কমলা হ্যারিস ও হিলারি ক্লিন্টন। এই দুই ডেমোক্র্যাট প্রতিপক্ষকেই অতীতে ভোট-যুদ্ধে হারিয়েছেন তিনি। এ বার দু’জনেরই ‘সিকিয়োরিটি ক্লিয়ারেন্স’ বাতিল করলেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
‘সিকিয়োরিটি ক্লিয়ারেন্স’ হল কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি বিশ্বাস ও ভরসা রেখে তাঁকে দেশের গোপনতম ও স্পর্শকাতর তথ্য জানতে দেওয়ার অধিকার। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও শীর্ষস্থানীয় সরকারি আধিকারিকদের কাছে সৌজন্য হিসেবে এই অধিকার থাকে। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট পদে বসার পরে তাঁর পূর্বসুরি ট্রাম্পের অধিকার খর্ব করেছিলেন। ট্রাম্পও ফের প্রেসিডেন্ট পদে বসে একই কাজ করেছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি জানিয়ে দেন, শুধু বাইডেনই নন, তাঁর ‘পরিবারের’ সকলের অধিকার খর্ব করা হবে। সিকিয়োরিটি ক্লিয়ারেন্স বাতিল করা হবে। ট্রাম্প একটি স্মারকবার্তায় বলেন, ‘‘আমি ভেবে দেখেছি নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের গোপন তথ্য জানানোর কোনও প্রয়োজনীয়তা বা জাতীয় স্বার্থ নেই।’’
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে নির্দিষ্ট ব্যক্তিরা যে সব রিপোর্টের পর্যালোচনা এত দিন করতে পারতেন, তা আর পারবেন না। একাধিক সরকারি দফতরে তাঁদের প্রবেশ নিষেধ হয়ে যাবে। ট্রাম্পের নজরে থাকা বেশ কয়েক জন আইনজীবী এবং বিচারকও সমস্যায় পড়েছেন। মামলার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য হাতে পাবেন না তাঁরা। ট্রাম্প কিংবা তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে চলা মামলাগুলির জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে নাকানিচোবানি খেতে হবে কৌঁসুলিদের। বাইডেনের বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল লিসা মোন্যাকো— সকলেই সিকিয়োরিটি ক্লিয়ারেন্স হারিয়েছেন। ২০১৯ সালে ইমপিচমেন্ট মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছিলেন ট্রাম্পের দুই প্রাক্তন অফিসার, ফিয়োনা হিল এবং অ্যালেক্সান্ডার ভিন্ডম্যান। তাঁদেরও নিশানা করেছেন ট্রাম্প। প্রাক্তন সরকারি প্রতিনিধি তথা হাই-প্রোফাইল রিপাবলিকান সমালোচক লিজ় চেনে এবং অ্যাডাম কিনজ়িনজারের সিকিয়োরিটি ক্লিয়ারেন্সও কেড়ে নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এঁরা ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসে হামলার ঘটনায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন আদালতে। নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস একাধিক মামলা করেছিলেন ট্রাম্প ও তাঁর ব্যবসার বিরুদ্ধে। ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে তাঁরও। গত বছর একটি আর্থিক নয়ছয়ের মামলায় ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা-জয়ী সেই ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি এলভিন ব্র্যাগও সিকিয়োরিটি ক্লিয়ারেন্স হারিয়েছেন। এ ভাবে পথের সমস্ত কাঁটা একে একে সরিয়ে ফেলতে চাইছেন ট্রাম্প, বলছেন তাঁর সমালোচকেরা।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)