ছবি রয়টার্স।
করোনার ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে তৃতীয় দফার হিউম্যান ট্রায়ালে পৌঁছে গেল ষষ্ঠ প্রতিযোগী। নতুন সম্ভাব্য প্রতিষেধকটিও রাশিয়ার। অর্থাৎ প্রথম ছয়ে রয়েছে তাদের দুই প্রতিযোগী। ‘গাম-কোভিড-ভ্যাক-লিও’ নামে ভ্যাকসিনটি তৈরিতে সরাসরি যুক্ত রয়েছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সরকারের অন্দরমহলে জোর গুঞ্জন, নয়া প্রতিষেধকটি ১০০ শতাংশ সফল। যদিও বিতর্ক থামছে না। একাংশের বিস্ময়, জুলাইয়ে প্রথম ট্রায়াল, আর অগস্টেই তৈরি হয়ে গেল ভ্যাকসিন!
কিছু দিন আগেই মস্কো দাবি করে, তাদের দেশে তৈরি একটি ভ্যাকসিন মানবদেহের অন্তিম পরীক্ষাতে সফল হয়েছে। তারা বলেছিল, ‘‘সবার আগে ভ্যাকসিন আনব আমরাই।’’ এই প্রতিষেধকটি তৈরি করছে, ‘ভেক্টর স্টেট রিসার্চ সেন্টার অব ভাইরোলজি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি’। আজ যে প্রতিষেধকটি হইচই ফেলে দিয়েছে, সেটি রাশিয়ার দ্বিতীয় ‘ক্যানডিডেট’। এটি তৈরি হচ্ছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও ‘গামালিয়া সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিয়োলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি’-র যৌথ উদ্যোগে। রুশ সংবাদ সংস্থার রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ‘গাম-কোভিড-ভ্যাক-লিও’-র হিউম্যান ট্রায়াল শেষ হয়ে গিয়েছে। ভ্যাকসিনটির নাম রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু হবে ১০ বা ১২ অগস্ট থেকে। রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে তার তিন থেকে সাত দিনের মাথায় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে ভ্যাকসিন। রুশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল মুরাশকো বলেন, ‘‘গামালিয়ার ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। এ বার শুধু নিয়মমাফিক লেখাপড়ার কাজ বাকি।’’ রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড-এর প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ জানান, ভ্যাকসিনটির প্রথম ডোজ় শরীরে ইনজেক্ট করার ২১ দিনের মাথায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে।
নিজেদের ভ্যাকসিন নিয়ে রাশিয়া আশাবাদী হলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বহু দেশ। আমেরিকা জানিয়েছে, চিন ও রাশিয়া ভ্যাকসিন তৈরি করলে, তারা তা ব্যবহার করবে না। আজ ব্রিটেনও বলেছে রাশিয়ার ভ্যাকসিন তারা নেবে না। তাদের এই মন্তব্যের কারণ একটাই— এত তাড়াহুড়ো করে ভ্যাকসিন তৈরি করা হলে তাতে ঝুঁকি থেকে যায়। গত ১৩ জুলাই রাশিয়ার ভ্যাকসিনটির প্রথম ধাপের হিউম্যান ট্রায়ালের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। এতেই প্রশ্ন উঠছে, এর মধ্যে কী ভাবে বাকি দু’টি ধাপের ট্রায়াল শেষ হতে পারে!
আরও পড়ুন: ভারতে মোট করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ২০ লক্ষ পেরোল
হু-র মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমেয়ার সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘কোনও বিজ্ঞানী দাবি করতেই পারেন, তিনি কোনও পথ খুঁজে পেয়েছেন। অবশ্যই সুখবর। কিন্তু কোনও কিছুর সন্ধান পাওয়া আর পুরো পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পন্ন করায় আকাশ-পাতাল তফাত।’’
গোটা পৃথিবীতে সংক্রমিতের সংখ্যা ১ কোটি ৯০ লক্ষ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা গত কালই পার করেছে ৭ লক্ষ। এর মধ্যে ১ লাখ ৬১ হাজার মারা গিয়েছেন শুধু আমেরিকায়। ব্রাজিলেও মৃতের সংখ্যা ১ লক্ষ ছুঁতে চলল। মৃতের সংখ্যার নিরিখে তৃতীয় স্থানে থাকা মেক্সিকোয় প্রাণ হারিয়েছেন ৫০ হাজারের কাছাকাছি। এই ভয়াবহ মৃত্যু-খতিয়ান সত্ত্বেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের মতো করে ‘দাওয়াই’ দিয়ে যাচ্ছেন। গত কাল একটি ভিডিয়ো পোস্টে ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, ‘‘বাচ্চারা প্রায় ইমিউন।’’ অর্থাৎ ছোটদের শরীরে কোভিড প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। ফেসবুক সেই ভিডিয়ো মুছে দিয়ে জানিয়েছে, ‘‘কোভিড সম্পর্কিত ভুল তথ্য, এ সব ভীষণ ক্ষতিকর।’’
আরও পড়ুন: সাত মাসেও ভাইরাসের প্রকৃত চরিত্র অজানাই?
সংক্রমণ বা মৃত্যু তালিকায় অনেকটাই পিছিয়ে আফগানিস্তান। কিন্তু সে দেশের সরকারই বলছে, বাস্তব পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। আফগান স্বাস্থ্য মন্ত্রক গত কাল আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, দেশের এক-তৃতীয়াংশ বাসিন্দাই করোনা-আক্রান্ত!
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি একটি সমীক্ষা করেছিল তারা। তাতেই উঠে এসেছে আনুমানিক হিসেব— দেশের মোট জনসংখ্যা ৩ কোটি ২০ লক্ষের মধ্যে ৩১.৫ শতাংশ ভাইরাস-আক্রান্ত। অর্থাৎ অন্তত ১ কোটি বাসিন্দা সংক্রমিত হয়েছেন ইতিমধ্যেই। সব চেয়ে খারাপ দশা রাজধানী কাবুলের। সংক্রমণ হার সব চেয়ে বেশি সেখানে। ৫০ লক্ষ মানুষ বাস করেন কাবুলে। অর্ধেকেরও বেশি করোনা-সংক্রমিত।
কাবুলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আহমেদ জাওয়াদ ওসমানি জানান, সমীক্ষাটি হয়েছিল ৯৫০০ জনকে নিয়ে। তাঁদের প্রত্যেকের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়। তাতেই আনুমানিক হিসেবটি উঠে এসেছে। আফগান সরকার নিজেই জানিয়েছে, ৩ কোটির দেশে দরকারের থেকে খুবই কম করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। কারণ, দেশের দুর্বল স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ও চিকিৎসা পরিষেবা। এ পর্যন্ত ৩৬ হাজার সংক্রমণের খবর মিলেছে। ১২০০ লোক মারা গিয়েছেন। সরকার নিজেই জানাচ্ছে, পরীক্ষা ঠিকমতো হলে, সংক্রমিতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy