সাক্ষাৎ: দুই কোরিয়ার সীমান্তবর্তী গ্রাম পানমুনজমে কিম জং উনের পাশে ডোনাল্ড ট্রাম্প। রবিবার। ছবি: পিটিআই
ইতিহাস গড়লেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ক্ষমতায় থাকাকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনিই প্রথম পা রাখলেন উত্তর কোরিয়ায়। সীমান্ত পেরিয়ে মাত্র কুড়ি পা হাঁটলেন। চার দিকে তখন শুধু ক্যামেরার ঝলকানি। ফ্রেমবন্দি হল ইতিহাস।
রবিবার উত্তর কোরিয়ার কাছে পানমুনজমে (উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়াকে জুড়েছে যে শান্তি-গ্রাম) অসামরিক এলাকায় ট্রাম্পের সঙ্গে সামনাসামনি দেখা হল কিম জং উনের। শুধু দেখা নয়, দুই রাষ্ট্রনেতা ঠিক করলেন, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে ফের আলোচনা শুরু করার জন্য আমেরিকা এবং উত্তর কোরিয়া থেকে মধ্যস্থ পাঠানো হবে।
এর আগে ভিয়েতনামের হ্যানয়ে তাঁদের আলোচনা মাঝপথেই ভেস্তে যায়। তার পর থেকে কিম-ট্রাম্পের আলোচনা নিয়ে বিস্তর জল্পনা হয়েছে। তার মধ্যে গত কাল আচমকাই টুইটারে দেখা করার জন্য কিমকে অনুরোধ জানান ট্রাম্প। তিনি জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এশিয়া সফরে এসেছিলেন। জাপানের ওসাকায় সেই সম্মেলনের পরে দক্ষিণ কোরিয়ায় সফর নির্ধারিত ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টের। সেই সূত্রে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে কিমের সঙ্গে দেখা করার কথা মনে হয়েছিল বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। প্রস্তাবে কিমও রাজি হয়ে যান। তবে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই হঠাৎ সফরের প্রস্তুতি সারতে প্রশাসনের দু’তরফেই এক রকম কালঘাম ছুটে যায়!
শেষ পর্যন্ত আজ স্থানীয় সময় বিকেল পৌনে ৪টে নাগাদ অসামরিক এলাকার কংক্রিটে বাঁধানো অংশে পা রাখেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কার্যত এটাই দুই কোরিয়ার সীমান্ত। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে উত্তর কোরিয়ায় ঢুকলেন ট্রাম্প। সঙ্গে ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন-ও। একটি মার্কিন দৈনিকের দাবি, ‘‘দুই রাষ্ট্রনেতা নজিরবিহীন, ক্যামেরা-বান্ধব হাবভাব সম্বল করে ভেস্তে যাওয়া আলোচনা ফিরিয়ে
আনতে চাইছেন।’’
মুখোমুখি দেখা এবং করমর্দনের পরে অনুবাদকের মাধ্যমে ট্রাম্পকে কিম বলেন, ‘‘আপনার সঙ্গে আবার দেখা হয়ে ভাল লাগল।’’ জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘‘হ্যাঁ দারুণ মুহূর্ত। দারুণ।’’ এক মিনিট ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে কিমকে নিয়ে ট্রাম্প এগিয়ে যান দক্ষিণ কোরিয়ার সীমানার দিকে। কিছু ক্ষণ সেখানে কাটিয়ে ব্যক্তিগত আলোচনার জন্য তাঁরা ঢুকে যান ওখানকারই ফ্রিডম হাউসে। যদিও পানমুনজমে এই সাক্ষাতে দীর্ঘ আলোচনা হওয়ার কথা ছিল না। তবু প্রায় ঘণ্টাখানেক ফ্রিডম হাউসে ছিলেন তাঁরা। ট্রাম্প পরে জানান, তিনি কিমকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানাবেন। কিম বলেছেন, ‘‘এর যথেষ্ট তাৎপর্য রয়েছে। এর অর্থ হল, আমরা অতীতের তিক্ততা ভুলে নতুন ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার দিকে এগিয়ে যেতে চাইছি। এটা অসম্ভব সাহসী এবং সুনিশ্চিত পদক্ষেপ।’’ সাংবাদিকদের উদ্দেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘‘অনেক উন্নতি হয়েছে। বন্ধুত্বের পথে অনেকটা এগোনো গিয়েছে।’’
আগামী কয়েক সপ্তাহে মধ্যস্থ ঠিক করে ওয়াশিংটন-পিয়ংইয়্যাং আলোচনা শুরু হয়ে যাবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প-কিম। মার্কিন দলের নেতৃত্ব দেবেন বিশেষ দূত, স্টিফেন বিগান। তবে উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে কে থাকবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিম এর আগে জানিয়েছিলেন, মাইক পম্পেয়োকে মধ্যস্থতা থেকে না সরালে আলোচনা এগোবে না। কূটনীতিকদের মতে, তাই হয়তো পম্পেয়োর জায়গায় বিগান এসেছেন, যা মার্কিন সদিচ্ছারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সমালোচকরা অবশ্য কিম-ট্রাম্পের আজকের সাক্ষাৎকে ছবিসুলভ মুহূর্ত ছাড়া কিছু বলতে নারাজ। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে উত্তর কোরিয়া সংক্রান্ত নীতির বিশেষ দূত জোসেফ ইয়ান বলছেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কী প্রমাণ করতে চাইছেন, এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। কারণ এ ধরনের আলোচনা চলতে থাকলেও উত্তর কোরিয়া তার পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডার মজুত করা কমায়নি। উল্টে আরও বাড়িয়েছে।’’
তবে ট্রাম্পের অভিযোগ, কিমের দেশের সঙ্গে উত্তাপ কমাতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উদ্যোগ সংবাদমাধ্যমে সে ভাবে স্বীকৃতি পাচ্ছে না। ট্রাম্পের মন্তব্য, ‘‘সিঙ্গাপুরে আমাদের প্রথম সাক্ষাতের আগে দ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। শান্ত হয়েছে। সেটা সে ভাবে লেখা হবে না। ওরা (সংবাদমাধ্যম) সেটা ভালই বোঝে। কিন্তু মুখে বলবে, কিছুই হয়নি। অথচ অনেকটাই করতে পেরেছি আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy