ফাইল চিত্র।
মাদক ও নারী পাচারের মতো অপরাধে বারে বারেই বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একাংশ জড়িয়ে পড়ছে। ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ধর্মীয় মৌলবাদের বীজ বোনা হলে তা শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত-সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির জন্যও চিন্তার কারণ হয়ে উঠবে। এই পরিপ্রেক্ষিত থেকেই আগামী সেপ্টেম্বরে ভারত সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ তুলবেন।
বাংলাদেশের বিদেশসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “আমাদের কাছে রোহিঙ্গা সমস্যার এক মাত্র সমাধান হল তাদের মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশেফেরত পাঠানো। আমি নিশ্চিত, প্রধানমন্ত্রী হাসিনা যখন দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে দেখা করবেন, তখন তাঁদের ফেরানোর বিষয়ে ভারত কী ভাবে সাহায্য করতে পারে, সেই বিষয়টি তুলবেন।”
২০১৭-য় মায়ানমারে অত্যাচার, নিপীড়ন সহ্য করতে না পেরে, সমস্ত নাগরিক অধিকার হাতছাড়া হতে দেখে প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। শেখ হাসিনা সরকার তাঁদের আশ্রয় দিয়েছে। তাঁদের জন্য কক্সবাজারের কুতুপালনে খোলা হয়েছে শরণার্থী শিবির। কিন্তু গত পাঁচ বছরে তাঁদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে মায়ানমারের সরকার সদিচ্ছা দেখায়নি। মোমেন বলেন, “এই ১০ লক্ষ শরণার্থীর প্রায় ৬০ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের কম। এরা কট্টর পন্থায় জড়িয়ে পড়তে পারে বলে ভয় রয়েছে। মাদক, মানুষ পাচারের ঘটনা তো ঘটছেই। কক্সবাজার থেকে সমুদ্রপথে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, তাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার লোভ দেখানো হচ্ছে। তার পরে তাদের আন্দামানের কাছে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।”
রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যে নিরাপত্তার পক্ষে ঝুঁকির কারণ, তা ভারত সরকারও মানছে। বস্তুত ২০১৭ সালে মোদী সরকার নিজেই সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে বলেছিল, ভারতে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলির যোগ রয়েছে। সে সময় ভারতে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ছিল ৪০ হাজারের কিছু বেশি। মোদী সরকার জানিয়েছিল, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ভারতীয় নাগরিকদের ওপর মৌলবাদী রোহিঙ্গাদের হামলার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরানোর বিষয়ে ভারত মায়ানমারের উপরে চাপ তৈরির পক্ষে হাঁটেনি। মায়ানমারে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা জুন্টা সরকারের সঙ্গে ভারসাম্য রেখেই এগোতে চেয়েছে নয়াদিল্লি। বাংলাদেশও ভারতের অবস্থান বুঝতে পারছে। বিদেশসচিব মোমেন বলেন, “প্রাথমিক পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়ে বাংলাদেশ-মায়ানমারনিজেদের মধ্যেই কথা বলবে।”
তা হলে ভারতের থেকে কী প্রত্যাশা করছে হাসিনা সরকার? বিদেশসচিব মোমেন বলেন, “রোহিঙ্গারা যখন ফিরে যাবেন, তখন যাতে তাঁদের বাসস্থান, জীবিকা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মাপকাঠিতে মায়ানমারে থাকার মতো উপযুক্ত পরিবেশ থাকে, তার জন্য কিছু সাহায্য দরকার হবে। এ বিষয়ে ভারত সাহায্য করতে পারে। অবশ্যই যদি মায়ানমার রাজি থাকে। ভারত একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। ফলে ভারত সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারে।”
কিন্তু মায়ানমার কি আদৌ রোহিঙ্গাদের ফেরাতে রাজি? ঢাকার ‘সেন্ট্রাল ফাউন্ডেশন ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ’-এর চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত কমোডোর এম এন আবসার বলেন, “মায়ানমার টালবাহানা করে দেরি করছে। বাংলাদেশ থেকে ৮০ হাজার রোহিঙ্গার নাম মায়ানমারকে দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে মায়ানমার মাত্র কয়েক হাজারকে চিহ্নিত করে ফেরাতে রাজি হয়েছে। কিন্তু একটি পরিবারের স্বামীকে ফেরাতে রাজি হলে স্ত্রী-র বিষয়ে রাজি হয়নি। ছেলেকে ফেরাতে রাজি হলেও বাবাকে ফেরাতে রাজি হয়নি। আন্তর্জাতিক মহলের সামনে মায়ানমার দেখাতে চাইছে ওরা সচেষ্ট। আসলে দেরি করার কৌশলই নিচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy