি ক্ষুব্ধ। যারা হিংসা ও ধ্বংসে জড়িত, তারা কোনও দেশের প্রতিনিধিত্ব করে না। আইন ভাঙলে ভুগতে হবে।’’ আমেরিকার নির্বাচনী আইন সংস্কার করা উচিত বলে জানিয়েও তিনি বার্তা দিয়েছেন যে, হাড্ডাহাড্ডি ভোটের পরে এখন আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করার সময়। বলেছেন, ‘‘কংগ্রেসের শংসাপত্রের পরে ২০ জানুয়ারি নতুন প্রশাসন কাজ শুরু করবে। মসৃণ ও সুশৃঙ্খল ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরই এখন আমার লক্ষ্য।’’ তবে ভাঙলেও মচকাচ্ছেন না ট্রাম্প। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘যাঁরা জানতে চেয়েছিলেন,

তাঁদের বলছি, ২০ তারিখের অনুষ্ঠানে আমি যাচ্ছি না।’’ নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠান বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এড়িয়ে যাচ্ছেন, এই নজির আমেরিকার দেড়শো বছরের ইতিহাসে নেই।

ডেমোক্র্যাটরা যদিও ২০ তারিখের আগেই ট্রাম্পকে সরানোর তোড়জোড় করছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের উদ্দেশে হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি এবং সেনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার বার্তা দিয়েছেন, ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ করে ট্রাম্পকে সরানো হোক। অন্যথায় তাঁরা ইমপিচমেন্টের পথে হাঁটবেন। পরে পেলোসি স্পষ্ট বলেই দেন যে, অবিলম্বে ট্রাম্প ইস্তফা না-দিলে ইমপিচ করা হবে তাঁকে। শুমার এবং পেলোসির বক্তব্য, হিংসায় ইন্ধন দিয়ে দেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। ফলে যতটুকু সময়ই তিনি ক্ষমতায় থাকুন, তা বিপজ্জনক। এমনকি ট্রাম্পের হাতে যাতে এই কয়েক দিন পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের চাবিকাঠি না-থাকে, তা-ও নিশ্চিত করতে চাইছেন তাঁরা। পেলোসি বলেছেন, ‘‘ভারসাম্যহীন প্রেসিডেন্ট যাতে সামরিক সংঘাত বা পরমাণু হামলা চালাতে না-পারেন, সে বিষয়ে জয়েন্ট চিফস চেয়ারম্যান মার্ক মিলির সঙ্গে কথা বলেছি।’’

এই পরিস্থিতিতে চর্চায় উঠে এসেছে ট্রাম্পের নিজেই নিজেকে ক্ষমা করার সম্ভাবনা। বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্প ইতিমধ্যেই হোয়াইট হাউসের আধিকারিক ও আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ও পরে বহু বিতর্কে নাম জড়িয়েছে ট্রাম্পের। এর মধ্যে ভুয়ো খবর ছড়ানো, রাশিয়ার সঙ্গে বেআইনি যোগাযোগ, কর ফাঁকি থেকে শুরু করে যৌন নিগ্রহ ও ধর্ষণের মতো অভিযোগও আছে। এর সঙ্গে জুড়েছে ক্যাপিটলের হামলায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ। হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, নির্বাচনের দিন থেকেই অফিসার ও আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে ট্রাম্প বুঝতে চাইছেন, তিনি নিজেকে ক্ষমা করার নির্দেশ জারি করতে পারেন কি না। প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদ শেষের পরে তাঁর পথে যাতে কোনও কাঁটা না-থাকে, তা নিশ্চিত করতেই ট্রাম্প এই পথে হাঁটতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মত, সে ক্ষেত্রে জনমানসে ভুল বার্তা যাবেই। প্রেসিডেন্টের ক্ষমার পাত্র হওয়ার নজির আমেরিকার ইতিহাসে একটিই। রিচার্ড নিক্সন সরে যাওয়ার পরে তাঁর শাসনকালের সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করেছিলেন তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড।

তবে হামলাকারীদের ক্ষমা করা হবে না বলেই জানিয়ে দিচ্ছে বিচার বিভাগ। ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার কার্যনির্বাহী অ্যাটর্নি মাইকেল শেরউইন জানিয়েছেন, রাষ্ট্রদ্রোহ-সহ বিভিন্ন অভিযোগে হামলাকারীদের অভিযুক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই চিহ্নিত হয়ে-যাওয়া বেশ কয়েক জনের চাকরি গিয়েছে বলে খবর। বুধবার হামলাকারীদের রুখতে গিয়ে জখম হয়েছিলেন ক্যাপিটল পুলিশের অফিসার ব্রায়ান ডি সিকনিক। হাসপাতালে তিনি মারা যান। হামলাকারীদের ভিড়ে সে দিন দেখা গিয়েছিল শ্বেতাঙ্গ-আধিপত্যের পতাকা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বাইডেন আজ টুইটারে লিখেছেন, ‘‘ক্যাপিটলে চড়াও হওয়া ভিড়টার জায়গায় যদি ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের প্রতিবাদীরা থাকতেন, তা হলে তাঁদের সঙ্গে একই ব্যবহার করা হত— এমন কেউ বলতে পারবেন না।’’ ট্রাম্পকেও একহাত নিয়েছেন বাইডেন। বলেছেন, ‘‘চার বছর ধরে আমরা এমন এক জন প্রেসিডেন্টকে পেয়েছি, যিনি নিজের প্রতিটি কাজে গণতন্ত্র, সংবিধান ও আইনের শাসনের অবমাননা করেছেন। গণতন্ত্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নিশানা করেছেন। ক্যাপিটলে হিংসার ঘটনায় সেটাই চরমে পৌঁছল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

USA JOe Biden Donald Trump
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy