বিধিনিষেধ মানব না। গাঁধীর ছবি হাতে করোনা-নিয়মনীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জার্মানির বার্লিনে। রবিবার। ছবি: রয়টার্স।
আগের মতো ঘর-বন্দি থাকতে হচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু পুরনো দিনের মতো ‘স্বাধীনতা-ই’ বা কই! ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এখন বাসিন্দাদের উপর ঝোলানো হয়েছে টিকাকরণ কার্ডের খাঁড়া। কাফেতে চা-কফি খাওয়া, রেস্তরাঁয় নৈশভোজ, কিংবা স্টেডিয়ামে খেলা দেখা, একমাত্র ভ্যাকসিনেশন কার্ড থাকলেই এ ধরনের কাজকর্মে অনুমতি মিলবে। এই নয়া নিয়মের গেরো থেকে মুক্তির দাবিতে সপ্তাহ শেষে ইটালি ও ফ্রান্সের রাস্তায় নামলেন হাজার হাজার মানুষ। করোনা-বিধি প্রত্যাহারের দাবিতে আজ বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে জার্মানির বার্লিনেও। সেখানকার বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী ও মার্টিন লুথার কিং-এর মতো শান্তিদূতদের পোস্টার। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয়।
ইটালি ও ফ্রান্স, দুই দেশের নেতারাই টিকাকরণ কার্ড চালু করতে বদ্ধপরিকর। ইটালিতে নাম দেওয়া হয়েছে ‘গ্রিন পাস’। আর ফ্রান্সে নাম ‘হেল্থ পাস’। টিকাকরণের উপরে জোর দিতেই সরকারের এই ব্যবস্থা। এখনও বাসিন্দাদের একাংশ কোভিডের টিকাকরণের বিরোধী। টিকা নেওয়ার উপরে জোর দেওয়াকে তাঁরা মানবাধিকারে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। কেউ কেউ আবার টিকা কতটা নিরাপদ, সে নিয়ে চিন্তিত। এই টিকা-বিরোধিতাকে তাই অনেকে রসিকতা করে বলছেন, ‘‘মৃত্যুর আবেদন।’’ ভ্যাকসিনেশন নয়, স্বাধীনতা চাই— এই দাবিতে গত সপ্তাহের শেষে অন্তত ৮০ হাজার মানুষ ইটালির বিভিন্ন শহরের রাস্তায় নেমেছিলেন। পরপর তিনটে শনি-রবি বিক্ষোভ মিছিলের সাক্ষী হয়েছে প্যারিস।
ইউরোপের কোনও দেশেই টিকাকরণ বাধ্যতামূলক নয়। সে ভাবে প্রচারও করা হচ্ছে না বেশির ভাগ দেশে। কিন্তু একাধিক দেশে ‘ভ্যাকসিন পাস’-এর নিয়ম জারি করা হয়েছে। যেমন ডেনমার্কে পাস চালু হয়ে গিয়েছে। বেলজিয়ামে নিয়ম হয়েছে, কোনও আউটডোর ইভেন্টে দেড় হাজারের বেশি লোক হলে ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট লাগবে। অগস্টের মাঝামাঝি এই নিয়ম চালু হবে। বদ্ধ জায়গায় অনুষ্ঠানের এখনও অনুমতি নেই এ দেশে। সেপ্টেম্বর থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে। তাতেও লাগবে টিকার সার্টিফিকেট। স্পেনে লোকজন নিজেদের উৎসাহেই টিকা নিচ্ছে। প্রতিষেধক-অনীহা নেই।
বিশ্বে করোনা
মৃত - ৪২,৩৮,৫০৩
আক্রান্ত - ১৯,৮৮,৭৯,১৪২
সুস্থ - ১৭,৯৫,২১,৪৫০
ইটালির ভেরোনায় এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য তৈরি করা হচ্ছে এ ভাবে। এক দল লোককে ফার্স্ট-ক্লাস নাগরিকের তকমা দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা সরকারি পরিষেবা পাবেন, থিয়েটারে যেতে পারবেন, কাফে-রেস্তরাঁয় ঢুকতে পারবেন। আর এক দল দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। তাঁরা এ সব পারবেন না। এ সব তো নাৎসি শাসন!’’ নাৎসি অত্যাচারের কথা মনে করিয়ে বিক্ষোভকারীদের অনেকে জামায় ‘স্টার অব ডেভিড’ পরে (ইহুদিদের চিহ্নিত করতে তাঁদের জামায় ‘স্টার’ থাকত) মিছিল করেন। এ হেন তুলনায় নাৎসি অত্যাচার থেকে বেঁচে ফেরা ইহুদিরা ভীষণই অসন্তুষ্ট।
প্যারিসের রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি বেধে যায় বিক্ষোভকারীদের। কয়েক জন পুলিশ জখম হয়েছেন। ১৯ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন ফরাসি শিক্ষিকা অ্যান। তিনি বলেন, ‘‘এর আগে কোনও দিনও রাস্তায় নামিনি। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে উপায় নেই। বিপদের মুখে আমাদের স্বাধীনতা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy