চিনা ভাইরোলজিস্ট লি-মেং ইয়ান।—ছবি সংগৃহীত।
উহানে চিনের সরকারি ল্যাবেই তৈরি নোভেল করোনাভাইরাস! এবং এই সংক্রান্ত সব তথ্যপ্রমাণ তাঁর কাছেই আছে বলে বোমা ফাটালেন চিনা ভাইরোলজিস্ট লি-মেং ইয়ান। এক সময় হংকংয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথে সংক্রামক রোগ নিয়ে গবেষণারত এই তরুণী বিজ্ঞানীর দাবি, প্রাণের ভয়ে সম্প্রতিই তিনি পালিয়ে আমেরিকায় আশ্রয় নিয়েছেন। গত শুক্রবার গোপন কোনও জায়গা থেকে একটি ব্রিটিশ টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইয়ান দাবি করেন, ভয়ঙ্কর সংক্রামক এই ভাইরাস নিয়ে তিনি অনেক আগেই চিনের সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনকে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। উল্টে বিশ্বের কাছে বিষয়টা চেপে রাখে বেজিং। বাইরে এ নিয়ে মুখ খুললে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় তাঁকে।
বেজিংয়ের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নতুন নয়। হালে কিছুটা সুর নামালেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটা সময় পর্যন্ত করোনা ছড়ানোর জন্য লাগাতার দুষে গিয়েছেন চিনকে। কখনও বলেছেন, ‘উহান ভাইরাস’, তো কখনও ‘কুং ফ্লু’। এমনকি মে-র গোড়ায় ট্রাম্প এ-ও দাবি করেন যে, উহানের ল্যাবেই যে করোনাভাইরাসের জন্ম সেই প্রমাণ তিনি নিজে চাক্ষুষ করেছেন। মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়োও একই দাবি করেছিলেন। কোভিড-১৯ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বা অন্য কোনও দেশকে বেজিং যথাসময়ে সতর্ক করেনি বলেও অভিযোগ ওঠে। যদিও পরে মার্কিন গোয়েন্দারা তাঁদের রিপোর্টে বলেন, বেজিংকে করোনা-সংক্রান্ত তথ্য দেওয়ার গাফিলতি ছিল স্থানীয় উহান প্রশাসনের।
যত দোষ তা-হলে উহানের? চিনা বিজ্ঞানী ইয়ান কিন্তু বলছেন, সরকার নিয়ন্ত্রিত ল্যাবের এই ‘করোনা-কাণ্ডে’ সরাসরি হাত রয়েছে চিনা সেনার। করোনা ছড়ানোর পিছনে উহানের এক পশুবাজারের কথা বরাবর বলে এসেছে চিন। ইয়ানের যদিও দাবি, ‘‘এই ভাইরাস কোনও ভাবেই প্রাকৃতিক নয়। আমি গবেষণা করে যা বুঝেছি, তাতে হয়তো বাদুড় বা ওই জাতীয় কোনও প্রাণীর থেকে ভাইরাল স্ট্রেন নিয়ে তাকে রাসায়নিক ভাবে আরও শক্তিশালী করে তোলা হয়েছে। যাতে তা মানবশরীরে ঢুকে মুহূর্তে বিভাজিত হয়ে অসংখ্য প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে।’’ তাঁর আরও দাবি, গোড়ায় ‘ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ভাইরাসবাহিত রোগ’ বলে কোভিড-১৯ চাপার চেষ্টা করেছিল চিন।
আরও পড়ুন: যোগী-রাজ্যের মতোই কি বঙ্গে নয়া ‘রক্ষাকবচ’
জুলাই থেকেই নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে ইয়ানকে বলতে শোনা গিয়েছিল, কী ভাবে চিন তাঁর পিছনে গুন্ডা লেলিয়ে দিয়েছে। কী ভাবে তাঁকে খুনের হুমকি এমনকি মেরে ফেলার চেষ্টাও করে হচ্ছে। ইয়ানের দাবি, তাঁর কম্পিউটার হ্যাক করে গবেষণা তথ্য মুছে ফেলার চেষ্টাও হয়েছে বহু বার। ব্রিটিশ চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইয়ান জানান, উহান শহরে ‘নতুন নিউমোনিয়া’ এবং এক ‘অজানা ভাইরাসের’ সংক্রমণের খবর পেয়ে গত ডিসেম্বর থেকে গবেষণা শুরু করেন। আক্রান্তের নমুনা পরীক্ষা করে তিনি বুঝতে পারেন, এই ভাইরাস কিছুটা সার্স বা সাধারণ করোনাভাইরাসের মতো হলেও, অনেক বেশি সংক্রামক এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল। প্রথমে তিনি এই রিপোর্ট দেন তাঁর ঊর্ধ্বতন আধিকারিক তথা হু-র এক পরামর্শদাতাকে। গোড়াতেই মুখ খুলতে বারণ করা হয় ইয়ানকে। সরকারি ভাবে একই ‘উপদেশ’ দেয় বেজিংও। তার পর লাগাতার হুমকি-ফোন। বাধ্য হয়েই আমেরিকা পালিয়ে আসেন ইয়ান।
আরও পড়ুন: করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার আশঙ্কায় বার্তা পুজো কমিটিদের
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy