Advertisement
০৩ জানুয়ারি ২০২৫
H-1B Visa

এইচ-১বি ভিসা নিয়ে ‘নরম’ ট্রাম্প, তবু চিন্তা থাকছেই

এইচ-১বি ভিসার মাধ্যমে আমেরিকায় মূলত আসেন উচ্চমেধার কর্মীরা, যাঁরা প্রধানত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত।

ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৪৩
Share: Save:

৩০ ডিসেম্বর: ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বছর ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এইচ-১বি ভিসা নিয়ে অভিবাসী, বিশেষত ভারতীয় অভিবাসীদের মনে নানা চিন্তা দানা বেঁধেছিল। নির্বাচনী প্রচারেও ট্রাম্প এইচ-১বি ভিসার মাধ্যমে বিদেশ থেকে কর্মী আনার বিরুদ্ধে সমানে সুর চড়িয়েছিলেন। ২০২০ সালে, এর আগের বার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ট্রাম্পের নির্দেশে সাময়িক ভাবে এইচ-১বি ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল আমেরিকা। তাই এ বার তিনি ফের ভোটে জেতার পর থেকেই এই ভিসা আবেদনকারীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটা আশঙ্কার সৃষ্টি হয়।

সেই আশঙ্কাকে অনেকটাই দূরে সরিয়ে আমেরিকার অভিবাসী নীতি নিয়ে ধনকুবের ইলন মাস্কের বক্তব্যকে প্রাথমিক ভাবে সমর্থন করলেন ট্রাম্প। এই সপ্তাহান্তে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির অন্দরেই এইচ-১বি ভিসা প্রসঙ্গে উত্তপ্ত বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ট্রাম্পের বিশেষ উপদেষ্টা ইলন মাস্ক জানান যে, দক্ষ প্রযুক্তিবিদদের পাওয়ার জন্য এই ভিসার সংখ্যা বাড়ানো খুব প্রয়োজন। মাস্ক, যিনি জন্মগত ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকান, দাবি করেন, তাঁর মতো প্রযুক্তিবিদেরা এইচ-১বি ভিসা পেয়ে এ দেশে না এলে আমেরিকান তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি দক্ষ কর্মী পেত না। তাই তিনি এই ভিসার সংখ্যা বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করছেন। ট্রাম্পের আর এক উপদেষ্টা, ভারতীয় বংশোদ্ভুত বিবেক রামস্বামীও বলেন যে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উৎকর্ষে বাইরে থেকে দক্ষ কর্মী আনতেই হবে। এর পরেই ভাবী প্রেসিডেন্ট সমাজমাধ্যমে জানান, মেধাসম্পন্নরা যাতে আমেরিকায় আসতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে তিনি এই ব্যবস্থার পক্ষে। তাঁর কথায়, এইচ-১বি নাকি তাঁর ‘সব সময়ের পছন্দের’।

এইচ-১বি ভিসার মাধ্যমে আমেরিকায় মূলত আসেন উচ্চমেধার কর্মীরা, যাঁরা প্রধানত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত। এই ভিসায় আবেদনকারীদের শতকরা ৭৩ শতাংশ ভারতীয়, যা অন্য যে কোনও দেশের থেকে অনেক বেশি। অ্যামাজ়ন, গুগল, মেটার মতো তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি প্রতি বছর হাজার হাজার ভারতীয়ের ভিসা স্পনসর করে।

হোয়াইট হাউসে ফেরার এক সপ্তাহ আগে ট্রাম্প মুখে এ কথা বললেও, এখনই তাকে শেষ কথা হিসাবে ধরে নেওয়ার কোনও কারণ নেই বলেই মনে করছে সাউথ ব্লক। বরং নয়াদিল্লি সতর্কতার সঙ্গে ট্রাম্পের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে নজর রাখতে চাইছে। বিদেশ মন্ত্রক শিবিরের মতে, এখনই এ কথা বিস্মৃত হওয়ার কোনও কারণে নেই যে, আমেরিকার ভোটে জিততে ট্রাম্প প্রচারের অন্যতম মূল অস্ত্র ছিল অভিবাসনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ। সমস্ত বেআইনি অভিবাসীকে তিনি আমেরিকা থেকে বার করে দেওয়ার হুমকির পাশাপাশি আমেরিকার ভিসার সংখ্যা কমানোর কথাও বলেছিলেন। তাই ট্রাম্পের এই অবস্থান পরিবর্তন তাঁর কট্টর সমর্থকদের মধ্যে যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, যে ট্রাম্প সব সময়ে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বলে এসেছেন, তাঁর হঠাৎ এই অবস্থান পরিবর্তনের কারণ কী!

তবে অনেকেই বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় পর্যায়ে ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়াটিকে আরও কঠোর হতে পারে, যার ফলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং উচ্চ মেধাসম্পন্ন ও দক্ষ অভিবাসীদের জন্য কর্মসংস্থান সুরক্ষিত বা বজায় রাখা কঠিন করে তুলবে। আশঙ্কা তো শুধু এইচ-১বি ভিসা নিয়ে নয়। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পরে মনে হচ্ছে, এই ভিসাধারীদের ভবিষ্যৎ অপেক্ষাকৃত সুরক্ষিত। কিন্তু এইচ-১বি ভিসা ছাড়াও এইচ-৪ ভিসাধারী ব্যক্তিদের (এইচ-১বি কর্মীদের উপর নির্ভরশীল স্বামী বা স্ত্রীরা যে ভিসা পেয়ে থাকেন এবং গোড়ায় এই ভিসাতে কাজ করার অনুমতি না থাকলেও পরে তা পাওয়া যায়) চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। এ ছাড়া, আরও একটি ভিসা রয়েছে যার নাম এল-১ ভিসা। এই ভিসা কোনও রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট সংস্থা যখন তাদের আমেরিকার দফতরে কোনও কর্মীকে পাঠায়, তখন দেওয়া হয়। এই এল-১ ভিসাধারীর উপর নির্ভরশীল তাঁর স্ত্রী বা স্বামীও সে দেশে গিয়ে পান এল-২ ভিসা, যাতে সে দেশে কাজের
অনুমতি পাওয়া যায়।

এইচ-১বি ভিসায় হয়তো বিশেষ হাত দেওয়া হবে না কারণ সেটি বিশেষ মেধাসম্পন্নদের দেওয়া হয়। কিন্তু এইচ-৪ এবং এল-২ ভিসাধারীরা আমেরিকার কর্মিবাহিনীর একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছেন। কারণ এল-১ এইচ-১বি ভিসাধারীদের তুলনায় এঁদের কম বেতনে (যে-হেতু তাঁরা এসেছেন প্রাথমিক ভাবে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে) কাজ করিয়ে নিয়ে থাকে আমেরিকার সংস্থাগুলি। ফলে কোনও ভাবে এঁদের আসা বন্ধ হয়ে গেলে শুধুমাত্র আমেরিকার সংস্থাগুলিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাই-ই নয়, ধাক্কা খাবে সে দেশের আবাসন শিল্পও। কারণ স্বামী-স্ত্রী দু’জনে কাজ করে প্রথমেই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে সেখানে একটি বাড়ি কিনে ফেলেন। ভিসা বাতিল হলে তাঁরা বাড়ি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হবেন।

যে ভিন্‌দেশি কর্মীরা আমেরিকার অর্থনীতিকে লাভবানই করছেন, তাঁদের ভিসা অস্বীকার বা বাতিল করে দেওয়াটা যুক্তিযুক্ত নয়। কিন্তু ট্রাম্প অনেক সময়েই অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ করে থাকেন যার কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই আজ তিনি মুখে যা-ই বলুন, উদ্বেগ রয়েই যাচ্ছে।

সহ-প্রতিবেদন: নয়াদিল্লি থেকে প্রেমাংশু চৌধুরী ও অগ্নি রায়

অন্য বিষয়গুলি:

Donald Trump
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy