ব্রিটেনে টিকাকরণ। ছবি—রয়টার্স।
রবিবার রাতের দিকে আমার ফোনে মেসেজটা ঢুকল। এই সেই মেসেজ, যার জন্য অধিকাংশ ব্রিটেনবাসী অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে! করোনা প্রতিষেধক নেওয়ার জন্য ডাক পেয়েছি আমি। পরের দিনেই তা দেওয়া হবে। আমার পছন্দমতো সময় বেছে নিতে বলা হয়েছে ওই মেসেজে।
মেসেজটা পেয়ে একটু অবাকই হয়েছিলাম। যতদূর জানি, এই সপ্তাহে ৬৫ থেকে ৭০ বছর বয়সিদের টিকা দেওয়ার কথা। ৫৫ থেকে ৫৯ বছরের বয়স-সারণিতে আমি পড়ি। আমাদের অষ্টম ধাপে টিকা দেওয়ার কথা ছিল। ফলে মার্চের শেষ বা এপ্রিলের আগে টিকা পাওয়ার সম্ভাবনাই দেখিনি। তার মানে, যা ভেবেছিলাম তার থেকেও দ্রুতগতিতে টিকাকরণ চলছে।
ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য আমায় ডাকা হয়েছিল উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের স্বামীনারায়ণ স্কুলে। আমার বাড়ি থেকে জায়গাটির দূরত্ব মাইল চারেক। আজকাল দেখছি, এশীয় বংশোদ্ভূতদের জন্য কোনও মন্দির বা মসজিদে টিকাগ্রহণ কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। এই স্কুলটা লন্ডনের বিখ্যাত স্বামীনারায়ণ মন্দিরের পাশেই তৈরি। আমি মিনিট পনেরো আগেই পৌঁছে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, টিকা নিতে লম্বা লাইন পড়বে। পৌঁছে ভুল ভাঙল। আমার আগে মাত্র দু’জন লাইনে।
আজ দিনের শুরুটা বড় মেঘলা। বৃষ্টিভেজা একটা দিন। উদ্বেগ আর উত্তেজনাকে সঙ্গী করে টিকা নিতে পৌঁছলাম। স্কুলে ঢোকার শুরু থেকে শুরু হল নানা প্রশ্নোত্তর আর সতর্কতামূলক পরীক্ষার পালা। এক জন স্বেচ্ছাসেবী আমায় জিজ্ঞাসা করলেন, গত বছর আমি কোভিড-আক্রান্ত হয়েছিলাম কিনা, গত দু’সপ্তাহে করোনা পরীক্ষা হয়েছে কিনা বা ওই সময়ে কোনও করোনা রোগীর সংস্পর্শে এসেছি কিনা— এই সব। সব শেষে জানতে চাওয়া হল, এই মুহূর্তে আমার কেমন লাগছে। শরীরে জ্বরজ্বর ভাব আছে কিনা। প্রশ্নোত্তরের পর্ব চুকিয়ে ওঁদের দেখানো পথে স্কুলের দিকে এগিয়ে গেলাম।
স্কুলে ঢুকেই রিসেপশন এলাকা। সেখানে দু’মিটার দূরত্বে দাঁড়ানোর জায়গা করা রয়েছে। ওখানে অপেক্ষা করতে বলা হল। দেখলাম, এক ঝাঁক কমবয়েসি স্বেচ্ছাসেবী মেয়ে ছোটাছুটি করছে। ডেস্কে আমাদের নাম মিলিয়ে হাতে একটা করে ফর্ম দেওয়া হল। যে ওগুলো ভর্তি করতে হবে না, শুধু হাতে রাখলেই চলবে। লাইনে দাঁড়িয়ে টুকটাক কথা বলছিলাম ওঁদের সঙ্গে। এক জন জানালেন, আজ সকাল থেকে বেশ ভিড় ছিল। সেই ন’টা থেকে ইঞ্জেকশন নিতে লাইন পড়েছে। আমাদের প্রত্যেককে এ বার জ্যাকেট খুলে রাখতে বলা হল। কনভেয়র বেল্টের সামনে এক এক করে ল্যাপটপ, জ্যাকেট, জুতো খুলে রাখতে বলা হচ্ছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আমার ডাক পড়ল। একটা ক্লাসঘরে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। সে ডেস্কে এক জন নার্স বসে ইঞ্জেকশন তৈরি করছেন। আমাকে বসতে বলা হল। উনি জানতে চাইলেন, আমার অ্যালার্জি আছে কিনা। কোনও ওষুধ খাই কিনা। কী ধরনের ওষুধ সেগুলো বা রক্ত তরল রাখার কোনও ওষুধ নিই কিনা। এক এক করে ওঁদের সব প্রশ্নের জবাব দিলাম। শুধু জানতে চাইলাম, আমায় কোন টিকা দেওয়া হচ্ছে।
ব্রিটেনে এখন ফাইজ়ার আর অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার ভ্যাকসিন দেওয়া চলছে। অক্সফোর্ডের টিকা সংরক্ষণ-সরবরাহ সহজ। ফাইজ়ারের টিকার মতো বিশেষ ফ্রিজারে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তা রাখতে হয় না। ওই স্বেচ্ছাসেবী জানালেন, ব্রিটেনে তৈরি অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনই দেওয়া হচ্ছে। টিকা দেওয়ার পরে আমার হাতে একটা সার্টিফিকেট দেওয়া হল। তাতে লেখা রয়েছে, টিকা নেওয়ার প্রথম দিন, টিকার নাম আর ব্যাচ নম্বর। প্রতিষেধকের পরের ডোজ় দেওয়া হবে ১২ সপ্তাহ পরে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে কুড়ি মিনিটও সময় লাগেনি। ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরে মিনিট পনেরো বিশ্রাম নিতে বললেন ওঁরা। এ বার বাড়ি ফেরার পালা। তত ক্ষণে ঝলমলে মিঠে রোদে ভেসে যাচ্ছে চারদিক। মনটা আনন্দে ভরে উঠল। করোনাযুদ্ধে আজ আরও এক পা এগিয়ে গেলাম যে। প্রতিদিনের মতো সন্ধেয় সরকারি ভাবে ব্রিটেনে মোট টিকাগ্রাহকের সংখ্যা ঘোষণা করা হল। সংখ্যাটা আজ ১,৫৩,০০,১৫১ হয়েছে। আমি আজ ওই তালিকার এক জন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy