প্রতীকী চিত্র।
পোষ্য কুকুর, বিড়ালের শরীরেও হদিশ মিলল সার্স কভ-২ ভাইরাসের। এই প্রথম। দেখা গেল, যে সময় করোনা সংক্রমণ তুঙ্গে পৌঁছেছিল ব্রিটেনে সেই সময় পোষ্য কুকুর, বিড়ালদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও বেড়ে গিয়েছিল অস্বাভাবিক ভাবে। তবে পোষ্যদের শরীর থেকে মানুষে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় এখনই গুরুত্ব দিতে চাইছেন না গবেষকরা।
‘ফ্রেঞ্চ ন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর পশু সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ এরিক লেরয় সম্প্রতি এ ব্যাপারে একটি তথ্য পেশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পোষ্য কুকুর-বিড়ালের মধ্যে মায়োকার্ডাইটিস নামে এক বিশেষ ধরনের হৃদরোগ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। ১.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১২.৮ শতাংশ।
লন্ডনের একটি পশু হাসপাতালও জানাচ্ছে, যে সব পোষ্যের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল, তারাও আক্রান্ত হয় মায়াকার্ডাইটিসে। পশুদের এই রোগে হার্টের টিস্যু বা পেশিতন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা গুরুতর হলে মৃত্যুও হতে পারে পোষ্যের।
উদ্বেগ বাড়িয়েছে যে বিষয়টি তা হল, পোষ্যদের শরীর থেকে সংক্রমণ আরও দ্রুত বেগে ছড়ানোর আশঙ্কা। বিশেষ করে ভারতের মতো দেশে, যেখানে দু’পা অন্তর পথে ঘাটে কুকুর-বিড়ালের দেখা মেলে এবং যত্রতত্র তারা ঘুরে বেড়ায়, সেখানে এদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে তা কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, তার পরিণামই বা কী হতে পারে ভেবেই শিউরে উঠছেন প্রাণীবিদরা।
তবে করোনা সংক্রমণের জন্যই এই রোগ হচ্ছে তার প্রমাণ এখনও হাতে আসেনি গবেষকদের। যদিও পোষ্যদের থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর ব্যাপারে যে তথ্য হাতে এসেছে গবেষকদের, তাতে দেখা গিয়েছে, যাঁদের পোষ্য, তাঁরাই আগে সংক্রমিত হয়েছেন। পোষ্যদের শরীরে সংক্রমণ হয়েছে অনেক পরে। লন্ডনের পশু হাসপাতালে করোনা পজিটিভ হওয়া ৫ পোষ্যের মনিব অনেক আগেই করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন।
সম্প্রতি টেক্সাসেও একই বাড়ি থেকে করোনা আক্রান্ত একটি কুকুর এবং বিড়ালের খোঁজ পাওয়া যায়। সেখানেও জানা যায়, বাড়ির মালিক করোনা আক্রান্ত হওয়ার অনেক পরে তাঁর পোষ্যদের শরীরে করোনা উপসর্গ দেখা যায়। তাই পোষ্যদের থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়াতে পারে এই আশঙ্কাকে এখনই গুরুত্ব দিতে চাইছেন না গবেষকরা।
পোষ্যদের করোনা সংক্রমণের এই রিপোর্ট অবশ্য এখনও পর্যন্ত শুধু ব্রিটেনেই পাওয়া গিয়েছে। গত এক মাসে লন্ডনের পশু হাসপাতাল র্যাল্ফ ভেটারেনারি রেফারেল সেন্টারে যে সমস্ত পোষ্যকে চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছিল, তাদের মধ্যে একই উপসর্গে ভোগা ১১টি পোষ্যের করোনা পরীক্ষা করা হয়। ৮টি কুকুর। ৩টি বিড়াল। প্রত্যেকেরই হৃদযন্ত্রের সমস্যা হচ্ছিল। এ ছাড়া ঝিমুনিভাব, খিদে না হওয়া, ঘনঘন শ্বাস নেওয়া এমনকি হঠাৎ জ্ঞান হারানোর মতো সমস্যাও দেখা যাচ্ছিল। কোনও পোষ্যেরই হৃদযন্ত্রের পুরনো সমস্যা নেই জানার পর হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগ তাদের করোনা পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরীক্ষায় তিন পোষ্যের শরীরে করোনা ভাইরাসের ব্রিটেন প্রকারভেদ (বি.১.১.৭)-এর অস্তিত্ব মেলে। অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় দেখা যায় আরও দুই পোষ্য আগেই আক্রান্ত হয়েছিল করোনায়। তবে এর পরেও পোষ্যদের থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়াতে পারে এমন ভাবনায় গুরুত্ব দিচ্ছেন না ভাইরোলজিস্টরা।
এখনও পর্যন্ত একটি পোষ্য বিড়াল ছাড়া এই রোগে মৃত্যু হয়নি কোনও পোষ্যের। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিড়ালটির সুস্থ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা না থাকায় তাকে রোগ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে ওষুধে মৃ্ত্যুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুচিকিৎসা বিভাগের মাইক্রোবায়োলজিস্ট শেলি রাঙ্কিন বলেছেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের ব্রিটেনের প্রকারভেদ বি.১.১.৭-এর খোঁজই পাওয়া গিয়ছে ব্রিটেনের পোষ্যদের শরীরে। তার জন্য তারা হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে কি না তা এখনও গবেষণাধীন। তবে তথ্য বলছে, যদি আমার পোষ্যের এই রোগ হয়ে থাকে তবে বুঝতে হবে সে আমার থেকেই ওই রোগে সংক্রমিত হয়েছে। আর সংক্রমণ ছড়ানোর কথা যদি হয়, তবে আমার পোষ্যের থেকে আমি ওই রোগ ছড়াতে বেশি পারঙ্গম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy